খুলনা | বুধবার | ২৩ অক্টোবর ২০২৪ | ৭ কার্তিক ১৪৩১

২৪ হাজারের বেশি গ্রাহক বিদ্যুৎবিহীন : বন্যায় বিদ্যুৎ বিভাগের ক্ষতি ১ কোটি ৬৭ লাখ ৫৩ হাজার টাকা

উজানের ঢল আর টানা ভারী বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত সিলেট

খবর প্রতিবেদন |
০১:৩০ এ.এম | ২১ জুন ২০২৪


গত কয়েকদিন টানা ভারি বর্ষণের পর গত রাত থেকে বৃষ্টিপাত কমায় সুরমা ও কুশিয়ারাসহ সিলেটের সবকটি নদীর পানি কিছুটা কমেছে। তবে নদীর পানি কমলেও কমেনি বানভাসী মানুষের দুর্ভোগ। এখনো সিলেট নগর ও জেলার ১৩টি উপজেলায় প্রায় সোয়া ৮ লাখ মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় ভোগান্তিতে রয়েছেন। জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী বন্যার্তদের জন্য জেলায় ৬৫৬টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ২০ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। এখনো সিলেট নগরের সুরমা তীরবর্তী এলাকার অর্ধলাখ মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। অনেকে বাসা-বাড়ি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেছেন। 
উজানে ভারতের মেঘালয়ের পাহাড়ি এলাকা ও বিশ্বের সবচেয়ে বৃষ্টিবহুল অঞ্চল হিসেবে পরিচিত চেরাপুঞ্জিতে ভারি বৃষ্টিপাত হলে সিলেটের সুরমা, লোভা, সারি, গোয়াইন, পিয়াইন, ধলাই ও সারিগোয়াইন নদীতে ঢল নামে। অনেক সময় টানা ভারি বৃষ্টিপাত হলে ঢলের তোড়ে উত্তর সিলেটের সীমান্তর্বর্তী গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কোম্পানীগঞ্জ ও কানাইঘাট উপজেলায় আকস্মিক বন্যা দেখা দেয়। সুরমার পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হলে ঢুকে পড়ে সিলেট নগরেও। আর ভারতের আসামে ভারি বৃষ্টিপাত হলে পানি বাড়তে থাকে কুশিয়ারায়। কুশিয়ারার পানি ভেড়িবাঁধ ভেঙে প্রবেশ করে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় জকিগঞ্জ, বালাগঞ্জ, বিশ্বনাথ, ওসমানীনগর, বিয়ানীবাজার, গোলাপগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ ও দক্ষিণ সুরমায়। 
গত কয়েকদিন ভারতের মেঘালয় ও আসামে টানা ভারি বৃষ্টিপাত হয়। এতে সিলেট নগরসহ পুরো জেলাজুড়ে বন্যা দেখা দেয়। গত ২৪ ঘণ্টায় কিছুটা কমলেও এখনো জেলার প্রধান নদীগুলোর প্রায় সবকটিই বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে জেলার বন্যা আক্রান্ত উঁচু অঞ্চলের দিকে পানি কিছুটা কমলেও নিম্নাঞ্চলের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। 
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, সিলেট নগর ও জেলার ১৩টি উপজেলা মিলে পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন ৮ লাখ ২৫ হাজার ২৫৬ জন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বন্যা আক্রান্ত ওসমানীনগর উপজেলায়। ওই উপজেলায় পানিবন্দি রয়েছেন ১ লাখ ৮৫ হাজার জন। এর পরেই গোয়াইনঘাটে বন্যা আক্রান্ত রয়েছেন ১ লাখ ২৩ হাজার ৮শ’। বন্যার্তদের নিরাপদ আশ্রয়ে আনার জন্য সিলেট নগরে ৮০টি ও জেলার ১৩টি উপজেলায় ৫৭৬টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। নগরের আশ্রয়কেন্দ্রে আড়াই হাজার এবং উপজেলাগুলোতে ১৭ হাজার ৪৪৯ জন বন্যার্ত আশ্রয় নিয়েছেন। 
সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান জানান, বন্যা আক্রান্ত এলাকা ও আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে সরকারের পক্ষ থেকে ত্রাণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। আবহাওয়ার পূর্বাভাস উলে­খ করে তিনি জানান, আগামী তিনদিন ভারি বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আর এই পূর্বাভাস সত্যি হলে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। 
আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বৃহস্পতিবার থেকে আগামী ৩ দিন সিলেটে ভারি বৃষ্টিপাতের আশঙ্কার কথা বলা হলেও গত রাত থেকে সিলেটে বৃষ্টিপাত অনেকটা কমেছে। থেমে থেমে হালকা বৃষ্টি হলেও টানা ভারি বর্ষণ হয়নি। 
জেলা প্রশাসক আরও জানান, সিলেট নগরীর বরইকান্দিস্থ বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রটি বন্যার ঝুঁকিতে পড়েছিল। সুরমা নদীর পানি তীর উপচে ওই এলাকায় প্রবেশ করায় উপকেন্দ্রটি ঝুঁকিতে পড়ে। তবে গত মঙ্গলবার রাত থেকে সেনাবাহিনীর সদস্যরা উপকেন্দ্রটি বন্যামুক্ত রাখতে কাজ শুরু করেন। বর্তমানে বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রটি বন্যামুক্ত রয়েছে।
