খুলনা | বুধবার | ২৩ অক্টোবর ২০২৪ | ৭ কার্তিক ১৪৩১

১৪ ফেব্র“য়ারি ভ্যালেন্টাইন্সের নামে ‘মহব্বতে জিন্দাবাদ’

এড. এম মাফতুন আহমেদ |
০১:১৫ এ.এম | ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২৪


১৪ ফেব্র“য়ারি ভ্যালেন্টাই’স ডে’। ধুমধামে অনুষ্ঠানটি বিশ্বময় বিশেষ করে খৃষ্টীয় জগতে পালন করে থাকে। আমাদের দেশে একশ্রেণি প্রেমেরলীলায় মত্ত হয়ে কপোত-কপোতিরা সারা বছরের অবৈধ প্রেমেরভাব প্রকাশ করে। কার্ড বিনিময় করে। লাল গোলাপ বিনিময় করে। পরস্পর কেক, মিঠাই বিনিময় করে। প্রেমিক-প্রেমিকারা ঘাটে-মাঠে-পথে-পার্কে বের হয়। একত্রিত হয় নাইট ক্লাবে, বিভিন্ন হোটেল। বিরতিহীন ভাবে চলে মদ-হুস্কির আসর। চলে নানাভাবে বলগাহীন নৃত্য। চলে ডিস্ক, ড্যান্স ও ব্যাভিচারের বিরাট ধূম! গলা ফাটিয়ে গেয়ে ওঠে,
“প্রেমের জোয়ারে ভাসাবে দোঁহারে
বাঁধন খুলে দাও, দাও দাও দাও।
ভুলিব ভাবনা পিছনে চাব না
পাল তুলে দাও, দাও দাও দাও”।
এরা কী অর্ধ মৃত্যু তাসলিমা নাসরিনের ভাবশিষ্য? তাসলিমা নাসরিনের থিওরী অনুযায়ী বিয়ে-শাদীর কোন প্রয়োজন নেই। তার থিওরী জরায়ুর অবাধ স্বাধীনতা। ভ্যালেন্টানইন্স ডের নামে আমাদের কী সেদিকে নিয়ে যাবার আহবান করছে ?
প্রিয় পাঠক, আপনি বলুন এ সব কোন সংস্কৃতি? একজন সুস্থ মস্তিস্ক মানুষ হয়ে কী এ সব মেনে নেবেন? মুসলমান কেন, যে কোন বিবেক সম্পন্ন মানুষ বিবাহের পূর্বে কোন নারীর সাথে অবৈধ প্রণয় বা কোন সম্পর্ক কী গড়তে পারে?
বৃটিশ রচিত আজকের আমাদের প্রচলিত আইনের দৃষ্টিতে মারাত্মক অপরাধ। আর ইসলামী দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ হারাম। কারণ কোন মুসলমান কোন বিজাতীয় কালচারে আনন্দিত হতে পারে না। নিজস্ব স্বকীয়তা বিসর্জন দিতে পারেন না। শুধু আমাদের দেশে ভ্যালেন্টাইন্স ডে বস্তাপচা একটি অপসংস্কৃতি নয়, যেখানে এই সংস্কৃতির উৎসস্থল পশ্চিমা দেশের অনেকে এটিকে এখন ঘৃণাভরে বর্জন করেছে।
খ্রিস্টীয় চেতনা ভ্যালেন্টাইন দিবসের কারণে বিনষ্ট হওয়ার অভিযোগে ১৯৭৬ সালে ফ্রান্স সরকার ভ্যালেন্টাইন্স উৎসব নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। ইংল্যান্ডের ক্ষমতাসীন পিউরিটানরাও এক সময় প্রশাসনিকভাবে এ দিবস উদযাপন করা নিষিদ্ধ করেছিল। এ ছাড়া অস্ট্রিয়া, হাঙ্গেরি ও জার্মানিতে বিভিন্ন সময়ে এ দিবসটি জনগণ ও সরকারিভাবে প্রত্যাখাত হয়েছিল। স¤প্রতি পাকিস্তানেও ২০১৭ সালে ইসলাম বিরোধি হওয়ায় ভ্যালেন্টাইন্স উৎসব সে দেশের আদালত নিষিদ্ধ করে। আমরা কী পারি না বাঙালি সংস্কৃতির বিরুদ্ধে, ইসলামের বিরুদ্ধে, একটি আদিম সভ্যতা বস্তা পর্চা এই ভ্যালেন্টাইন উৎসবকে নিষিদ্ধ করতে।
