খুলনা | বুধবার | ১৮ জুন ২০২৫ | ৪ আষাঢ় ১৪৩২

দাবি আদায়ে ৪৮ ঘন্টার আল্টিমেটাম

সুন্দরবনের পর্যটক স্পট করমজল উন্মুক্ত রাখার দাবিতে মানববন্ধন, স্মারকলিপি প্রদান

মোংলা প্রতিনিধি |
১১:৩৬ পি.এম | ১৫ জুন ২০২৫


দেশ-বিদেশী পর্যটকদের ডে-ভিজিটর সেন্টার সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণি প্রজনন কেন্দ্র ও পর্যটক স্পটকে বন বিভাগের তিন মাসের নিষেধাজ্ঞার আওতার বাইরে রেখে পর্যটক প্রবেশে অনুমতির দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে নৌযান শ্রমিক-কর্মচারীরা। রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মোংলার ফেরিঘাট এলকায় নদীর পাড়ে সুন্দরবন ট্যুর অপারেটর, মোংলা বন্দর ডেনিস বডি মালিক সমবায় সমিতি, মোংলা বন্দর যন্ত্রচালিত মাঝি-মাল­া সংঘ ও মোংলা বন্দর স্টিল লঞ্চ মালিক সমবায় সমিতির আয়োজনে এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। আগামী ৪৮ ঘন্টার মধ্যে এ ব্যাপারে বন বিভাগের পক্ষ থেকে কোন সু-ব্যবস্থা না করলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারী দেন আয়োজকরা। 
মানববন্ধন কর্মসূচির সভাপতিত্ব করেন মোংলা মাঝি-মাল­া ইউনিয়নের নেতা মোঃ দেলোয়ার হোসেন। এসময় বক্তব্য রাখেন, মোংলা নাগরিক সমাজের সভাপতি মোঃ নূর আলম শেখ, পর্যটন ব্যবসায়ী মোঃ আনিসুর রহমান, সুন্দরবন ট্যুর অপারেটরের মালিক মোঃ তানজির হোসেন রুবেল, এনামুল হুদা বুলবুল, শামস রুবেল, পর্যটন ব্যবসায়ী সাবেক কাউন্সিলর এম এ কাদের, মাঝি-মাল­া ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মোঃ সোহাগ, মোঃ মাসুদ রানা, মোঃ এমদাদুল হাওলাদার, মোঃ মিজানুর রহমান প্রমুখ। 
পরিবেশ যোদ্ধা ও মোংলা নাগরিক সমাজের সভাপতি মোঃ নূর আলম শেখ বলেন বন বিভাগ প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও ১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত টানা তিন মাস সুন্দরবন প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। মাছ ও বন্যপ্রাণির প্রজনন মৌসুম হওয়ায় সুন্দরবনে নদী খালে মাছের ডিম ছাড়া এবং বন্যপ্রাণিদের অবাধ বিচরণ ও প্রজনন নিশ্চিত করতে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। নিষেধাজ্ঞাকালীন সময়ে সুন্দরবনে জেলেরা মাছ ধরা ও সকল ধরণের পর্যটক নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সুন্দরবন সুরক্ষায় এই সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাই, একই সাথে এই সিদ্ধান্তকে পুনঃবিবেচনা করার আবেদন জানাই। তারা বলেন বন বিভাগের এ সিদ্ধান্তের ফলে শুধু মাত্র করমজল বন্যপ্রাণি প্রজনন কেন্দ্র ও পর্যটন স্পটকে ঘিরে গড়ে ওঠা শত শত মাঝি-মাল­া ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা কর্মহীন হয়ে পড়েছে। অভাবের তাড়নায় কর্মহীন এইসব মানুষেরা বিভিন্ন অপরাধ কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ছে। এছাড়া মোংলা এলাকার একমাত্র পর্যটন কেন্দ্র করমজলে প্রবেশ নিষিদ্ধ হওয়াতে পর্যটক, শিশু ও ভ্রমণ পিপাসুরা নিরুপায় হয়ে নদীর পাড় বা গ্রামাঞ্চলে ঢুকে অনেক অপরাধমূলক কর্মকান্ডেও জড়িয়ে পড়ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। 
