খুলনা | বৃহস্পতিবার | ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৪ আশ্বিন ১৪৩১

কৃষি জমি ও জলাশয় ভরাট করে বিক্রি হচ্ছে প্লট, নেই নাগরিক সুযোগ-সুবিধা

খুলনায় অনুমোদনহীন ৯৪ আবাসন প্রকল্প

আশরাফুল ইসলাম নূর |
০৮:৪০ পি.এম | ২৪ জুলাই ২০২৪


খুলনায় অনুমোদনবিহীন ৯৪টি আবাসন প্রকল্প দীর্ঘদিন অবৈধভাবে আবাসন ব্যবসা করছে। অনুমোদন না থাকলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কেডিএ)। অবৈধ এসব প্রকল্পের উদ্যোক্তারা অনুমোদনের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদনও করেনি। নিচু ভূমি, কৃষি জমি ও পুকুর-জলাশয় ভরাট করে প্লট বিক্রি করছে তারা। যদিও আবাসন এলাকাগুলোতে নেই প্রয়োজনীয় নাগরিক সুযোগ-সুবিধা।
কেডিএ’র আইন অনুযায়ী, আবাসন প্রকল্পে কমপক্ষে ১২ ফুট চওড়া রাস্তা থাকতে হবে। কিন্তু অধিকাংশ প্রকল্পেই তা নেই। ভবিষ্যতে এসব এলাকা সিটি কর্পোরেশনের আওতায় এলে প্রশস্ত পাকা সড়ক ও ড্রেন এমনকি ডাস্টবিন তৈরির সুযোগ থাকবে না।
খুলনার জিরোপয়েন্ট, রূপসা সেতুর বাইপাস সড়ক ও সংযোগ সড়ক, সাচিবুনিয়া-বটিয়াঘাটা সড়ক এবং খুলনা-সাতক্ষীরা সড়কের দুই পাশে আবাসিক প্লট বিক্রির ব্যবসা চলছে প্রায় এক যুগ। কেডিএ থেকে নিবন্ধন ও প্রকল্পের লে-আউটের অনুমোদন ছাড়াই বিক্রি করা হচ্ছে ৩ থেকে ১০ কাঠার প্লট। এসব প্রকল্পে অপরিকল্পিত ভাবে গড়ে উঠছে ঘরবাড়ি। অধিকাংশ প্রকল্প এলাকায় বিদ্যুৎ নেই; নেই পাকা রাস্তা, সড়কবাতি, ড্রেন ও ময়লা ফেলার স্থান; রাস্তাগুলোও অপ্রশস্ত। কোনো প্রকল্প এলাকাতেই স্কুল, খেলার মাঠ, মসজিদ, পার্ক ও চিকিৎসাকেন্দ্র নেই। অথচ আইন অনুযায়ী এগুলো থাকার কথা। এ ছাড়া বেশ কয়েকটি আবাসন প্রকল্পের এলাকা ধানক্ষেত ও নিচু জমি। এমনকি পুকুর-জলাশয় ভরাট করেও তৈরি করা হয়েছে প্রকল্প। এসব প্রকল্পের প্রতি কাঠা জমির মূল্য ৫ থেকে ১৫ লাখ টাকা।
কেডিএ সূত্রে জানা গেছে, ৯৪টি আবাসন প্রকল্পের মধ্যে জিরোপয়েন্টে মুক্তিযোদ্ধা কলেজ সড়কে আব্দুল্লাহ আবাসিক এলাকা, শান্তিনগর এলাকায় সিয়াম হাউজিং প্রকল্প, বয়রা এলাকায় সুন্দরবন আবাসিক প্রকল্প, সাচিবুনিয়া এলাকায় স্বপ্নগড়ি আবাসিক এলাকা ও মোহাম্মাদিয়া হাউজিং, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় সড়কে জামান আবাসিক এলাকা, গল্লামারী এলাকায় আবাসন প্রকল্প, লবণচরা থানার পেছনে গুলজান সিটি, মোহাম্মদনগর এলাকায় মোল্লা আবাসিক প্রকল্প, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে রূপনগর আবাসিক প্রকল্প, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে প্রগতি আবাসন, পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের সামনে সবুজ বাংলা আবাসিক প্রকল্প গড়ে উঠেছে। গল্লামারী এলাকায় নিকুঞ্জ আবাসিক এলাকা, নিজখামার এলাকায় একতা আবাসন প্রকল্প, নিরালা এলাকায় গ্রিনটাউন, রূপসা সেতুর বাইপাস সড়কে বিশ্বাস প্রপার্টিজ, বয়রা এলাকায় নিউ বসুন্ধরা রিয়েল এস্টেট, হাসানবাগ এলাকায় স্বপ্নিল আবাসন, বয়রা এলাকায় আঙিনা রিয়েল এস্টেট প্রকল্পে জমি বিক্রি করা হচ্ছে। 
