খুলনা | সোমবার | ১৩ জানুয়ারী ২০২৫ | ৩০ পৌষ ১৪৩১

টিয়ালশেল রাবার বুলেটে আহত ৬০, আটক শতাধিক

শিক্ষার্থী-পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষ খুলনায়

নিজস্ব প্রতিবেদক |
০৩:৫২ পি.এম | ৩১ জুলাই ২০২৪


বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় নগরীর একাধিক এলাকায় রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। গতকাল বুধবার দুপুর ২টায় নগরীর সাতরাস্তা মোড় থেকে সংঘর্ষ শুরু হয়। পরে রয়েল মোড়, শান্তিধাম, মডার্ন ফার্নিচার মোড়, বাইতিপাড়া, মৌলভীপাড়া, পিটিআই মোড় পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে সংঘর্ষ। ঘণ্টাখানেক ধরে চলা সংঘর্ষে পুলিশ শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে সাউন্ড গ্রেনেড, অসংখ্য টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট বর্ষণ করে। এতে অন্তত ৬০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছে বলে দাবি আন্দোলনকারীদের। অন্যদিকে, আন্দোলনকারীদের নিবৃত্ত করতে নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে শতাধিক শিক্ষার্থীকে আটক করে পুলিশ।
সরেজমিন দেখা গেছে, বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নগরীর রয়েল মোড় ও ময়লাপোতা মোড়ে জমায়েত হয়ে মিছিল করার চেষ্টাকালে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীকে আটক করে পুলিশ। এ সময় রয়েল মোড়ে বিপুল সংখ্যক পুলিশের পাশাপাশি কয়েকটি গাড়িতে বিজিবি সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে নগরীর মোড়ে-মোড়ে ও অলিগলিতে ব্যাপক তল­াশি চালায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সড়কে যাতায়াতকারীদের মোবাইল ফোন চেক করে লাল প্রোফাইল দেখলেই তাদের আটক করা হয়। মোট কতজনকে আটক হয়েছে, সেই তথ্য জানাতে পারেনি পুলিশ। দুপুর একটার দিকে ময়লাপোতা মোড়ে পুলিশে ধাওয়া খেয়ে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ আহসানুল­াহ কলেজে আশ্রয় নেয়। তারা ভবনের ভেতর একটি কক্ষে প্রবেশ করে দরজা লাগিয়ে দেয়। পরে দরজা ভেঙে শিক্ষার্থীদের আটক করে পুলিশ।
আন্দোলনকারীরা জানান, সারাদেশে নিহত ছাত্রদের হত্যার বিচারের দাবিতে  বুধবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মার্চ ফর জাস্টিস কর্মসূচি ছিল। খুলনায় সংগঠনটির পক্ষ থেকে বেলা ১১টায় রয়েল মোড়ে অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। কিন্তু সকাল থেকে নগরীর রয়েল মোড়ে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
দুপুর ১২টা থেকে শিক্ষার্থীরা রয়েল মোড়ের আশপাশে জড়ো হওয়ার চেষ্টা করলেই তাদের আটক করা হয়। এ সময় তাদের মোবাইল ফোন চেক করে করতে দেখা যায় পুলিশকে। পরে তারা ময়লাপোতার মোড়ে জড়ো হওয়ার চেষ্টা করলে সেখান থেকে আটক করা হয় ১৭ জনকে।
দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আন্দোলনকারীরা কেডিএ এ্যাভিনিউ দিয়ে রয়্যাল মোড়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। তখন পুলিশ তাদের ধাওয়া দেয়। শিক্ষার্থীদের একটি অংশ ময়লাপোতা মোড়ের দিকে এবং কিছু সাতরাস্তার মোড়ের দিকে চলে যায়। এ সময় দুটি প্রাইভেটকার ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। ময়লাপোতে আবার শিক্ষার্থীদের ধাওয়া দেয় পুলিশ। তখন কিছু শিক্ষার্থী আহসান উল­াহ কলেজে আশ্রয় নেয়। শিক্ষার্থীদের আরেকটি অংশ শেরে বাংলা সড়ক দিয়ে ময়লাপোতা মোড়ে প্রবেশ করে সিটি মেডিকেল কলেজের দিকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। পুলিশ লাঠিচার্জ করে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় ছাত্রলীগের একটি মিছিল ওই এলাকায় আসলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। সংঘাত এড়াতে ময়লাপোতা মোড়ে বিপুল সংখ্যক বিজিবি মোতায়েন করা হয়।