করমজল যেহেতু পশুর নদী সুন্দরবনের প্রবেশমুখে অবস্থিত এবং পর্যকটদের ডে-ভিজিটর সেন্টার হওয়ায় এখানে রাতে অবস্থান করার কোন সুযোগ নেই। তাছাড়া এখানে ঘোরাঘুরির জন্য সাময়িক পাশ দেয়া হয় এবং বিকেল ৪টার পর কোনভাবেই সেখানে অবস্থান করা যায়না। নির্দিষ্ট গন্ডির মধ্যে চিড়িয়াখানার আদলে গড়ে তোলা করমজলে পর্যটক আগমনে সুন্দরবনের বন্যপ্রাণিদের অবাধ বিচরণ ও প্রজনন কাজে ব্যাঘাত ঘটার কোন সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। সে জন্য পর্যটকদের ডে-ভিজিটর সেন্টার সুন্দরবনের করমজল পর্যটন কেন্দ্রকে তিন মাসের নিষেধাজ্ঞার আওতার বাইরে রাখার দাবি জানান তারা। 
সুন্দরবন ট্যুর অপারেটরের মালিক মোঃ তানজির  হোসেন রুবেল বলেন, ১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট মাছের ডিম ছাড়া ও বন্যপ্রাণি প্রজনন মৌসুম বলছে বন বিভাগ। কিন্তু বন্যপ্রাণি প্রজনন ও মাছের ডিম ছাড়ার সময় এখন যে নয় তা আমরা ভাল করেই জানি। তার পরেও সরকার যেহেতু সিদ্ধান্ত নিয়েছে আমরা সরকারের বাইরে নয়। পশুর নদীর পাড়ে করমজল অবস্থিত, কিন্ত সেই পশুর নদী দিয়ে বড় বড় বিদেশী জাহাজ, ক্লিংকার, কয়লা বা সার বোঝাই কার্গো লাইটার, তেলে ট্যাংঙ্কারসহ বিভিন্ন নৌযান প্রতিনিয়ত রাত-দিন চলাচল করছে। তাতে যদি বন্যপ্রাণির প্রজননে ক্ষতি না হয় তবে ছোট ছোট পর্যটকবাহী নৌযানে কি করে প্রজনন ক্ষতি হবে। তারপরেও দাবি করবো অন্যান্য স্পটগুলো বন্ধ হলেও করমজলে পর্যটক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকলে পর্যটন ব্যবসার সাথে যুক্ত মাঝি-মাল­াসহ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জীবন-জীবিকা রক্ষায় অনেক হুমকির মুখে পড়তে হচ্ছে। আর যদি তাদের এ নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখে তবে জেলেদের ন্যায় বিশেষ সহায়তার দাবি জানানো হয়।
সভাপতির বক্তব্যে মোঃ দেলোয়ার হোসেন বলেন, আন্দোলন নয়, এটা আমাদের দাবি। আমরা গরিব, নৌযান চালিয়ে আমাদের পরিবার পরিজন নিয়ে সংসার চালানো হয়। তাই ৪৮ ঘন্টার মধ্যে যদি আমাদের অসহায়দের জন্য বন বিভাগের পক্ষ থেকে কোন ব্যবস্থা না হয় তবে মাঝিরাও বসে থাকবে না। এ ব্যাপারে সকল সংগঠন মিলে কঠোর আন্দোলন গরে তুলবো। 
তারা পরিবেশবান্ধব পর্যটন শিল্প বিকাশে সরকারকে ধারাবাহিকভাবে প্রশিক্ষণ, সেমিনার ও কর্মশালারও দাবি জানান। করমজলকে নিষেধাজ্ঞার আওতার বাইরে রাখার দাবি জানিয়ে টেকসই পর্যটন শিল্প বিকাশ এবং এই শিল্পের সাথে যুক্ত মানুষে জীবন-জীবিকা রক্ষায় উদ্যোগ গ্রহণ করার দাবি জানান। মানববন্ধন শেষে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। উলে­খ্য এ এলাকায় পর্যটক পরিবহনের সাথে প্রায় ৪/৫ হাজার নৌযান শ্রমিক-কর্মচারী জড়িত।

্রিন্ট

আরও সংবদ