খুলনা | রবিবার | ০১ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১৭ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

ভাষা আন্দোলন বাঙালির স্বাধীনতার প্রেরণার উৎস

এড. এম. মাফতুন আহমদ |
০২:৪০ এ.এম | ২১ ফেব্রুয়ারী ২০২৪


“ফেব্র“য়ারির একুশ তারিখ
দুপুর বেলায় অক্ত
বৃষ্টি নামে বৃষ্টি কোথায়?
বরকতের রক্ত
.....প্রভাতফেরি, প্রভাতফেরি
আমায় নেবে সঙ্গে,
বাংলা আমার বচন
জন্মেছি এই বঙ্গে।”
সমকালীন বাংলা ভাষার প্রধান কবি আল মাহামুদের কবিতার মতোই আবেগ প্লাবনে বয়ে যাচ্ছে প্রতিটি বাংলাভাষী মানুষের হৃদয়ে অলিন্দে, ধমনীতে, দিনরাতের পালাবদলে, বছর ঘুরে আবার এসেছে অমর, অনিবাশী, অম্লান, অক্ষয় অমর ফেব্র“য়ারি মাস। ফেব্র“য়ারি মাস মানেই ভাষার মাস।
বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার জন্য সংগ্রামের মাস। এই মাসে ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে যেয়ে অনেক রক্ত দিতে হয়েছে। সংগ্রাম করতে হয়েছে। এই আন্দোলন সংগ্রামে শ্যামল এই বাংলায় কেউ গাজী হয়ে ফিরেছেন; কেউ শহিদ হয়েছেন। 
বীর শহিদ আবুল বরকত, শফিকুর রহমান, আব্দুস সালাম, আব্দুর জব্বার, রফিকুল ইসলাম সহ নাম জানা শত শত বীর শ্রেষ্ঠ শহিদী সন্তানদের প্রতি জানাই অকৃত্রিম শ্রদ্ধা। এসব শহিদদের পরিবার বিশেষ করে যারা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় সিপাহ্সালারের ভূমিকা পালন করেছিলেন সে সব বীরশ্রেষ্ঠ সন্তানরা যারা আজও লাল সবুজের পতাকায় আচ্ছাদিত এই শ্যামল বাংলায় বেঁচে আছেন; তাদের প্রতি জানাই অকুন্ঠ ভালবাসা। অন্তরের আকুল স্থল থেকে জানাই একরাশ পরম শ্রদ্ধা।
ফেব্র“য়ারি মাস প্রতি বছর আসে। এবারও এসেছে। রক্তঝরা এ মাসকে সামনে রেখে আমরা কিছু লিখছি। সেমিনার সভা-সমাবেশে কিছু কথা প্রতিনিয়ত তুলে ধরছি। দিনটি পালন করছি। তবে গতানুগতিক ধারায়।
একটি জাতির গৌরব গাঁথা রক্তাক্ত এই স্মৃতি বিজড়িত দিনটি কী শুধু দিবসভিত্তিক আলোচনা বা মিষ্টি বিতরণের মধ্যেই সীমাবদ্ধতা থাকবে? জাতি আজ অনেক কিছু জানতে চায়, আগামি প্রজন্ম অনেক কিছু শিখতে চায়। কেন বাংলা ভাষার বিরুদ্ধে সেদিন ষড়যন্ত্র হয়েছিল? কেন সেদিন প্রতিক্রিয়াশীল শাসকগোষ্ঠি বাঙালির মুখের ভাষা কেড়ে নিতে চেয়েছিল? 
কারা আমাদের অস্থিত্বকে সমূলে বিনাশ করতে চেয়েছিল? কী সূদূর প্রসারি ষড়যন্ত্র ছিল? ভাষা আন্দোলনের এই রক্তাক্ত ময়দানে কারা নেতৃত্ব দিয়েছিলেন? সেদিন সংবাদপত্রের ভূমিকা কী ছিল? বাঙালি হয়ে স্ব-জাতির বিরুদ্ধে কারা বিভীষণের ভূমিকা পালন করেছিলেন? কারা ভাষার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করেছিলেন?
প্রত্যেক জাতির কিছু ইতিহাস থাকে, গৌরব গাঁথা দিবস থাকে। যাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠে একটি জাতির সভ্যতা ও সংস্কৃতি। তাই ভাষা আন্দোলন আমাদের ইতিহাসের পাতায় একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। কারণ ভাষা আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় আজকের স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়। 
তাই এই দিনের সত্যিকার নির্মোহ ইতিহাস জাতির মাঝে তুলে ধরা উচিত। এই গৌরবান্বিত জাতি আগামি প্রজন্মের জন্য কী ইতিহাস রেখে গেলেন? আর ইতিহাস থেকে তারা কী শিক্ষা নিলেন? আমরা তো আত্মভোলা একটি বিস্মৃত জাতি। সকালের খবর বিকেলে মনে রাখতে পারি না। 
যে জাতি যত ইতিহাস সমৃদ্ধ; সে দেশ ততবেশি উন্নত। ততবেশি সমৃদ্ধশালী। ভাষা আন্দোলনের প্রকৃত ইতিহাস বিকৃত হচ্ছে। প্রকৃত ইতিহাস বিকৃত করে অনেকে ব্যক্তি বন্ধনায় মেতে উঠেছে। সবাই ভাষা সৈনিক সাজার চেষ্টা করছেন। নানাভাবে ফাঁয়দা নেয়ার চেষ্টায় অভ্যস্ত হয়ে উঠছেন। এ সব ইতিহাস বিকৃত ছাড়া কিছুই না। 
যুগ যুগ ধরে ইতিহাস বিকৃত হয়ে আসছে। তবে এটাও সত্য যে প্রকৃত ইতিহাস কখনও বিকৃত হয় না। কারণ ইতিহাস একটি শ্রোতস্ব^নী নদীর মত। সত্য একদিন উদঘাটিত হবেই হবে। তাই ইতিহাসকে বিকৃতি করে বা মোসাহেবী করে কেউ কখনও স্থায়িত্ব অর্জন করতে পারেনি। আত্মমর্যাদা সম্পন্ন কোন বীরের জাতি কাউকে পালিশ-মালিশ করেন না। তারা তৈল মর্দন বোঝেন না। 
তাই নির্লোভ নির্মোহভাবে সত্যিকার ইতিহাস জাতির মাঝে তুলে ধরতে হবে। এসব ষড়যন্ত্রকারীদের মুখোশ খুলে দিতে হবে। প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরতে হবে। ভাষার এই মাসে বীরশ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে নতুন প্রত্যয়ে আগামির প্রত্যাশায় এগিয়ে যেতে হবে।
লেখক : সিনিয়র আইনজীবী, কলামিষ্ট, সম্পাদক আজাদবার্তা।

্রিন্ট

আরও সংবদ