খুলনা | সোমবার | ১২ মে ২০২৫ | ২৯ বৈশাখ ১৪৩২

কাঁচা মরিচের কেজি ৩২০ টাকা : সবজির দামও চড়া

বৃষ্টির অজুহাত, অস্থির কাঁচাবাজার

খবর ডেস্ক |
১২:৩৩ এ.এম | ০৬ জুলাই ২০২৪


কাঁচা বাজারে দীর্ঘদিন ধরেই চলছে অস্থিরতা, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম আকাশচুম্বী। কখনও দাম সামান্য কমলেও কয়েক দিনের মধ্যেই আবারও বেড়ে যায়। উচ্চ মূল্যের বাজারে নাকাল অবস্থা সাধারণ মানুষের, প্রতিনিয়তই বাজারে এসে হিমশিম খেতে হয়। 
কাঁচা মরিচের বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। সপ্তাহ ব্যবধানে কেজিতে ১০০ থেকে ১২০ টাকা বেড়ে প্রকারভেদে ২৮০ থেকে ৩২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে কাঁচা মরিচ। এছাড়া সপ্তাহরে ব্যবধানে প্রতিটি সবজিতে বেড়েছে ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত। দাম বেড়েছে মাছ ও পেঁয়াজেরও।
ক্রেতাদের অভিযোগ, উচ্চমূল্যের কারণে অনেকেই চাহিদা মতো প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে পারছেন না। আর চড়া দামের জন্য বিক্রেতারা দুষছেন বৃষ্টিকে। তারা বলছেন, চাহিদা মতো কাঁচা শাকসবজি পাওয়া যাচ্ছে না। তাই বাড়তি দামে এনে বিক্রি করতে হচ্ছে।
শুক্রবার নগরীর বিভিন্ন কাঁচাবাজার সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, শাক-সবজিসহ আলু-পেঁয়াজ নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যই বিক্রি হচ্ছে উচ্চ দামে। এতে বাজার করতে আসা ক্রেতাদের মধ্যে দেখা গেলো অসন্তোষ। তারা বলছেন, বাজারে সবজিসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাড়ছে সব ধরনের শাকের দাম। খুব বেশি দিন আগের কথা নয়, বছরখানেক আগেও ৫ টাকা থেকে ১০ টাকার মধ্যে সব ধরনের শাকের আঁটি পাওয়া যেতো। কিন্তু এখন তা পাওয়া অসম্ভব প্রায়। 
শুক্রবার বাজারে প্রতি আঁটি লাউ শাক বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা দরে। এছাড়াও পুঁই শাক ৫০ টাকা, ডাঁটা শাক ২০ টাকা, লাল শাক ৩০ টাকা, পাট শাক ৩০ টাকা, কচু শাক ২০ টাকা, শাপলা ২০ টাকা, কলমি শাক ১৫ টাকা ও ডাঁটা ৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।  
শাকের চড়া দাম প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিক্রেতা সানোয়ার হোসেন বলেন, চারদিকে পানি, শাক ঠিকমতো আসছে না। ধরেন আমার দরকার ৫০ আঁটি, কিন্তু পাচ্ছি ২০ আঁটি। এ কারণেই দাম বেশি। দাম আরও বেশি ছিল, আজ কিছুটা কম। 
আরেক শাক বিক্রেতা আরমান হোসেন বলেন, ‘এখন বর্ষাকাল, সবদিকে পানি। আড়তে ঠিকমতো মাল আসে না। তাই দাম বেশি।’
এ সময় শাক কিনতে আসা ক্রেতা হাবিবুর রহমান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তাদের (বিক্রেতা) কথা শুনলে মনে হয় আমাদের দেশে সারা বছরই প্রাকৃতিক দুর্যোগ। হয় বন্যা, না হয় বৃষ্টি কিংবা গরম; কোনও না কোনও অজুহাত থাকেই। দাম বেশি কেন জানতে চাইলে তারা মুখস্থ একটা কথা বলে দেয়। এরা আসলে যাচ্ছেতাই দাম রেখে দেয়।
