খুলনা | বৃহস্পতিবার | ২১ নভেম্বর ২০২৪ | ৭ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

যুক্তরাজ্য-বাংলাদেশ মধ্যকার সমঝোতা স্বাক্ষর : অবৈধদের তালিকায় বাংলাদেশ শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে নেই : হাই কমিশনার

অবৈধ বাংলাদেশি ফেরত পাঠাতে ক্রাকডাউন ব্রিটিশ সরকারের

খবর প্রতিবেদন |
০১:৪২ এ.এম | ১৮ মে ২০২৪


ব্রিটেনে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়ে ব্যর্থ হওয়া বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠানোর জন্য বাংলাদেশ সরকারের সাথে ব্রিটিশ সরকারের একটি সমঝোতা হয়েছে। যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশ ফাস্ট ট্র্যাক রিটার্ন চুক্তির আওতায় এই বাংলাদেশি নাগরিকদের দেশে ফেরত পাঠানো হবে।  এ সংক্রান্ত এক বিবৃতিতে ব্রিটিশ সরকারের ইলিগ্যাল মাইগ্রেশন মিনিস্টার মাইকেল টমলিনসন বলেন, বাংলাদেশের সাথে ব্রিটেনের দীর্ঘ অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক বোঝাপড়া রয়েছে। এসবের ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্যই বাংলাদেশ ব্যর্থ এ্যাসাইলাম আবেদনকারীদের ফেরত নেবে।
অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসীদের ফেরত পাঠানো সহজ করতে ১৬ মে বাংলাদেশের সঙ্গে এ নতুন চুক্তি করে যুক্তরাজ্য। যুক্তরাজ্যের অবৈধ অভিবাসন বিষয়ক মন্ত্রী মাইকেল টমলিনসন বাংলাদেশের সঙ্গে একটি ফাস্ট-ট্র্যাক রিটার্ন চুক্তি স্বাক্ষর করেন। লন্ডনে স্বরাষ্ট্র বিষয়ক প্রথম যৌথ ইউকে-বাংলাদেশ ওয়ার্কিং গ্র“পের উভয় পক্ষ রিটার্ন চুক্তির বিষয়ে সম্মত হয়। বাংলাদেশের পক্ষে বৈঠকটি নেতৃত্ব দেন ব্রিটেনে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাই কমিশনার সাইদা মুনা তাসনিম। বৈঠকে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রæপের বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিরাপত্তা সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব খায়রুল কবির মেনন অংশ নেন। অন্যদিকে যুক্তরাজ্যের পক্ষ থেকে হোম অফিসের ইমিগ্রেশন এনফোর্সমেন্টের মহাপরিচালক বাস জাভিদ নেতৃত্ব দেন।
বৈঠকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ পুলিশ ও স্পেশাল ব্রাঞ্চের ঊর্ধ্বতন প্রতিনিধি এবং লন্ডনের বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
উভয় দেশ পারস্পরিক অংশীদারিত্বের পাশাপাশি অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক বিষয়ে সহযোগিতার ব্যাপারে জোরালো অঙ্গীকার করে। ব্রিটিশ সরকারের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, স্টুডেন্ট ও অন্যান্য ভিসায় আসা ১১ হাজার বাংলাদেশি ব্রিটেনে প্রবেশের এক বছরের মধ্যে ব্রিটেনে স্থায়ীভাবে থাকার জন্য রাজনৈতিক আশ্রয় দাবি করেন। এরমধ্যে মাত্র ৫ শতাংশের আবেদন গ্রহণযোগ্য হয়েছে। বাকি ১০ হাজারের বেশি বাংলাদেশির আবেদন খারিজ করে দিয়েছে যুক্তরাজ্যের অভিবাসন কর্তৃপক্ষ। আবেদন খারিজ হওয়া এসব আশ্রয়প্রার্থীসহ দীর্ঘদিন ধরে ব্রিটেনে অবৈধ ভাবে আছেন এমন বাংলাদেশি অভিবাসীদের ধরে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাবে যুক্তরাজ্য। ২০২৩ সালের মার্চ পর্যন্ত রেকর্ড ২১ হাজার ৫২৫ জন ভিসাধারী যুক্তরাজ্যে আশ্রয়ের আবেদন করেন যা আগের বছরের তুলনায় ১৫৪ শতাংশ বেশি। 
এতে আরও বলা হয়, ভিসা নিয়ে যুক্তরাজ্যে প্রবেশের পর আশ্রয় প্রার্থীর শীর্ষে রয়েছে আফগানিস্তান, পাকিস্তান, এরপরের অবস্থানে আছে বাংলাদেশ, ভারত ও নাইজেরিয়া। গত বছর যুক্তরাজ্য থেকে বিভিন্ন দেশের ২৬ হাজার নাগরিককে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। 
যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনিম বলেন, বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরেই ব্রিটেনে থাকা অবৈধ অভিবাসীদের চিহ্নিত করে তাদের ফেরত পাঠানোর বিষয়ে ব্রিটিশ সরকারকে সহযোগিতা করে আসছে। এ কারণে ব্রিটেনে বর্তমানে অবৈধ বাংলাদেশিদের সংখ্যা অনেক কম। খুশির খবর হচ্ছে ব্রিটেনে অবৈধদের তালিকায় বাংলাদেশ শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে নেই। ব্রেক্সিটের পরে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বের হওয়ায় আবারো নতুন করে ব্রিটেনের সাথে এ বিষয়ে চুক্তি সম্পন্ন হলো।
এদিকে ব্রিটেনে অবৈধ অভিবাসী ধরার জন্য হোম অফিস প্রতিদিন রেইড দিচ্ছে। অবৈধভাবে ব্রিটেনে বসবাসকারীদের ঠেকাতে তাদের আটক করে রোয়ান্ডায় পাঠানোর আইন পাশ হয়েছে পার্লামেন্টে। এতে অবৈধ অভিবাসীদের মধ্যে আতঙ্ক কাজ করছে। কারণ জনবহুল রাস্তায় ফেসিয়াল রিকগনিশন ক্যামেরা বসিয়ে ধরা হচ্ছে তাদের। এছাড়া বাসা বাড়ি ছাড়া বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে রেইড দিয়ে অবৈধ অভিবাসীদের আটক বেড়ে গিয়েছে।
১০ হাজারের বেশি বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠাবে যুক্তরাজ্য : যুক্তরাজ্যে আশ্রয়ের আবেদনকারী বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য বড় রকমের দুঃসংবাদ দিয়েছে ইউরোপের এই দেশটির সরকার। যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশ ফাস্ট ট্র্যাক রিটার্ন চুক্তিতে সম্মত হয়েছে এবং এই চুক্তির আওতায় অ্যাসাইলাম আবেদন প্রত্যাখান হওয়া বাংলাদেশি নাগরিকদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হবে। আর তাদের সংখ্যা হতে পারে ১০ হাজারেরও বেশি। বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অ্যাসাইলাম আবেদন করে ব্যর্থ হওয়া আশ্রয় প্রার্থীদের ফাস্ট-ট্র্যাক রিটার্ন চুক্তির অধীনে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হবে। মূলত ভিসা নিয়ে যুক্তরাজ্যে প্রবেশের পর দেশটির ভিসা ব্যবস্থার অপব্যবহারকারীদের মধ্যে বাংলাদেশিরা শীর্ষস্থানীয় পর্যায়ে রয়েছে।
দ্য টেলিগ্রাফ বলছে, গত বছর প্রায় ১১ হাজার বাংলাদেশি ভিসা নিয়ে ব্রিটেনে প্রবেশ করেছেন শুধুমাত্র স্থায়ীভাবে দেশটিতে থাকার প্রয়াসে। আর দেশটিতে প্রবেশের পর আশ্রয়ের আবেদন জমা দিয়েছেন তারা।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, অভিবাসীরা গত বছরের মার্চ থেকে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী, কর্মী বা ভিজিটর ভিসায় ব্রিটেনে এসে রাজনৈতিক আশ্রয় দাবি করেছেন। মূলত ব্রিটেনে প্রবেশের ‘পেছনের দরজা’ হিসেবে কাজে লাগানোর প্রয়াসে এসব ভিসা ব্যবহার করেছেন তারা। তবে দেশটিতে বাংলাদেশিদের প্রাথমিক আশ্রয় আবেদনের মাত্র ৫ শতাংশই সফল হয়েছে। অর্থাৎ ১০ হাজারের বেশি বাংলাদেশিকে যুক্তরাজ্য থেকে ফেরত পাঠানো হবে।
দ্য টেলিগ্রাফ বলছে, ভিসা একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য (অন্যান্য দেশের মানুষকে) যুক্তরাজ্যে থাকার অনুমতি দেয়, সাধারণত সেটা মাত্র কয়েক মাস হতে পারে। কিন্তু যুক্তরাজ্যে প্রবেশের পর কেউ আশ্রয়ের আবেদন বা অ্যাসাইলাম দাবি করলে তার দেশটিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য থাকার সম্ভাবনা বেশি। কারণ কেউ এই ধরনের আবেদন করলে তাদের নির্বাসনে পাঠানোর ক্ষেত্রে দেশটির হোম অফিস মানবাধিকার আইনসহ বিশাল বাধার সম্মুখীন হয়।
গত মাসে প্রকাশ্যে আসা অফিসিয়াল ডকুমেন্টস অনুযায়ী, ২০২৩ সালের মার্চ পর্যন্ত রেকর্ড ২১ হাজার ৫২৫ জন ভিসাধারী যুক্তরাজ্যে আশ্রয়ের আবেদন করেছেন। যা আগের বছরের তুলনায় ১৫৪ শতাংশ বেশি।
এর মানে যুক্তরাজ্যের ভিসা নিয়ে প্রবেশকারী প্রতি ১৪০ জনের মধ্যে একজন দেশটিতে আশ্রয়ের আবেদন করেছে।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, ভিসা নিয়ে যুক্তরাজ্যে প্রবেশের পর আশ্রয় আবেদনকারীদের মধ্যে সবার ওপরে রয়েছে পাকিস্তানিরা। পাকিস্তানের প্রায় ১৭ হাজার ৪০০ জন নাগরিক দেশটিতে আশ্রয়ের আবেদন করেছেন। এরপরই রয়েছে বাংলাদেশ।
 

্রিন্ট

আরও সংবদ