তাছাড়া দৌলতপুরে উজান নিবাস, বয়রা এলাকায় মেসার্স সিয়াম প্রপার্টিজ, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় মেইন রোডে তানিশা আবাসিক প্রকল্প, হামিদনগর এলাকায় ফজলে করিমনগর আবাসিক, মোস্তফার মোড়ে চৈতী হাউজিং প্রপার্টিজ, বয়রা এলাকায় এ আর আবাসিক প্রকল্প ও আপেল সিটি, দৌলতপুরে প্রত্যাশা আবাসন, বাস্তুহারা মোড়ে স্বদেশ সিটি, দৌলতপুরে শিমুল সিটি আবাসন ব্যবসা করছে।
সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) খুলনার সভাপতি এড. কুদরত ই খুদা জানান, এক শ্রেণির ব্যবসায়ী নিচু জমি কিনে কোনোমতে ভরাট করে প্লট বিক্রি করছে। লোকজন ভালোভাবে খোঁজখবর না নিয়েই জমি কিনে সেখানে বাড়ি করছেন। তারা দেখছেন না সেখানে কত টুকু রাস্তা আছে, ড্রেন বা অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা আছে কিনা। কয়েক বছরের মধ্যে এ আবাসন প্রকল্পগুলো খুলনার জন্য বিষফোঁড়া হবে।
খুলনা সিটি কর্পোরেশনের প্রধান পরিকল্পনা কর্মকর্তা আবির উল জব্বার জানান, অনুমোদনহীন আবাসন প্রকল্পগুলোতে অপরিকল্পিতভাবে ঘরবাড়ি গড়ে উঠছে। অথচ কেডিএ এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।                 
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) খুলনার সমন্বয়ক মোঃ বাবুল হাওলাদার জানান, পুকুর, জলাশয় ও খাল ভরাট করে এবং কৃষি জমি নষ্ট করে অসংখ্য আবাসন প্রকল্প গড়ে উঠেছে। ফলে পরিবেশ-প্রকৃতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। কৃষি জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা যাবে না বলে আইন থাকলেও ভূমি ব্যবসায়ীরা তা মানছেন না।
এ ব্যাপারে খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোঃ তানভীর আহমেদ জানান, সিটি কর্পোরেশন এলাকার মধ্যে আবাসন প্রকল্প গড়ে তুলতে গেলে কমপক্ষে ৫ একর এবং সিটির বাইরে কমপক্ষে ১০ একর জমি থাকতে হবে। এ ছাড়া খেলার মাঠ, স্কুল, ধর্মীয় উপাসনালয় ও চিকিৎসাকেন্দ্র থাকতে হবে। কিন্তু কোনো আবাসন প্রকল্পেই তা নেই। সাধারণত ব্যবসায়ীরা নিজে কিছু জমি কিনে এবং অন্য জমির মালিকদের কাছ থেকে জমির পাওয়ার নিয়ে আবাসন প্রকল্প গড়ে তোলেন। এরপর জমি বিক্রি করে দিতে পারলেই তাদের দায়িত্ব যেন শেষ।
তিনি আরও জানান, কোনো আবাসন প্রকল্পেরই অনুমোদন নেই, এমনকি তারা অনুমোদনের জন্য আবেদনও করেনি। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রকল্পগুলোকে অনুমোদন নেয়ার জন্য কেডিএ’র পক্ষ থেকে একাধিকবার পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি এবং তাদের নোটিশ দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া কেউ যাতে এসব প্রকল্পের জমি না কেনেন, সে জন্য পত্রিকায় সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে।

্রিন্ট

আরও সংবদ