বেড়েছে সবজির দামও : শুধু শাক নয়, আজ বাজারে প্রায় সব ধরনের সবজিই বিক্রি হচ্ছে উচ্চমূল্যে। ভারতীয় টমেটো বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১৮০ টাকায়, দেশি টমেটো ১৪০ টাকা, দেশি গাজর ১০০ টাকা, চায়না গাজর ১৭০ টাকা, লম্বা বেগুন ১২০ টাকা, সাদা গোল বেগুন ৮০ থেকে ১০০ টাকা, কালো গোল বেগুন ১২০ টাকা, শসা ৮০-১২০ টাকা, উচ্ছে ১০০ টাকা, করলা ১০০ টাকা, কাঁকরোল ৮০টাকা, পেঁপে ৬০ টাকা, ঢেঁড়স  ৮০ টাকা, পটল ৫০-৮০ টাকা,  চিচিঙ্গা ৬০-৮০ টাকা, ধুন্দল ৬০ টাকা, ঝিঙা ৭০ টাকা, বরবটি ১২০ টাকা, কচুর লতি ১০০ টাকা, কচুরমুখী ১০০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৪০ টাকা, কাঁচা মরিচ ২৬০ টাকা এবং ধনেপাতা ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর মানভেদে প্রতিটি লাউ ৭০ টাকা, চাল কুমড়া ৬০ টাকা, ফুলকপি ৮০ টাকা এবং বাঁধাকপি ৬০ টাকা করে পিস বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি হালি কাঁচা কলা ৪০ টাকা এবং লেবুর হালি বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা করে।
এক্ষেত্রে দেখা যায়, এক সপ্তাহের ব্যবধানে বিভিন্ন সবজির দাম বেড়েছে ১০ টাকা থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত। দেশি ও চায়না গাজরের দাম বেড়েছে যথাক্রমে ২০ ও ৩০ টাকা। লম্বা বেগুন, সাদা গোল বেগুন ও কালো গোল বেগুনের দাম বেড়েছে যথাক্রমে ৪০, ২০ ও ৩০ টাকা করে। বরবটির দাম বেড়েছে ৪০ টাকা, উচ্ছে, করলা ও কচুর লতির দাম বেড়েছে ২০ টাকা করে এবং ঢেঁড়স ও চিচিঙ্গার দাম বেড়েছে ৩০ টাকা। কাঁচা মরিচের দাম বেড়েছে ২০ টাকা। এছাড়াও ধুন্দল, মিষ্টি কুমড়া, কাঁচা কলার মতো সবজির দামও বেড়েছে। ভারতীয় টমেটোর দাম কমেছে ৬০ টাকা। এছাড়া অন্যান্য সবজির দাম রয়েছে প্রায় আগের মতোই।সবজির দাম বেড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে বিক্রেতা মো. শাহ আলম বলেন, বন্যার কারণে অনেক সবজির দাম বেড়ে গিয়েছে। পানিতে অনেক সবজি আছে নষ্ট হয়ে যায়। এর মধ্যে আছে বেগুন, কাঁচা মরিচ, ফুলকপি ইত্যাদি। এগুলো পানি পেলেই পচে যায়। তাই এগুলোর দাম বেড়েছে।  
পেঁয়াজের দাম শতক ছাড়িয়েছে : বাজারে সব ধরনের পেঁয়াজের দাম ১০০ ছাড়িয়েছে। আকার ও মানভেদে ক্রস জাতের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১০০ থেকে ১১০ টাকায়। এর মধ্যে ছোট সাইজের পেঁয়াজ ১০০ টাকা এবং বড় সাইজের পেঁয়াজ ১১০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। আর দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকা করে। এক্ষেত্রে দেখা যায়, সব ধরনের পেঁয়াজের দাম বেড়েছে প্রতি কেজিতে ১০ টাকা করে। এছাড়া আজ লাল আলু ৬০ টাকা, সাদা আলু ৬০ টাকা, বগুড়ার আলু ৮০ টাকা, দেশি রসুন ২০০ টাকা, চায়না রসুন ১৮০ টাকা, চায়না আদা ৩০০ টাকা এবং ভারতীয় আদা ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। সব ধরনের আলুর দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। আর দেশি ও চায়না রসুনের দাম কমেছে যথাক্রমে ২০ থেকে ৪০ টাকা। আর আদার দাম রয়েছে অপরিবর্তিত।
