খুলনা | শুক্রবার | ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ | ১ ফাল্গুন ১৪৩১

নাশকতায় রেলের ক্ষতি ২২ কোটি, ট্রেন চলাচলে সিদ্ধান্ত নেই এখনো

খবর প্রতিবেদন |
০১:২৬ এ.এম | ২৬ জুলাই ২০২৪


কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ডাকা কমপি¬ট শাটডাউনের কারণে গত ১৮ জুলাই থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা পর্যন্ত ঢাকার সঙ্গে সারাদেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ ছিল। গত ১৮ জুলাই বেলা ১১টায় মহাখালীতে রেললাইন অবরোধের পর সব ধরনের ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে, গত সাত দিনে রেলের টিকিট রিফান্ড ও বিভিন্ন জায়গায় হামলায় রেলের ক্ষতি হয়েছে ২২ কোটি ৩ লাখ ৮ হাজার টাকা। 
বৃহস্পতিবার রাজধানীর রেল ভবনে রেলপথ মন্ত্রী মোঃ জিল­ুল হাকিম এ তথ্য জানিয়ে বলেন, ‘সারাদেশে কয়েকটি জায়গায় ট্রেনে ও স্টেশনে রাখা বিভিন্ন যন্ত্রাংশে হামলা করা হয়েছে। এই কারণে এখনো ট্রেন চালানোর মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি।’ তিনি জানান, পরিস্থিতি বুঝে ট্রেন চলাচলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। 
জিল­ুল হাকিম হাকিম বলেন, ‘ট্রেন না চলার কারণে টিকিট রিফান্ড করতে হচ্ছে। এটা সবচেয়ে বড় ক্ষতি। এখন পর্যন্ত ১৬ কোটি ২৯ লাখ টাকার বেশি টিকিট রিফান্ড করা হয়েছে যাত্রীদের। এ ছাড়া পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চল মিলিয়ে রেলের মোট ক্ষতি হয়েছে ২২ কোটি ৩ লাখ ৮ হাজার টাকা।’ 
মন্ত্রী বলেন, ‘সহিংসতায় হামলাকারীরা কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেসের তিনটা কোচে আগুন দিয়েছে। এ ছাড়া সোনার বাংলা, কক্সবাজার এক্সপ্রেস ও পারাবত এক্সপ্রেসের বিভিন্ন কোচে হামলা করে ভাঙচুর করেছে। বিভিন্ন স্টেশনে বৈদ্যুতিক যন্ত্রাংশ, সিগন্যাল ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। তবে রেল লাইন উপড়ে ফেলার মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি।’ 
এদিকে গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রেল যোগাযোগ বন্ধ হলে পরদিন শুক্রবার রেল থেকে জানানো হয় পরবর্তী নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত রেল চলাচল বন্ধ থাকবে। তবে বুধবার জানানো হয়, ঢাকার আশপাশে স্বল্প দূরত্বে ট্রেন চলবে। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা-জয়দেবপুর, ঢাকা-টাঙ্গাইল এসব দূরত্বে কমিউটার ও লোকাল ট্রেন চালানোর সিদ্ধান্ত নেয় রেলওয়ে। এই ঘোষণার পর বৃহস্পতিবার সকালে অনেকেই কমলাপুর স্টেশনে ভিড় করেন। তবে ১২টার সময় সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে রেলওয়ে। 
কমলাপুর স্টেশন মাস্টার আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘যাত্রী নিরাপত্তার কথা ভেবে এই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা হয়েছে। আজও কমলাপুর থেকে কোথাও ট্রেন চলাচল করবে না।’ 
রেলমন্ত্রী জিল­ুল হাকিম বলেন, ‘রেলের ইঞ্জিন ও কোচের সংখ্যা কম। তারপরও রেল সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছে। এখন এই মুহূর্তে ট্রেন পরবর্তী পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করেই চলাচল করবে। এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও এই বিষয়ে কথা হয়েছে। রেল চাচ্ছে না যে, এমন কিছু হোক-যাতে আবার আগুনের মধ্যে ঠেলে দিতে হয়। প্রস্তুতির ওপর নির্ভর করবে রেল চলাচল।’
এর আগে রেলওয়ের মহাপরিচালক (ডিজি) সরদার সাহাদাত আলী বলেন, রেল সংশ্লি¬ষ্ট সবার সঙ্গে আলোচনা করে নিরাপত্তার বিষয় মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে কবে থেকে ট্রেন চলবে। 
রেলের ডিজি বলেন, ট্রেন চলাচলের বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। ট্রেন চালানো কোনো বিষয় না, বিষয় হচ্ছে নিরাপত্তা। সার্বিক পরিস্থিতি বিশ্লে¬ষণ করে মন্ত্রী, সচিব এবং সংশ্লি¬ষ্ট সবার সঙ্গে আলোচনা করে কবে থেকে ট্রেন চলবে সেই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন মাস্টার আনোয়ার হোসেন জানান, স্বল্প দূরত্বে কিছু ট্রেন বৃহস্পতিবার থেকে চলাচলের কথা থাকলেও সেই সিদ্ধান্ত থেকে পিছিয়ে এসেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত আন্তঃনগরসহ সব ধরনের ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকবে। 
রেলওয়ের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, নিরাপত্তাজনিত কারণে ঘোষণা দিলেও তুরাগ ও তিতাস কমিউটার ঢাকা থেকে যাত্রা করেনি।
এদিকে অনানুষ্ঠানিকভাবে সাত দিন ও আনুষ্ঠানিকভাবে চার দিন ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকার পর বুধবার রাতে এই দু’টি ট্রেন চলাচলের ঘোষণার খবরে সংশ্লি¬ষ্ট স্টেশনগুলোতে দুপুর ১২টা পর্যন্ত যাত্রীদের ভিড় ছিল। ১২টার পর ট্রেন চলাচল করবে না বলে কর্তৃপক্ষের ঘোষণা পেয়ে যাত্রীরা স্টেশন থেকে নিজ নিজ গন্তব্যে ফিরে যান।
কোটা আন্দোলনের কারণে বৃহস্পতিবার রেলপথ অবরোধ হওয়ায় ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। অনানুষ্ঠানিকভাবে তিন দিন বন্ধ থাকার পর শনিবার রাতে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ রেলওয়ে সারা দেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য ট্রেন চলাচল বন্ধ ঘোষণা করে। বুধবার রাতে তুরাগ ও তিতাস কমিউটার ট্রেন দু’টি বৃহস্পতিবার থেকে চলাচলের ঘোষণা দিলেও ট্রেন ছাড়ার আগেই বন্ধ করে দেয় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।

্রিন্ট

আরও সংবদ