খুলনা | শুক্রবার | ২০ জুন ২০২৫ | ৬ আষাঢ় ১৪৩২

ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন : যে সব মানদন্ড থাকলে বিএনপি’র প্রার্থী হওয়া যাবে

খবর প্রতিবেদন |
০১:৪৭ এ.এম | ১৭ জুন ২০২৫


লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকে নির্বাচনের সন্তোষজনক সময় নির্ধারণের পর জোরেশোরে ভোটের প্রস্তুতি শুরু করেছে বিএনপি। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগামী ফেব্র“য়ারির প্রথমার্ধে হবে, এমনটা ধরে নিয়েই প্রস্তুতি নিচ্ছে দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দলটি।
এ অবস্থায় বিএনপি’র জন্য এখন বড় চ্যালেঞ্জ প্রার্থী বাছাই। কারণ ৫ আগস্ট অভ্যুত্থানের পর প্রতি আসনে বিএনপি’র হয়ে নির্বাচন করতে আগ্রহী অসংখ্য প্রার্থী ইতোমধ্যে গণসংযোগে নেমেছেন। যদিও দলটির হাইকমান্ড উপযুক্ত প্রার্থী বাছাইয়ে ইতোমধ্যে কয়েক দফা জরিপ চালিয়েছে। এখনো জরিপ চলছে। 
সূত্র বলছে, মনোনয়নের ক্ষেত্রে ২০০১, ২০০৮ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রার্থীদের বর্তমান অবস্থানও পর্যালোচনা করা হবে। 
তবে এক্ষেত্রে মৌলিক নীতি অনুসরণ করা হবে। এজন্য প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে নীতি হিসাবে তিনটি যোগ্যতাকে অন্যতম মানদন্ড হিসাবে সেট করা হয়েছে। এই যোগ্যতাগুলো যাদের নাই তারা বাদ পড়বেন মনোনয়ন তালিকা থেকে।
এগুলো হলো গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লড়াই-সংগ্রামে দেশ ও দলের যে প্রার্থী সবচেয়ে বেশি ত্যাগ স্বীকার করেছেন। দ্বিতীয়ত, যিনি সততার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ এবং এলাকার জনগণের কাছে একজন ভালো মানুষ হিসাবে সুপরিচিত। তৃতীয়ত, ভোটের রাজনীতিতে যিনি তার নির্বাচনি এলাকায় বেশি জনপ্রিয়। দলটির দাায়িত্বশীল একাধিক সূত্র গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে এমন মানদন্ডের কথা নিশ্চিত করেছে।
এ প্রসঙ্গে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির একাধিক নেতা বলেন, এবার প্রার্থী মনোনয়নে বড় ধরনের অনেক চমক থাকতে পারে। কিছু আসনে এমন ব্যক্তিদের প্রার্থী দেওয়া হবে, যার কথা অনেকের চিন্তার মধ্যেও থাকবে না। আবার অনেক সিনিয়র ও প্রভাবশালী নেতাও শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন টিকিট পাবেন না। 
এতটুকু বলা যায়, বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ত্যাগী, সৎ-যোগ্য ও সর্বোপরি জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য প্রার্থীকেই বেছে নিতে পারেন। এছাড়া এটা নিশ্চিত যে, যার বিরুদ্ধে অপকর্মের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে এবং মাঠে গ্রহণযোগ্যতা নেই, তিনি প্রার্থী হতে পারবেন না। এ বিষয়ে অনেক আগে থেকেই তারেক রহমানের কাছে বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাদের আমলনামা রয়েছে।
এদিকে সূত্র মতে, মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে তরুণ প্রার্থীরা অগ্রাধিকার পেতে পারে। আবার দলের বৃহত্তর স্বার্থের কথা বিবেচনা করে নবীন-প্রবীণের চমৎকার সমন্বয় ঘটিয়ে প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করা হবে। অপর দিকে শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের পরিবার থেকে একাধিক প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন। এছাড়া মিত্রদের জন্য কিছু আসনও সেক্রিফাইস করবে। থাকবে নানান চমকও।
আ’লীগের টানা সাড়ে ১৫ বছরে তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়। এর মধ্যে ২০১৪ ও ২০২৪ সালের নির্বাচন বর্জন করে বিএনপিসহ বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল। তবে ২০১৮ সালের নির্বাচনে অংশ নেয় বিএনপি, যদিও আগের রাতে ভোট হওয়ার অভিযোগ এনে নির্বাচন থেকে সরেও আসে। প্রতিকূল পরিবেশে অংশ নেওয়া ওই নির্বাচনে একটি আসনের বিপরীতে একাধিক প্রার্থীকে চিঠি দিয়েছিল দলটি। তবে আগামী জাতীয় নির্বাচনে এমনটি করা হবে না। 
বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, এবার দলের সিদ্ধান্ত হলো একক প্রার্থী নির্ধারণ করা। ২০১৮ সালের মতো একাধিক প্রার্থী হবে না।
বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলেন, দলের প্রতি কার কতটুকু ত্যাগ রয়েছে, নিঃস্বার্থ ভাবে দলকে সেবা করেছেন এবং দুর্দিনে যারা দলের সঙ্গে ছিলেন তাদের আমরা নিশ্চয়ই অগ্রাধিকার দেব। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কয়েকটি জরিপ করেছেন, আরও করবেন। এর ফলে নিশ্চয়ই যোগ্য ব্যক্তি উঠে আসবে এবং তাকেই মনোনয়ন দেওয়া হবে।
অবশ্য নির্বাচন কমিশনের তফশিল ঘোষণার পর থেকেই নির্বাচন কেন্দ্রিক সব কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে। তফশিল ঘোষণার পর দলীয়ভাবে মনোনয়নপত্র বিক্রি ও জমা দেওয়ার কার্যক্রম শুরু হবে। সম্ভাব্য প্রার্থীদের সাক্ষাৎকারের পর একক প্রার্থী চূড়ান্ত করবে বিএনপি’র পার্লামেন্টারি বোর্ড। 
দলটির (বিএনপি) গঠনতন্ত্রের ১৪ অনুচ্ছেদে বলা আছে, ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য কিংবা অন্য যে কোনো নির্বাচনের জন্য দলের প্রার্থী মনোনয়নে দলের একটি পর্লামেন্টারি বোর্ড থাকবে। জাতীয় স্থায়ী কমিটিই হবে দলের পার্লামেন্টারি বোর্ড। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কিংবা যে কোনো নির্বাচনে দলের প্রার্থী মনোনয়নের দায়িত্ব পার্লামেন্টারি বোর্ড পালন করবে এবং এ ব্যাপারে বোর্ডের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে।’ 
জানতে চাইলে বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি বলেন, বিএনপি একটি নির্বাচনমুখী রাজনৈতিক দল। আন্দোলন-সংগ্রাম ও সংগঠন পরিচালনা করে নির্বাচন করার জন্য। ফলে নির্বাচনের জন্য আলাদা করে প্রস্তুতি নেওয়ার কিছু নেই, নির্বাচনের জন্য বিএনপি সব সময় প্রস্তুত।

্রিন্ট

আরও সংবদ