খুলনা | শুক্রবার | ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ | ১ ফাল্গুন ১৪৩১

সংসদে বাজেট প্রস্তাব : প্রশাসনের দক্ষতা বাড়াতে হবে

|
১২:০৭ এ.এম | ০৯ জুন ২০২৪


‘টেকসই উন্নয়নের পরিক্রমায় স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্নযাত্রা’ শিরোনামে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট জাতীয় সংসদে প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। সাত লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেটে সংকট মোচনে উদ্ভাবনী আর সাহসী পদক্ষেপ কিছু আছে কি নেই তা নিয়ে নানা মন্তব্য এরই মধ্যে গণমাধ্যমে এসেছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, সংকটের এই সময়ে গণমুখী বাজেট হয়েছে। বিএনপি মহাসচিব তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, ‘পুরো বাজেট মেগা প্রজেক্ট, মেগা চুরি ও মেগা দুর্নীতির জন্য করা হয়েছে।
সুতরাং এ বাজেট তথাকথিত গণবিরোধী বাজেটই শুধু নয়, এটি বাংলাদেশ বিরোধী বাজেট।’ জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান মনে করছেন, এই বাজেটের পর বাংলাদেশ একটি বড় ধরণের অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে পড়বে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের টানা চতুর্থ মেয়াদের এটা ছিল প্রথম বাজেট। অর্থমন্ত্রী হিসেবে আবুল হাসান মাহমুদ আলীরও এটা প্রথম বাজেট উত্থাপন।
বাজেট পেশের পর অর্থবিল-২০২৪ উত্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী। আগামী ২৯ জুন এই বিল পাশ হবে। আর বাজেট পাশ হবে ৩০ জুন।
নতুন অর্থমন্ত্রী এমন এক সময়ে বাজেট পেশ করলেন, যখন ডলার সংকটে রিজার্ভ ন্যূনতম পর্যায়ে।
আছে উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপ। অন্যদিকে জনগণের প্রত্যাশা অনেক বেশি। অর্থনীতির সব সূচক দুর্বল। সংকটে দেশের অর্থনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্য। অর্থনীতি বিশ্লেষকরাও এই বাজেটকে নানাভাবে বিশ্লেষণ করেছেন।
সাত লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার যে বাজেট জাতীয় সংসদে উত্থাপন করা হয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে, রাজস্ব বাড়ানোর চাপ পড়বে জনগণের ঘাড়ে। জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়বে। সংকটে পড়বে শিল্প ও ব্যবসা, এমন আশঙ্কা বিশ্লেষকদের। তাঁরা বলছেন, এবারের বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হলেও কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে তার কোনো দিকনির্দেশনা নেই। এ বছর জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬.৭৫ শতাংশ আশা করা হচ্ছে। আবার কিছু ইতিবাচক দিকও দেখছেন তাঁরা। যেমন মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও স্থানীয় শিল্পের বিকাশের কথা বলা হয়েছে। তাঁরা মনে করছেন, বাজেটে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির দিকনির্দেশনা থাকা উচিত ছিল।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটের আকার গতবারের চেয়ে মাত্র ৪.৫ শতাংশ বেশি। অর্থাৎ বাজেটের আকার খুব বেশি বাড়েনি। এটাকেও ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা। তবে তাঁরা মনে করছেন, ব্যয়ে আরো সাশ্রয়ী ও সতর্ক হতে হবে। কারণ এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা গত অর্থবছরের তুলনায় উচ্চাভিলাষী। তাদের মতে, সরকারের মূল চ্যালেঞ্জ তিনটি মূল্যস্ফীতি কমানো, বৈদেশিক মুদ্রার সংকট ও জ্বালানি। উৎপাদন বাড়াতে জোর দিতে হবে। কর্মংসংস্থান না হলে মানুষের জীবন আরো দুর্বিষহ হয়ে যাবে।  
বাজেটে আয়কর কাঠামোতে পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে। এটাকে ইতিবাচক পদক্ষেপ বলে মনে করছেন অর্থনীতি বিশ্লেষকরা। নিত্যপ্রয়োজনীয় ৩০ পণ্যের শুল্ক কমানোকেও ইতিবাচক পদক্ষেপ বলে মনে করছেন তাঁরা। স্বাস্থ্য খাতে ঝুঁঁকি মোকাবেলায় ১০০ কোটি টাকা বিশেষ বরাদ্দ রাখা হয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ১০ হাজার কোটি টাকা। সাধারণ ক্ষমার আওতায় ১৫ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা বা অপ্রদর্শিত আয় বৈধ করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। অনেক অর্থনীতিবিদ মনে করেন, কালো টাকাকে সাদা করার এমন সুযোগ দেওয়ার নিশ্চয়তা প্রদানের মাধ্যমে দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদ অর্জন করতে যেন সরকারিভাবে উৎসাহিত করা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের অভিমত, আমাদের বাজেট বাস্তবায়ন খুবই দুর্বল। বিশেষ করে এডিপি প্রকল্পগুলো একদমই খারাপ। বাকি জায়গাগুলোতে শুধু অর্থের অপচয় হচ্ছে। তাঁরা মনে করেন, প্রশাসনের সামর্থ্য, দক্ষতা বাড়াতে হবে। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে। সরকার দক্ষতার সঙ্গে বাজেট বাস্তবায়ন করবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

্রিন্ট

আরও সংবদ