খুলনা | শনিবার | ২১ জুন ২০২৫ | ৭ আষাঢ় ১৪৩২

বাজেট প্রণয়নে মূল্যস্ফীতিকেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে

|
১২:১৫ এ.এম | ১২ মে ২০২৪


ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে কয়েক বছর ধরে নানামুখী সংকট বিদ্যমান। বাংলাদেশও যে এর বাইরে নয়, তা বলাই বাহুল্য। তবে দেশ থেকে টাকা পাচার বেড়ে যাওয়া, বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব, মুদ্রার বিনিময় ও সুদের হার ক্রমাগত বৃদ্ধি, সর্বক্ষেত্রে অপচয়, অদক্ষতা ও সুশাসনের যে অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে, তাতে চলমান অর্থনৈতিক সংকটের জন্য শুধু ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতাকে দায়ী করা চলে না, অভ্যন্তরীণ কারণও দায়ী। গত রোববার বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এবং এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম আয়োজিত ‘নতুন সরকার, জাতীয় বাজেট ও জনমানুষের প্রত্যাশা’ শীর্ষক সংলাপে বক্তাদের কাছ থেকেও এমন প্রতিক্রিয়া প্রকাশ পেয়েছে। তাদের মতে, এমন বাস্তবতায় সরকার ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছে। ফলে বাজেট বাস্তবায়নে অপচয় রোধ, অনিয়ম ও দুর্নীতি বন্ধ এবং সুশাসন নিশ্চিতে গুরুত্ব দিতে হবে। পাশাপাশি ব্যাংক খাত সংস্কারে নিতে হবে বড় ধরণের উদ্যোগ। 
চলতি মেয়াদে সরকারের এটাই প্রথম বাজেট। সংলাপে অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক জটিল প্রেক্ষাপটের মধ্যে এ বছরের বাজেটের সঙ্গে আরও কয়েকটি বিষয় জড়িয়ে রয়েছে। যেমন, এলডিসি (স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা) থেকে উত্তরণ এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়ন। অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা শেষের দিকে, ফলে নতুন প্রেক্ষিত পরিকল্পনা হচ্ছে। পাশাপাশি দেশের কিছু প্রত্যাশাও আছে। এ মুহূর্তে ভূ-রাজনৈতিক যে কঠিন পরিস্থিতি বিরাজ করছে, তাতে এ কাজগুলো সম্পাদন করা সহজ হবে না। এটা ঠিক, গত বছরও উচ্চমূল্যস্ফীতির মতো সমস্যাকে আমলে নিয়েই বাজেট প্রণয়ন হয়। তবে এবার ট্রাংগুলেশন অব প্রবলেমস অর্থাৎ তিনটি সমস্যা একত্রিত হয়েছে। যেমন, এখনো মূল্যস্ফীতির মতো সমস্যা বর্তমান, এর সঙ্গে যোগ হয়েছে দেশি-বিদেশি ঋণ ঝুঁকি। কারণ, সরকার বিদেশ থেকে যে টাকা নেয়, এর দ্বিগুণ নেয় অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে। এছাড়া জিডিপি প্রবৃদ্ধির যে ধারা ছিল, সা¤প্রতিককালে তা হ্রাস পেতেই দেখা যাচ্ছে। এছাড়াও কর আহরণ ও সরকারের খরচ করার ক্ষমতা সংকুচিত হয়েছে, যা আগামী বাজেটকে নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি করবে।
আমরা মনে করি, ট্রাংগুলেশন অব প্রবলেমসের অন্যতম মূল্যস্ফীতিকে গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নিয়ে তা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। ভুলে গেলে চলবে না, গ্রাম হোক কিংবা শহর, মূল্যস্ফীতি সব জায়গার মানুষকেই আঘাত করছে। এছাড়া বাস্তব পরিস্থিতিতে দেশি-বিদেশি ঋণ গ্রহণেও রাশ টানতে হবে। কোনো প্রকল্পে অর্থ ব্যয়ের আগে তা জনগুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় কিনা, তা বিবেচনা করতে হবে। পাশাপাশি কর আহরণের দিকে মনোযোগ বাড়াতে হবে। ঋণখেলাপি ও অর্থ পাচারকারীদের বিরুদ্ধেও নিতে হবে কঠোর পদক্ষেপ। একইসঙ্গে বাজেটের সফল বাস্তবায়নে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধিতে মনোযোগ বাড়াতে হবে। রেমিট্যান্সের প্রবাহ বৃদ্ধিতে যেমন জোর দিতে হবে, তেমনি আমদানিতেও কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ প্রয়োজন। দৃঢ় অর্থনীতি ও বাজেটের সফল বাস্তবায়নে প্রতিটি ক্ষেত্রে অপচয়, অদক্ষতা ও সুশাসনের যে অভাব রয়েছে, তা নিরসনে সরকার কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে, এটাই প্রত্যাশা।

্রিন্ট

আরও সংবদ