খুলনা | রবিবার | ২৯ জুন ২০২৫ | ১৫ আষাঢ় ১৪৩২

অর্থ আত্মসাৎ করে জনমনে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন ঝিনাইদহের সিও সংস্থা’র সাবেক কর্মীগণ

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি |
১১:৩০ পি.এম | ১০ মে ২০২৪


শিক্ষিত বেকার যুবক-যুবতীদের কর্মসংস্থান ও দারিদ্র জনগোষ্ঠীর কল্যাণে কাজ করা সোসিও ইকোনোমিক হেলথ এডুকেশন অর্গানাইজেশন (সিও) এনজিও’র সাবেক কর্মীর বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ কেলেঙ্কারি গোপন করতে বিভিন্ন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সিও সংস্থায় চাকুরি করাকালীন সময়ে প্রতিষ্ঠানটির নাম ভাঙিয়ে কর্মরত এলাকায় বিভিন্ন মানুষের বড় বড় লোন দেওয়ার কথা বলে সঞ্চয়ের টাকা, ডিপিএস এর টাকা, অগ্রিম কিস্তির টাকা আদায় করে অফিসে জমা না দিয়েই নিজেরা পকেটস্থ করার অভিযোগ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি তাদের অডিট কার্যক্রম শুরু করলে তাদের বিরুদ্ধে এসকল কর্মকান্ড নজরে আসে। বিষয়টি নিয়ে তাদের সাথে আলোচনায় বসলে তারা তাদের অপরাধ স্বীকার করে। একপর্যায়ে তারা প্রতিষ্ঠানটির টাকা ব্যাংক চেকের মাধ্যমে ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্র“তি দেয়। এদের মাঝে আবার কেউ স্ট্যাম্পে লিখিত করে সময় নিয়ে টাকা ফেরত দেওয়ার কথা বলে। নির্ধারিত সময়ে তারা টাকা ফেরত না দেওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে দেশের প্রচলিত আইনে মামলা রুজু হয়। যা আদালতে বিচারাধীন ও কারও কারও মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, অর্থ আত্মসাৎ কেলেঙ্কারির অন্যতম হোতা গাইবান্ধা জেলার পলাশবাড়ি উপজেলার সুই গ্রামের মতিয়ার রহমানের ছেলে এবিএম মাহবুবুর রশিদ। তিনি ২০২২ সালের ৬ ডিসেম্বর সিও ফরিদপুর সদর শাখায় শাখা ব্যবস্থাপক হিসেবে যোগদান করেন। যোগদানের পর থেকে তিনি সঞ্চয়ের টাকা, ডিপিএসএর টাকা, অগ্রিম কিস্তির টাকা আদায় করে অফিসে জমা না দিয়ে নিজে আত্মসাৎ এবং নামে বেনামে ভূয়া ঋণ বিতরণ দেখিয়ে সেই টাকাও আত্মসাৎ করেন। এভাবে তিনি মোট ২৯ লক্ষ ৪০ হাজার ৭শ’ টাকা হাতিয়ে নেন। বিষয়টি নিয়ে অডিট কার্যক্রম শুরু হলে সংস্থাটি তা প্রমাণ করে। তখন তার কাছে টাকা চাওয়া হলে তিনি নগদে ৪০ হাজার ৭শ’ টাকা সিও অফিসে জমা দেন এবং ১৪ লক্ষ টাকার একটি চেক প্রদান করেন। ব্যাংকে টাকা উঠাতে গেলে এ্যাকাউন্টে টাকা না থাকায় চেক ডিজঅনার করে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। এছাড়াও বাকি টাকা জামিনদারের মাধ্যমে স্ট্যাম্পে লিখিত করে সময় নিয়ে না দেওয়ায় দেশের প্রচলিত আইনে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে প্রতিষ্ঠানটি। যার মামলা নং- ঝি সিআর (এন.আই) ৮৪৬/২৩, সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী সদর আদালত, ঝিনাইদহ। পরবর্তীতে এবিএম মাহবুবুর রশিদ সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে দেখা যায় তিনি আগে যেসকল প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করেছেন সেই সকল প্রতিষ্ঠান থেকেও প্রচুর টাকা আত্মসাৎ করেছেন। তার মধ্যে উলে­খযোগ্য হীড বাংলাদেশ ও পিদীম ফাউন্ডেশন। তার এ অপকর্মের ফলে ঐ সকল প্রতিষ্ঠান তার নামে মামলা করেছে, সেই মামলাও চলমান আছে। যার নং- মোকাম সি এম এম আদালত, ঢাকা। সূত্র সিআর মামলা নং- এস/সি ২২৮৬৪/২০১৯। এছাড়াও তার আত্মসাতের নিজের হাতে লিখিত স্বীকারোক্তির অনেক ডকুমেন্ট তার অফিস ফাইলে সংরক্ষিত রয়েছে।