নদীর পানি বিপদসীমার উপরে:  গত ২৪ ঘণ্টায় কিছুটা কমলেও সিলেটের প্রায় সবকটি নদীর পানি এখনো বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ৮০ সেন্টিমিটার ও সিলেট পয়েন্টে ২৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কুশিয়ারার পানি আমলসীদে ৮৭ সেন্টিমিটার, ফেঞ্চুগঞ্জে ১০১ সেন্টিমিটার, শেওলায় ৪২ সেন্টিমিটার ও শেরপুরে বিপদসীমার ১৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। 
২৪ হাজারের বেশি গ্রাহক বিদ্যুৎবিহীন : সিলেটে বন্যায় বিদ্যুৎ বিভাগের ক্ষতি হয়েছে ১ কোটি ৬৭ লাখ ৫৩ হাজার টাকা। বিভাগে চলমান বৃষ্টিপাত ও উজান হতে বয়ে আসা পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো) ও বাংলাদেশ পল­ী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) সিলেট জোনের বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র, লাইন, ট্রান্সফরমার ও বৈদ্যুতিক পোলের ক্ষয়ক্ষতির জন্য বিদ্যুৎ বিভাগ দুঃখ প্রকাশ করেছে।
জানা গেছে, বিতরণ অঞ্চল, বিউবো, সিলেটের অধীনে ৩৩/১১ কেভি মোট ২১টি উপকেন্দ্রের মধ্যে সকল উপকেন্দ্রই বর্তমানে চালু রয়েছে, যার মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ সচল রয়েছে। বিতরণ অঞ্চল, বিউবো, সিলেট বিভিন্ন শ্রেণির মোট গ্রাহক সংখ্যা ৫ লাখ ৬১ হাজার ৬৯ জন। সর্বোচ্চ বিদ্যুতের চাহিদা ২২৫ মেগাওয়াট। বিতরণ অঞ্চল, বিউবো, সিলেট এলাকায় ৯টি ১৩২/৩৩ কেডি গ্রিড উপকেন্দ্রের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ দেওয়া হয়। সিলেট বিভাগে চলমান বৃষ্টিপাত ও উজান হতে বয়ে আসা পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যার প্রভাবে ৩৩/১১ কেভি ২১টি উপকেন্দ্রের মধ্যে ৭টি উপকেন্দ্রের অভ্যন্তর ইয়ার্ডে পানি প্রবেশ করলেও নিরাপদ দূরত্বে থাকায় উপকেন্দ্রগুলো চালু রয়েছে। সিলেট জোনে বন্যায় বিদ্যুৎ বিভাগের প্রাথমিক ভাবে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৯৪ লাখ ৪০ হাজার টাকা। বিতরণ জোনের আওতাধীন সকল এলাকাই কম-বেশি বন্যা কবলিত হওয়ায় বন্যার পানি কমার পর প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতির সঠিক তথ্য নিরূপন করা সম্ভব হবে।
আর বিতরণ জোনের আওতাধীন সকল এলাকাই কম- বেশি বন্যা কবলিত হওয়ায় বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনা রোধে নিরাপত্তার স্বার্থে অনেক জায়গায় ট্রান্সফরমারের ফিউজ কেটে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে রাখা হয়েছে। এছাড়া, অনেক বসতবাড়ি পানিতে নিমজ্জিত হওয়ায় অত্যধিক বৃদ্ধি পেয়ে মিটার পর্যন্ত চলে আসায় বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনা রোধে নিরাপত্তার স্বার্থে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে রাখা হয়েছে। এসকল কারণে বিতরণ জোনের প্রায় ১০ থেকে ১২ হাজার গ্রাহক বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় রয়েছেন। বন্যার পানি কমলে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করার কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। বিতরণ অঞ্চল, বাবিউবো, সিলেট অঞ্চলের সকল কর্মকর্তা/কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
আর আরইবি’র বিতরণ ব্যবস্থার সিলেট অঞ্চলে সমিতির সংখ্যা-ছয়টি (সিলেট-১, সিলেট-২, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও কিশোরগঞ্জ)।  এখানে বিদ্যুৎবিহীন গ্রাহক সংখ্যা ১২ হাজার ১৪৩। মোট আর্থিক ক্ষতি পরিমাণ ৭৩ লাখ ১৩ হাজার টাকা।
বর্তমানে কর্মকর্তা/কর্মচারীরা যার যার অবস্থান হতে নিবিড় মনিটরিং ও পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা সচল রাখার কাজে নিয়োজিত রয়েছেন। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করা হচ্ছে।
বিদ্যুৎ বিভাগ সার্বিকভাবে সিলেটের বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে এবং সদা সতর্ক রয়েছে। কোথাও ছেড়া বৈদ্যুতিক তার দেখলে নিকটস্থ বিদ্যুৎ অফিসে অবহিত করার জন্য বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়েছে।

্রিন্ট

আরও সংবদ