Shomoyer Khobor
প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউসুফ আলী | প্রকাশিত ৩১ জানুয়ারী, ২০২১ ০০:৪১:০০
শিক্ষণীয় গল্প আমাদেরকে যেমন আনন্দ দেয়, ঠিক তেমনি উজ্জীবিতও করে তোলে। এখানে কয়েকটি বাস্তব ঘটনা তুলে ধরা হলো যা আমাদের কাছে অনেকটা গল্পের মত মনে হবে।
এক
একজন সাহাবী ছিলেন। নাম আলকামা (রাঃ)। তিনি কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়লেন। তার রোগ সারার কোন লক্ষণ দেখা গেল না। এখন তিনি মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করছেন। মৃত্যুর আগে কালেমা পড়লে আলাহ সমস্ত গোনাহ মাফ করে দেন এবং জান্নাত দান করেন। এই কারণে সকলে তাকে কালেমা ‘লা-ইলাহা ইলালাহ’ পড়তে বলল। কিন্তু কি আশ্চর্য! তার মুখ থেকে কালেমা বের হচ্ছে না। অনেক চেষ্টা করেও তিনি কোন ভাবেই কালেমা পড়তে পারছেন না। সবাই তখন পেরেশান হয়ে গেলেন। সাহাবীরা বিষয়টি মহানবী (সাঃ) কে জানালেন। রসূল (সাঃ) এ আর্শ্চয ঘটনা সম্পর্কে জানতে পেরে জিজ্ঞাসা করলেন, তার মা কি জীবিত আছে? বলা হলো তার মা জীবিত আছে, তবে সে খুবই বয়োবৃদ্ধ। তখন তাকে রসূল (সাঃ)-এর দরবারে উপস্থিত করা হলো। তার নিকট তার ছেলের কথা উলেখ করে এর কারণ সম্পর্কে জিজ্ঞাস করা হলো। সে বলল, আলকামা বড় নামাজী, বড় রোজাদার ব্যক্তি এবং বড়ই দানশীল। কিন্তু সে আমার কথা শুনত না, আমার কথায় গুরুত্ব দিত না। আমার কথার উপরে তার স্ত্রীর কথার গুরুত্ব বেশী দিত। রসূল (সাঃ) বললেন, ঠিক এ কারণেই আলাহ তায়ালা তার মুখে কালেমার উচ্চারণ বন্ধ করে দিয়েছেন। এরপর তার মা তাকে মাফ করে দিলেন। তারপর সাহাবী আলকামা কালেমা পড়তে পারলেন। (সহীহ হাদিস অবলম্বনে)
শিক্ষণীয় বিষয় : মায়ের মনে কষ্ট ও দুঃখ দিলে সন্তান যতই ইবাদত-বন্দেগী করুক না কেন, তার পক্ষে জান্নাত লাভ করা সম্ভব নয়।
দুই
সাহাবী আব্দুলাহ বিন জাফর (রাঃ) একদিন মদিনার কোন বাগান দিয়ে যাচ্ছিলেন। এমন সময় তিনি দেখতে পেলেন, বাগানের মধ্যে একজন হাবশী গোলাম একটি গাছের নীচে বসে রুটি খাচ্ছে। একটি কুকুরও তার পাশে বসা ছিল। তিনি একটি আশ্চর্য ব্যাপার লক্ষ্য করলেন। গোলামটি রুটির এক লোকমা নিজে খাচ্ছে এবং অপর লোকমা কুকুরকে খাওয়াচ্ছে। এ ভাবেই তাদের আহার পর্ব চলছে। সাহাবী আব্দুলাহ (রাঃ) এই দৃশ্য দূর থেকে দেখছিলেন। খাওয়া শেষ হবার পর তিনি তার নিকটে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কার গোলাম? সে বলল, আমি হযরত উসমান (রাঃ)-এর ওয়ারিসদের গোলাম। সাহাবী আব্দুলাহ (রাঃ) তাকে জিজ্ঞাস করলেন-“তুমি এই ভাবে কুকুরকে সঙ্গে নিয়ে কেন খাবার খেলে?” গোলাম উত্তর দিল-“হুজুর! এই কুকুরটা আমার সাথে কয়েক বছর যাবৎ রয়েছে। তাকে বাদ দিয়ে আমি কিভাবে খাই বলুন?” হযরত আব্দুলাহ (রাঃ) বললেন-“কুকুরের জন্য তো আরো নিকৃষ্ট খাবার হলেই চলত?” গোলাম বলল-“আলাহর একটি মাখলুকের সঙ্গে এক সাথে আহার করতে বসে তাকে নিকৃষ্ট মানের খাবার প্রদান করতে আমার লজ্জাবোধ হচ্ছিল।” সাহাবী আব্দুলাহ (রাঃ) তার এই ব্যবহার দেখে অভিভূত হলেন। তিনি সাথে সাথে উসমান (রাঃ)-এর ওয়ারিসদের কাছে গেলেন এবং বাগানসহ তাকে খরিদ করে বাগানটি গোলামকে হাদিয়া দিয়ে দিলেন।
তিন
অনেক দিন আগের কথা। একদা এক ব্যক্তি হাঁটতে হাঁটতে পিপাসার্ত হয়ে গেল। এরপর লোকটি একটি কূপে নেমে পানি পান করে এসে দেখল একটা কুকুর পিপাসায় কাতরাচ্ছে আর তৃষ্ণা মেটানোর জন্য ভিজা মাটি চাটছে। এ দৃশ্য দেখে লোকটি মনে মনে বলল: কুকুরটির নিশ্চয়ই আমার মতোই পিপাসা লেগেছে। এরপর তিনি আবারও কূপে নেমে মোজায় পানি ভরে উপরে এসে কুকুরটিকে পানি পান করালেন। কুকুরের প্রতি তার দয়া দেখে মহান আলাহ তায়ালা তার ওপর খুশি হয়ে তাকে ক্ষমা করে দিলেন। সাহাবিরা বললেন : হে আলাহর রসূল, পশুকে দয়া করার মধ্যেও কি আমাদের কোনো পুণ্য আছে? নবী (সঃ) বললেন, প্রত্যেক প্রাণীর উপকারেই মধ্যেই প্রতিদান রয়েছে।’ (সহীহ বুখারী অবলম্বনে) শিক্ষণীয় বিষয়: জীব জন্তুর প্রতি দয়া প্রদর্শন করা একটি মহৎ গুণ।
(লেখক: মৎস্য বিজ্ঞানী ও অধ্যাপক, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়)