খুলনা | বুধবার | ২৩ অক্টোবর ২০২৪ | ৭ কার্তিক ১৪৩১

ডুমুরিয়ার ইউপি চেয়ারম্যান রবি হত্যা মামলার এজাহারে যে সকল অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক |
০১:০৬ এ.এম | ১১ জুলাই ২০২৪


ডুমুরিয়ার শরাফপুর ইউপি চেয়ারম্যান নিহত রবিউল ইসলাম রবি হত্যাকান্ডে আটক, অস্ত্র উদ্ধার অভিযান, আদালতে সোপর্দ সর্বোপরি মামলার বিষয়ে তথ্য জানাতে গণমাধ্যমকর্মীদের সাথে রীতিমতো লুকোচুরি করছেন সংশ্লিষ্টরা। গত মঙ্গলবার ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুরের পর জেলহাজতে প্রেরণ করা হয় গ্রেফতার আজগর বিশ্বাস তারা এবং সাইফুল ইসলাম সরদার ওরফে কিলার বাবুকে।
এজাহারভুক্তরা হলেন ডুমুরিয়ার বৃত্তি ভুলবাড়িয়ার মৃত আহাদ আলী হাওলাদারের ছেলে এইচ এম উবাঈদ উল্লাহ (৪০), ওয়ালী উল্লাহ্ অলি (৩০), সেনপাড়ার মোঃ মহাসিন সানার ছেলে মোঃ আল মামুন সানা (২৫), বৃত্তি ভুলবাড়িয়ার মৃত নব্যে শেখের ছেলে মোঃ রফিক শেখ (৫৫), লাইন বিলপাবলার মোঃ হারেজ উদ্দিন বিশ্বাসের ছেলে মোঃ আজগর বিশ্বাস তারা (৪২), বৃত্তি ভুলবাড়িয়ার মোঃ শাহিন শেখের ছেলে মোঃ আলামিন শেখ (২৩) এবং বানিয়াখালীর মোঃ কামালখানের ছেলে মোঃ আল ফুরকান খাঁন (৪২)সহ অজ্ঞাত ৭ থেকে ৮ জন।
এজাহারে বাদী অভিযোগ সময়ের খবর পাঠকদের সামনে তুলে ধরা হলো। এজাহারে বলা হয়েছে, ১নং আসামি এইচ এম উবাঈদ উল¬াহ নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিপুল ভোটের ব্যবধানে তিনবার শরাফপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন রবিউল ইসলাম রবি। স্থানীয় ভাবে জনপ্রিয়তা অর্জন করায় রবি গেল জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের সমর্থন করেন। ফলে ১নং আসামি এইচ এম উবাঈদ উল্লাহ নৌকার বিরোধিতা করেছিল। সর্বশেষ ৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান (এজাজ আহমেদ) কে রবিউল ইসলাম রবি সমর্থন করেন। ১নং আসামি এইচ এম উবাঈদ উল­¬াহ্ রবিউল ইসলাম রবির বিরোধিতা করে ৫নং আসামি আজগর বিশ্বাস তারার পক্ষে প্রত্যক্ষ সমর্থন করে প্রতিবারের ন্যায় পরাজিত হয়। রবিউল ইসলাম রবির জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে প্রাণনাশসহ ক্ষয়ক্ষতি করতে উদ্যত হয়। ১নং আসামি এইচ এম উবাঈদ উল­¬াহ বারবার পরাজিত হয়ে ৫নং আসামি আজগর বিশ্বাস তারার অর্থায়নে উবাঈদ উল্লাহ ও ওয়ালী উল্লাহ্ অলির প্রত্যক্ষ মদদে দীর্ঘদিন ধরে প্রকাশ্যে বিরোধীদা করে ভাড়াটিয়া কিলার দিয়ে রবিউল ইসলাম রবিকে হত্যার উদ্দেশ্যে পরিকল্পনা করতে থাকে।
এজাহারে আরও বলা হয়েছে, গত ৬ জুলাই ডুমুরিয়া উপজেলায় সারা দিনব্যাপী দলীয় প্রোগ্রাম শেষ করে রাত সোয়া ৯টার দিকে ডুমুরিয়া বাজারে চা পান করে নিজস্ব মোটরসাইকেল যোগে খুলনার ভাড়া বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ে গুটুদিয়া ওয়াপদার মাথা ব্রীজের উপর (পূর্বপাশ্বে) সাড়ে ৯টার দিকে উপস্থিত হলে সকল আসামির মদদে ৫নং আসামি আজগর বিশ্বাস তারার নির্দেশক্রমে অর্থায়নে ১নং আসামি এইচ এম উবাঈদ উল্লাহ ও ২নং আসামি ওয়ালী উল্লাহ্ অলির মদদে অজ্ঞাতনামা ৭ থেকে ৮ জন আসামি পরস্পর যোগসাজসে একত্রিত হয়ে পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক রবিউল ইসলাম রবিকে গুলি করলে মোটরসাইকেলসহ ব্রীজের উপর পড়ে যায়। গুলির শব্দ শুনে পার্শ্ববর্তী লোকজনসহ পথচারীরা তাৎক্ষণিক তাকে উদ্ধার করে ডুমুরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লে¬ক্সে নিয়ে যায়। পরে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম রবিকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহত ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম রবির ভাগ্নে এম এম সাইফুর রহমান রাজু ও চাচাতো ভাই মোঃ মোতাহার শেখ জানান, রবিউল ইসলাম রবি শরাফপুর ইউনিয়নসহ ডুমুরিয়া উপজেলায় ব্যাপক জনপ্রিয় ছিলেন। তিনি গত তিনটি ইউপি নির্বাচনে শরাফপুর ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। সর্বশেষ ইউপি নির্বাচনে তিনি আ’লীগের সমর্থন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে জয়লাভ করেন। তার কাছে আ’লীগ সমর্থিত প্রার্থী বৃত্তি ভুলবাড়িয়া গ্রামের ওবায়দুল্লাহ হাওলাদার ২৬২ ভোটে পরাজিত হন। এরপর নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ এনে ওবায়দুল্লাহ আদালতে মামলা দায়ের করেন। আদালতে মামলাটি বিচারাধীন। এছাড়া গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইউপি চেয়ারম্যান রবি আ’লীগের প্রার্থী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ এবং ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাচনে গাজী এজাজ আহম্মেদের পক্ষে কাজ করেন। ওই দু’টি নির্বাচনেই তার সমর্থিত প্রার্থীরা জয়লাভ করেন। অন্যদিকে, রবির কাছে পরাজিত ইউপি চেয়ারম্যান প্রার্থী শরাফপুর ইউনিয়ন আ’লীগের যুগ্ম-সম্পাদক ওবায়দুল্লাহ হাওলাদার (এইচ এম উবাঈদ উল্লাহ্) এবং আ’লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত পরাজিত স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য প্রার্থী ও ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাচনে পরাজিত একজন এই হত্যাকান্ডে জড়িত।
খুলনা জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাঈদুর রহমান বলেন, আসামিদের গ্রেফতার এবং তদন্ত প্রক্রিয়া চলছে। তদন্তের কিছুটা অগ্রগতি হলে গণমাধ্যমকে বিস্তারিত জানানো হবে।

্রিন্ট

আরও সংবদ