বেলা ২টার দিকে বেশকিছু শিক্ষার্থী সাতরাস্তা মোড়ে সড়কে বসে পড়ে বিক্ষোভ করে। বেলা সোয়া দুইটার দিকে পুলিশ শিক্ষার্থীদের অবস্থানে লাঠিচার্জ শুরু করলে  সংঘর্ষ শুরু হয়। পুলিশ শিক্ষার্থীদের লাঠিচার্জ ও টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে পড়লে সংঘর্ষ রয়েল মোড়, শান্তিধাম, মডার্ন ফার্নিচার মোড়, বাইতিপাড়া, মৌলভীপাড়া, পিটিআই মোড় পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিভিন্ন এলাকার ছাত্রদের যোগ দিতে দেখা যায়। পুলিশের মুহুর্মুহু টিয়ার সেল, কাঁদানে গ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। ভয়ে আতঙ্কে ওই সব এলাকার দোকান পাট বন্ধ হয়ে যায়। বিকেল ৪টার কিছু আগে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পক্ষে আল শাহরিয়ার জানান, পুলিশের লাঠিচার্জ, টিয়ারসেলের আঘাতে কমপক্ষে ৬০ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। তাদের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। গ্রেফতার করা হয়েছে অসংখ্য শিক্ষার্থীকে। তাদের সন্ধ্যার মধ্যে মুক্তি দেওয়া না হলে আমরা স্বেচ্ছায় গ্রেফতার হবো।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি) কমিশনার মোঃ মোজাম্মেল হক গণমাধ্যমকে বলেন, খুলনায় বৈষম্য বা কোটাবিরোধী আন্দোলনের নেতারা তাদের কর্মসূচি প্রত্যাহার করেছেন। কিন্তু কিছু যুবক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। সরকার ইতিমধ্যে শিক্ষার্থীদের দাবি বাস্তবায়ন করেছে। সহিংসতা ঘটনারও তদন্ত ও দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে। তাই আন্দোলনের যৌক্তিকতা নেই। পুলিশ বিভিন্ন স্থান থেকে সহিংসতায় জড়িত সন্দেহে বেশ কয়েকজনকে আটক করেছে। তাদের যাচাই বাছাই করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার রাত ১০টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত খুলনা সার্কিট হাউজে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন খুলনার ১১ জন সমন্বয়ক ও সহ-সমন্বয়কদের নিয়ে  বৈঠক করেন মেয়র, সংসদ সদস্য, পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও আওয়ামী লীগ নেতারা। বৈঠকের পর তাৎক্ষণিক প্রেস ব্রিফিংয়ে সমন্বয়করা কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন।
তবে রাতেই শিক্ষার্থীদের আরেকটি অংশ প্রত্যাহারের ঘোষণা প্রত্যাখান করেন। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্যাডে ‘স্পষ্ট বিবৃতি’ শিরোনামে আরেকটি বিজ্ঞপ্তিতে ফেসবুক গ্র“প ‘কেইউ ইনসাইডার’ এবং ‘থট বিহাইন্ড দ্যা কেইউ’ প্রকাশ করা হয়। এতোদিন এই দু’টি গ্র“পের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের কর্মসূচি ঘোষণা এবং প্রকাশ করতেন।
স্পষ্ট বিবৃতিতে বলা হয়, ‘চলমান আন্দোলনে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্দিষ্ট কোনো সমন্বয়ক ছিলো না। বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থীদের দিয়ে জোরপূর্বক যে প্রেস ব্রিফিং করানো হয়েছে, তা নোংরা রাজধানীর অংশ ছাড়া কিছুই নয়। এ অবস্থায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে আমরা এই বিবৃতি প্রত্যাখান করছি।’ পরে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের পক্ষ থেকে একই বিবৃতি দেওয়া হয়।

 

্রিন্ট

আরও সংবদ