খুলনা | মঙ্গলবার | ২০ মে ২০২৫ | ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

মুদ্রানীতির সমালোচনায় প্রধানমন্ত্রীর অর্থ উপদেষ্টা

টাকা ছাপিয়ে সরকারকে দেওয়া নিয়ে বিতর্ক

খবর প্রতিবেদন |
০২:৪৮ এ.এম | ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৪


ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদেরা অভিযোগ করেছেন যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক একদিকে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সুদের হার বাড়িয়ে অন্যদিকে সরকারের প্রয়োজন মেটাতে টাকা ছাপাচ্ছে। তাঁরা একে বর্ণনা করেছেন ‘বিপরীতমুখী’ পদক্ষেপ হিসেবে। তবে তাঁদের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ মোঃ হাবিবুর রহমান বলেছেন, টাকা ছাপানোর যে কথা বলা হচ্ছে, তা সঠিক নয়।
মুদ্রানীতির সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রীর অর্থ উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান বলেন, নীতির স্থিতিশীলতার অভাব আছে। মুদ্রানীতির যে ট্রাস্ট মিশন মেকানিজম, এটা বোধ হয় দুর্বল।
রোববার রাজধানীর মতিঝিলে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) কার্যালয়ে আয়োজিত ‘বেসরকারি খাতের দৃষ্টিতে বাংলাদেশের অর্থনীতির সামগ্রিক পর্যালোচনা (জুুলাই-ডিসেম্বর, অর্থবছর ২০২৪)’ শীর্ষক সেমিনারে পরস্পর বিরোধী এই বক্তব্য উঠে আসে। 
ঢাকা চেম্বারের সভাপতি আশরাফ আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা মসিউর রহমান। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. মোঃ হাবিবুর রহমান, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (বিআইডিএস)-এর রিসার্চ ডিরেক্টর ড. মোহাম্মদ ইউনুস, ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি শামস মাহমুদ এবং পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই)-এর সিনিয়র ইকোনোমিস্ট ড. আশিকুর রহমান সেমিনারের নির্ধারিত আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। 
ড. মসিউর রহমান বলেন, কর ব্যবস্থাপনা নিয়ে পুরোনো কথাবার্তা এখনও চলছে, বিষয়টি নিয়ে আরও গভীর ভাবে পর্যালোচনার প্রয়োজন আছে। দেশের জাতীয় আয় ও রাজস্বের অনুপাত বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই উলে­খ করে তিনি বলেন, কর ব্যবস্থার হারের গড়মিলের কারণে করদাতাকে অনেক সময় নির্ধারিত করের চেয়ে বেশি কর প্রদান করতে হচ্ছে, যা কাম্য নয়। বিনিয়োগে স্থাবিরতা কাটাতে বিদেশি বিনিয়োগের আকর্ষণে আরও বেশি জোর দেয়া উচিত। তবে বিনিয়োগের সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়গুলোতে প্রাপ্তিতে সরকারের এগিয়ে আসতে হবে। অর্থনৈতিক উপদেষ্টা বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ স¤প্রসারণে নীতির স্থিতিশীলতার কোনো বিকল্প নেই। তিনি বলেন, রপ্তানি পণ্য ও বাজার স¤প্রসারণে কারো কোনো দ্বিমত নেই, তবে নতুন পণ্য এবং নতুন বিনিয়োগ বিষয়ে নানামুখী চাপও রয়েছে এবং উৎপাদনশীলতা বাড়াতে আমাদের আরও মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ প্রদান করেন।
সেমিনারে ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি শামস মাহমুদ বলেন, বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা বর্তমানে ব্যাংক থেকে প্রয়োজনীয় টাকার সংস্থান করতে পারছেন না। কেন্দ্রীয় ব্যাংক একদিকে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সুদের হার বাড়িয়েছে। অন্যদিকে সরকারের প্রয়োজন মেটাতে বাংলাদেশ ব্যাংক টাকা ছাপাচ্ছে, যেটা বিপরীতমুখী।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ আশিকুর রহমান বলেন, খেলাপি ঋণের কারণে দেশের বেসরকারি খাতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। দেশের ২২ শতাংশের বেশি ঋণ সমস্যাযুক্ত। গত ১৫ বছরে কর-জিডিপি অনুপাত বাড়ানোর ক্ষেত্রে কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি করা যায়নি। এতে রাষ্ট্রের কোষাগারের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি হয়েছে। এসব কারণে টাকা ছাপিয়ে সরকারকে দিতে হয়েছে।
তবে এ ধরনের বক্তব্যের বিরোধিতা করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ মোঃ হাবিবুর রহমান। তিনি বলেন, অনেকে একটা কথা বলেন যে টাকা ছাপানো হয়। কিন্তু না জেনে তাঁরা সম্পূর্ণ ভুল বক্তব্য দেন। টাকা ছাপানোর বিষয়টি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যালেন্স শিটের মাধ্যমে বোঝা যায়।
হাবিবুর রহমান জানান, বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যালেন্স শিটের আকার গত ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে) হয়েছে ৩ লাখ ৭২ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা, যা এর আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ কম। অর্থাৎ যত টাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে প্রবেশ করেছে, তার চেয়ে কম টাকা বাজারে ছাড়া হয়েছে। কাজটি সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে করা হয়েছে। ফলে টাকা ছাপিয়ে বাজারে দেওয়া হচ্ছে, এ কথা সঠিক নয়।
মূল প্রবন্ধে ডিসিসিআইয়ের সভাপতি আশরাফ আহমেদ বলেন, জিডিপিতে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগের অবদান কমে যাওয়া উদ্বেগের বিষয়। পাশাপাশি স্থানীয় ও বৈদেশিক বিনিয়োগ বাড়াতে ব্যবসা পরিচালন ব্যয় হ্রাস, সহনীয় মূল্যে নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি প্রাপ্তি ও সরবরাহ খাতের উন্নয়ন জরুরি। এ ছাড়া মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যেসব উদ্যোগ নিয়েছে, তাতে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ কমার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই বিষয়গুলোর মধ্যে সমন্বয় প্রয়োজন।

্রিন্ট

আরও সংবদ