এদিকে শুক্রবার বাজারে ইলিশ মাছ ওজন অনুযায়ী ১৫০০ থেকে ২২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩৬০-৬০০ টাকা কেজি দরে, কাতল মাছ ৪০০-৫৫০ টাকা, কালিবাউশ ৪০০-৮০০ টাকা, চিংড়ি মাছ ১০০০-১৫০০ টাকা, কাঁচকি মাছ ৫০০ টাকা, কৈ মাছ ২২০-৩০০ টাকা, পাবদা মাছ ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, শিং মাছ ৫০০ থেকে ১২০০ টাকা, টেংরা মাছ ৬০০ টাকা, বেলে মাছ ৭০০-১২০০ টাকা, বোয়াল মাছ ৮০০-১০০০ টাকা এবং রূপচাঁদা মাছ ৮০০ থেকে ১৪০০ টাকা । 
এছাড়া শুক্রবার বেশির ভাগ বাজারে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকা কেজি দরে। এছাড়া খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১১৫০ টাকা কেজি দরে। আর বিভিন্ন দোকানে মুরগির লাল ডিম ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা ডজন এবং সাদা ডিম ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকা ডজন বিক্রি হচ্ছে।
অন্যদিকে বাজারে সব ধরনের মুরগির মাংসের দামই কমেছে। শুক্রবার ওজন অনুযায়ী ব্রয়লার মুরগি ১৬০ থেকে ১৭৫ টাকা, কক মুরগি ২৮০-২৯০ টাকা, লেয়ার মুরগি ৩৪৫-৩৫০ টাকা, দেশি মুরগি ৫৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এক্ষেত্রে দেখা যায়, ব্রয়লার মুরগির দাম কমেছে ১২ টাকা, কক মুরগির দাম কমেছে ১০ টাকা, দেশি মুরগির দাম কমেছে ২০-৪০ টাকা ও লেয়ার মুরগির দাম কমেছে ৫ টাকা।
শুক্রবার মুদি পণ্যের দাম রয়েছে প্রায় অপরিবর্তিত। তবে কয়েকটি পণ্যের দাম বেড়েছে। গতকাল প্যাকেট পোলাওর চাল ১৫৫ টাকা, খোলা পোলাওর চাল মানভেদে ১১০ থেকে ১৪০ টাকা, ছোট মসুর ডাল ১৩৫ টাকা, মোটা মসুর ডাল ১১০ টাকা, বড় মুগ ডাল ১৬০ টাকা, ছোট মুগ ডাল ১৮০ টাকা, খেসারি ডাল ১০০ টাকা, বুটের ডাল ১৩০ টাকা, ডাবলি ৮০ টাকা, ছোলা ১১৫ টাকা মাশকলাই ২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৬৭ টাকা, খোলা সয়াবিন তেল ১৪৭ টাকা, কৌটাজাত ঘি ১৩৫০ টাকা, খোলা ঘি ১২৫০ টাকা, প্যাকেটজাত চিনি ১৩৫ টাকা, খোলা চিনি ১৩০ টাকা, দুই কেজি প্যাকেট ময়দা ১৫০ টাকা, আটা দুই কেজির প্যাকেট ১১৫ টাকা, খোলা সরিষার তেল প্রতি লিটার ১৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া এলাচি ৪ হাজার ৫০০ টাকা, দারুচিনি ১৫০ টাকা, লবঙ্গ ১৬০০ টাকা, সাদা গোল মরিচ ১ হাজার ৬০০ টাকা ও কালো গোল মরিচ ৯০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এক্ষেত্রে দেখা যায়, বুটের ডাল, ছোলা ও মাসকলাই ডালের দাম বেড়েছে যথাক্রমে ১৫, ১০ ও ১৫ টাকা করে। এছাড়া এলাচির দাম বেড়েছে ৫০০ টাকা।

্রিন্ট

আরও সংবদ