উলে­খ্য, এবিএম মাহবুবুর রশিদ সিও সংস্থার ফরিদপুর শাখা থেকে যে টাকা আত্মসাৎ করেছেন সেই টাকা না দেওয়ার জন্য কৌশলে উল্টো ফরিদপুর কোর্টে সিও এনজিও’র বিভিন্ন কর্মকর্তাগণের নামে মামলা করেছিলেন। সেই মামলা ফরিদপুর কোর্ট পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এর উপর তদন্তের দায়িত্ব দেয়। কোর্ট সূত্রে জানা যায়, ফরিদপুর পিবিআই-এর পরিদর্শক গৌরাঙ্গ কুমার বসু মামলা তদন্তে নেমে এবিএম মাহবুবুর রশিদের করা মামলা মিথ্যা প্রমান করে। ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার চন্ডিপুর গ্রামের মুবারক হোসেনের কন্যা সাবিনা ইয়াসমিন ২০১৩ সালের ১০ এপ্রিল সিও সংস্থায় যোগদান করে। সর্বশেষ শাখা হিসাব রক্ষক হিসেবে যশোর সদর শাখায় কর্মরত ছিল। কর্মরত থাকা অবস্থায় ফিল্ড অফিসার তানিয়া খাতুনের সাথে যোগসাজশে ফিল্ডের সদস্যদের কাছ থেকে বড় বড় লোন দেওয়ার কথা বলে একই কায়দায় আত্মসাৎ করে। যার মামলা নং-সি সিআর ৯০০/২৩, যা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আমলী সদর আদালত, ঝিনাইদহে বিচারাধীন রয়েছে। এছাড়াও মেহেরপুর সদরের আমদহ গ্রামের মৃত আবদুর রহমানের ছেলে আমিরুল ইসলাম ২০১৬ সালের ৫ মার্চ যশোরের সিও ঝিকরগাছা শাখায় যোগদান করে। সেখানে কর্মরত ফিল্ড অফিসার বাবলু সহ অন্যান্য ফিল্ড অফিসারদের সাথে যোগসাজশে আমিরুল নিজে ফিল্ডের ২ লক্ষ ৭৫ হাজার ৭৮০ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে ঝিনাইদহ আদালতে মামলা হয়। পরবর্তীতে সে জজ কোর্টের আপিলে খালাস পায়। খালাসের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিভিশন ফাইল করলে হাইকোর্ট বিচারান্তে নি¤œ বিচারিক আদালতের রায়ের সাজা বহাল রাখে। এছাড়াও ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার তালিনা গ্রামের মন্টু বিশ্বাসের কন্যা তানিয়া খাতুন ২০২১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর সিও যশোর সদর শাখায় যোগদান করে। একইভাবে তিনিও আত্মসাৎ করার পর কিছু টাকা নগদে প্রদান করে এবং বাকি টাকা দেওয়ার জন্য সময় নেয়। পরে টাকা না দেওয়ায় পর্যায়ক্রমে তার বিরুদ্ধে মামলা রুজু হয়। এছাড়াও রাজশাহীর বাঘা উপজেলার লক্ষীনগর গ্রামের বোরহান উদ্দীন মোল­ার ছেলে আজিজুল আলম সিও বারোবাজার শাখায় যোগদান করে একইভাবে ৬ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করে। তার বিরুদ্ধে ঝিনাইদহ আদালতে মামলা চলমান রয়েছে। এদিকে খুলনার খালিশপুরের শেখ মোজাম্মেল হোসেনের কন্যা মাছুদা পারভীন সিও ঝিনাইদহ সদর ১ শাখায় শাখা ব্যবস্থাপক হিসেবে কর্মরত ছিল। সে ২ জন ফিল্ড অফিসার ও ১জন শাখা হিসাবরক্ষকের সাথে যোগসাজশে অনেক টাকা আত্মসাৎ করেছে। সেই টাকা আদায়ের ব্যাপারে তার নামে মামলা প্রক্রিয়াধীন। তারা নিজেদের অপকর্ম গোপন করতে সিও সংস্থার বিরুদ্ধে ঝিনাইদহসহ বিভিন্ন দপ্তরে সাজানো অভিযোগ এনে জনমনে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। 
এ ব্যাপারে সিও সংস্থার নির্বাহী পরিচালক সামছুল আলম সাংবাদিকদের জানান, সিও সংস্থা একটি বেসরকারি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। ১৯৮৬ সালে ঝিনাইদহ পৌর এলাকার চাকলাপাড়ায় তাদের কার্যক্রম শুরু হয়। আজ অবধি দেশের ৪৩ টি জেলায় প্রায় ৫ হাজার শিক্ষিত বেকার যুবক যুবতীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ দেওয়ার পাশাপাশি সংস্থার কার্যক্রমের উপকারভোগীর সংখ্যা ৩৭ লাখের মত মানুষের মাঝে বিদ্যমান। ইতিমধ্যে দেশের সুনামধন্য বিভিন্ন বিষয়ের উপর ১০০টির অধিক প্রতিষ্ঠান সিও সংস্থাকে সম্মাননা প্রদান করেছেন। তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, সত্য সংবাদ পরিবেশনের মাধ্যমে দেশ ও জাতির কল্যাণে সকলে একত্রে ডিজিটাল ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষে প্রধানমন্ত্রীর যে ভীষণ তা বাস্তবায়নে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। তিনি আরও বলেন, সিও সংস্থায় কর্মরত সাবেক বেশ কয়েকজন অর্থ আত্মসাৎ করা কর্মীর বিরুদ্ধে সংস্থা আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে বাধ্য হয়েছে।

 

্রিন্ট

আরও সংবদ