খুলনা | বৃহস্পতিবার | ২১ নভেম্বর ২০২৪ | ৭ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

কী এই লিঙ্গগত আত্মপরিচয় বিকৃতি!

প্রকাশ চন্দ্র অধিকারী |
১২:৫৭ এ.এম | ১২ মার্চ ২০২৪


ঘটনা -১, শিপন (ছদ্ম নাম)  বয়স ১৫ বছর, সে ছেলে সন্তান হয়েও অতিরিক্ত মাত্রায় মেয়েলী স্বভাবের। সে মেয়েদের পোশাক পছন্দ করে। সে তার সমাজ অনুযায়ি পুরুষদের জন্য মানানসই খেলাধুলার পছন্দের পরিবর্তে মেয়েদের উপযুক্ত খেলাধুলা পছন্দ করে। সে তার জন্মগত পুরুষালী যৌনাঙ্গ নিয়ে মোটেও সন্তোষ নয়।
ঘটনা-২ , তমা (ছদ্ম নাম) বয়স ১৬। সে খেলার সাথি হিসেবে সব সময় বিপরীত লিঙ্গের প্রতি বেশি পছন্দ করে। সে নিজেকে ছেলে সন্তান হিসেবে দেখতেও বেশি পছন্দ করে। বিভিন্ন কাজে ছেলেদের ভূমিকা পালনেও সে বেশি আগ্রহী।
আসলে সন্তান ছেলে না মেয়ে-তা বড় কথা নয় বরং তার বেড়ে উঠার ধরণ, তার পছন্দ অপছন্দ- এ সব কিছুকে কেন্দ্র করে শিশুর চারিত্রিক গুণাবলী প্রকাশ পায়। উপরের ঘটনা সমূহ হতে দেখতে পায়, দু’টি শিশুই তার লিঙ্গগত ভূমিকা পালনে অনিচ্ছুক বরং তারা বিপরীত লিক্সেগর ভাবনা দ্বারা বেশি ব্যাপৃত। উপরের ঘটনা দু’টিকে শিশুর লিঙ্গগত আত্মপরিচয় বিকৃতির লক্ষণ হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে।  
লিঙ্গগত আত্মপরিচয় বিকৃতির লক্ষণ : ডিএসএম ৪ অনুযায়ী লিঙ্গগত আত্মপরিচয় বিকৃতির লোকদের দু’টি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে। (ক) যারা বিপরীত লিঙ্গের ব্যক্তিদের সঙ্গে তীব্রভাবে এবং নিরবিচ্ছিন্নভাবে একাত্মতা অনুভব করে। শিশুদের মধ্যে এই বিকৃতিটি চারটি বা তার বেশি লক্ষণের মাধ্যমে প্রকাশ পায়- (১) বারবার সে বিপরীত লিঙ্গে রূপান্তরিত হতে তীব্র ইচ্ছা প্রকাশ করে। (২) বিপরীত লিঙ্গের পোশাক পরতে সর্বদা পছন্দ করে। (৩) খেলার সময় বা বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভূমিকা পালনের সময় বিপরীত লিঙ্গের খেলা বা বিপরীত লিঙ্গের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। (৪) খেলার সাথি হিসেবে বিপরীত লিঙ্গের লোকদের বেশি পছন্দ করে। (৫) বিপরীত লিঙ্গের সাজসজ্জা বেশি পছন্দ করে যেমন ছেলেরা মেয়েদের পোশাক আর মেয়েরা ছেলেদের পোশাককে বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকে। (খ) নিজের লিঙ্গ সম্পর্কে তীব্র অসন্তোষ এবং ঐ লিঙ্গের সঙ্গে সম্পর্কযুক্তি ভূমিকাকে উপযুক্ত মনে না করা। (গ) এই সমস্যাটির সঙ্গে জৈবিক বা শারীরিক উভলিঙ্গতা, লিঙ্গের গঠনের বিকৃতি একই সঙ্গে ঘটে না। (ঘ) এই সমস্যাটি সামাজিক, পেশাগত ও অন্যান্য ক্ষেত্রে কাজের ক্ষতি করে এবং মানসিক যন্ত্রণা তৈরি করে।
লিঙ্গগত আত্মপরিচয় বিকৃতির কারণ: (১) অনেক গবেষণায় দেখা গেছে গর্ভাবস্থায় মায়ের শরীরে পুং বা স্ত্রী হরমোনের প্রাধান্যের জন্য সন্তানদের মধ্যে লিঙ্গগত আত্মপরিচয় বিকৃতির সম্ভাবনা থাকে। (২) পরিবারের ভূমিকার কারণেও অনেক সময় অনেক ছেলে মেয়েরা শৈশবে বিপরীত লিঙ্গের আচরণ অনুকরণে উৎসাহবোধ করে থাকে। পরিবারের পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজন শিশুর বিপরীত লিঙ্গের আচরণ যদি মাত্রাতিরিক্ত প্রশ্রয় দান করে এবং ঐরূপ বিপরীত লিঙ্গের আচরণ বিভিন্নভাবে পুরস্কৃত করে থাকে- তাহলে শিশুর মধ্যে অনেক ক্ষেত্রে বিপরীত লিঙ্গের আচরণ বিকাশ লাভ করে থাকে। শরীরে হরমোনের অল্পতা বা আধিক্যই দায়ী।
লিঙ্গগত আত্মপরিচয় বিকৃতির চিকিৎসা: লিঙ্গগত আত্মপরিচয় বিকৃতি দূর করার জন্য কিছু সুপরিকল্পিত আচরণমূলক চিকিৎসা পদ্ধতি সফলভাবে প্রয়োগ করা যায়। যারা লিঙ্গগত আত্মপরিচয় বিকৃতিতে ভোগে- তাদের বিশেষ আচরণ চিকিৎসা ব্যবস্থায় এরূপ সমস্যাগ্রস্তদের বিশেষ আচরণ পরিবর্তনের দিকে নজর দেওয়া হয়। যেমন- (১) এরূপ সমস্যাগ্রস্তদের স্বলিঙ্গিয় আচরণ ধারায় অবতীর্ণ হতে উৎসাহ প্রদান করা হয়। (২) তাদের কল্পনা বা দিবা স্বপ্নকে পরিবর্তনের দিকে উৎসাহ প্রদান করা হয়। (৩) বিপরীত লিঙ্গের আচরণ পালনে নিরুসাহিত করা হয়।
পরিশেষে বলা যায়- লিঙ্গগত আত্মপরিচয় বিকৃতির ধারণা অত্যন্ত মৌলিক এবং শিকড় অত্যন্ত গভীরে ব্যাপৃত। এরূপ সমস্যার চিকিৎসা পদ্ধতি বেশ জটিল ও কৌশলপূর্ণ। আপনার বাচ্চার এরূপ সমস্যা দেখা দিলে একজন দক্ষ মনোবিজ্ঞানীর পরামর্শ গ্রহণ করে সমাধানের দিকে অগ্রসর হওয়া সম্ভব। 
লেখক : মনোবিজ্ঞানী ও সাইকোথেরাপিষ্ট, সহযোগি অধ্যাপক, মনোবিজ্ঞান বিভাগ, সরকারি সুন্দরবন আদর্শ কলেজ, খুলনা। (ফ্রি পরামর্শ: ০১৭১৪৬১৬০০১)।

্রিন্ট

আরও সংবদ