বাংলাদেশে ৯০’এর দশকের আগে কখনো ‘ভ্যালেন্টইন্স ডে’ কথা শুনা যায়নি। ১৯৯৩ সালের ১৪ ফেব্র“য়ারি সাংবাদিক শফিক রেহমান ‘ভালবাসা দিবস’ হিসেবে তার সম্পাদিত যায় যায় দিন পত্রিকায় একটি বিশেষ সংখ্যা বের করেন। দিনে দিনে বাংলাদেশে একশ্রেণি বিশেষ করে যুব সমাজের মধ্যে ব্যাপক উৎসবের রূপ নেয়। শফিক রেহমান কখনও ভাবেনি এই ভালবাসা দিবস এত বড় রূপ নেবে।
বিবিসি বাংলায় এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন,‘এক বৃদ্ধ ফেরিওয়ালকে কেন্দ্র করে তার উৎসুক মনে ভালবাসার এক আবেগের ঘনঘটা সৃষ্টি হয়। আমি তখন চিন্তা করলাম একটি দিনে প্রতিটি মানুষের অন্তত সবার কাছে ভালোবাসাটা প্রকাশ করা উচিত। আমি তখন ভেবেছিলাম, এই যে আমাদের দেশে এবং উপমহাদেশে এত সহিংসতা ঘটছে, এর অবসান ঘটাতে ভালোবাসা দরকার’।
মি. রেহমান পাশ্চত্য সংস্কৃতিতে বড় হয়েছেন। তবে জাতিতে তিনি একজন খাঁটি বাঙালি। আমার জানামতে একজন খাঁটি দেশপ্রেমিক। তার শুরুটা মনে হয় ভাল ছিল। যেমন বাংলা নববর্ষ শুরুতে ফসলী সন ছিল। পরবর্তীতে মূল ¯িপ্রট থেকে সরে যেয়ে বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ ঘটে। ভালবাসা দিবসটি ও তদ্রুপ। তিনি চেয়েছিলেন হিংসা বিদ্বেষ ভুলে যেয়ে ভালবাসার বন্ধনে সবাইকে এক করতে। তিনি কি চেয়েছিলেন আর আজকে কী হলো? হুজুগে বাঙালি। উন্মদনায় যা মনে আসে তাই করে। ভালমন্দ বিচার মানে না।
পশ্চিমা সংস্কৃতি নিয়ে নাচানাচি করছি; অথচ আমাদের রয়েছে হাজার বছরের নিজস্ব সংস্কৃতি। ৯০ ভাগ মুসলমানের এই দেশের সমাজ ব্যবস্থা পৃথিবীতে বিরল। ধর্মীয় মূল্যবোধ, বাবা-মা-ভাই-বোন নিয়ে পারিবারিক বন্ধন, ছোট-বড় এর মধ্যে ভালোবাসা, সহানুভতি সহমর্মিতা শত শত বছর ধরে বিদ্যমান। ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা দেশের সংস্কৃতি। আমরা কেন বিদেশী অপসংস্কৃতি নিয়ে মাতামাতি করছি? কেন অপসংস্কৃতি চর্চার নামে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ধ্বংস করছি? আমাদের ধ্বংস করতে কি বিদেশিরা এই অপসংস্কৃতি চর্চায় অতি উৎসাহী হয়ে পড়েছে। আমরা কেউ বুঝে, কেউ না বুঝে সে ফাঁদে পা দিচ্ছি। 
লেখক : সিনিয়র আইনজীবী, কলামিষ্ট, আজাদবার্তাঃ সম্পাদক

্রিন্ট

আরও সংবদ