খুলনা | রবিবার | ০১ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১৭ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

‘মান-অভিমান ভুলে সবাইকে একসঙ্গে লড়তে হবে’

আ’লীগ কার্যালয়ে মতবিনিময়ে তোপের মুখে কাদের

খবর প্রতিবেদন |
০২:০২ এ.এম | ০১ অগাস্ট ২০২৪


ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহŸান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, ‘আজকে আমাদের লড়তে হবে একসঙ্গে। মান-অভিমান সব ভুলে যেতে হবে। আজ ওই পশুশক্তি যদি আরও প্রশ্রয় পায়, তাহলে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়তে হবে।’
বুধবার সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন ওবায়দুল কাদের।
মুক্তিযুদ্ধ ও গণতন্ত্রবিরোধী এবং অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহŸান জানিয়ে মতবিনিময় সভায় ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে হবে। শেখ হাসিনাই এই মুহূর্তে আমাদের অস্তিত্বের কান্ডারি।’
কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রসঙ্গে টেনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘জনগণের প্রতিরোধের মুখে পদ্মা সেতুতে আক্রমণ করতে পারেনি। কিন্তু সফল হয়েছে সেতু ভবন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, বিটিভি ভবন, মেট্রোরেলে আক্রমণ করতে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আগুন-সন্ত্রাসের ধ্বংসলীলা আবার শুরু হয়েছে।’ এ ‘নারকীয় তাণ্ডবের’ বিরুদ্ধে মতভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়ার আহŸান জানান সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী।
জিয়াউর রহমান একজন ভণ্ড মুখোশধারী মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন অভিযোগ করে সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘এই মানুষগুলোকে আমাদের জানতে হবে। এদের ব্যাকগ্রাউন্ড জানলেই এদের উত্তরসূরিদের কর্মকাণ্ডের আসল চেহারা উন্মোচিত হবে, যা এখন উন্মোচিত হয়েছে।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সেতু ভবন সম্পূর্ণ জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমাদের ইতিহাস ও সংস্কৃতির ধারক-বাহক যে বিটিভি, সেই বিটিভিকে ভস্মীভূত করা হয়েছে। এই অপশক্তিকে যেকোনো মূল্যে আমাদের প্রতিরোধ করতে হবে। শেখ হাসিনা আজকে জাতীয় জীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে এনেছেন।’
মতবিনিময় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক, মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক, আফজাল হোসেন, সুজিত রায় নন্দী, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেনসহ ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা।
তোপের মুখে কাদের : সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের তোপের মুখে পড়লেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সাবেক ছাত্রনেতাদের মতবিনিময়ের জন্য ডেকে কথা বলতে না দেওয়ায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এ সময় সাবেক ছাত্রনেতাদের কেউ কেউ ‘ভুয়া ভুয়া’ বলেও শ্লোগান দেন।
বুধবার সকালে বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের নিয়ে মতবিনিময়ের উদ্যোগ নেয় আওয়ামী লীগ। বেলা ১১টায় দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাবেক ছাত্রনেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন বলে দলের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমকেও আগের দিন জানানো হয়। অন্যদিকে ছাত্রনেতারা জানান, তাঁদেরকেও মতবিনিময় সভার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়।
নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই ছাত্রলীগের কয়েকশ’ সাবেক নেতা দলীয় কার্যালয়ের দোতলার সম্মেলনকক্ষে উপস্থিত হন। এর মধ্যে সংসদ সদস্য, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ শীর্ষ নেতারা ছিলেন। তাঁদের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা বা মতবিনিময় না করেই গণমাধ্যমের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দিতে শুরু করেন ওবায়দুল কাদের।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এতে ক্ষুব্ধ হয়ে প্রথমে নিজেদের মধ্যে কথা বলতে থাকেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতারা। পরে যা হট্টগোলে রূপ নেয়। কয়েকজন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ওবায়দুল কাদেরকে উদ্দেশ্য করে বলতে থাকেন, ‘মতবিনিময় সভা ডেকে সংবাদ সম্মেলন করছেন কেন? তাহলে আমাদের ডাকলেন কেন? আগে আমাদের কথা শুনবেন, আলোচনা করবেন, তারপর ব্রিফ করেন। তা না করে সাংবাদিকদের সামনে কথা বলা শুরু করে দিলেন...।
উলে­খ্য, এর আগে একাধিকবার ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠনের সঙ্গে যৌথসভা ডেকে ওবায়দুল কাদের বক্তৃতা করে সভা শেষ করে দিয়েছেন। অন্যরা কোনো বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ পাননি। এমনকি দলের সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠক ডেকেও একাই বক্তৃতা করে বৈঠক শেষ করার নজির আছে ওবায়দুল কাদেরের।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বলেন, অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে তাঁরা আগেই আঁচ করতে পেরেছিলেন যে ওবায়দুল কাদের নিজে বক্তৃতা করে চলে যাবেন। বৈঠকে এসে তা-ই দেখতে পান। এতে নেতারা উত্তেজিত হয়ে পড়েন।
সাবেক ছাত্রনেতারা আরও বলেন, হট্টগোল শুরু হলে প্রথমে ওবায়দুল কাদেরকে বলতে শোনা যায়, ‘কে, কে, থামো।’ কিন্তু এরপরও হট্টগোল চলতে থাকে। এরপর সংবাদ সম্মেলন অন্যান্য দিনের মতো দীর্ঘ না করে সভাস্থল ত্যাগ করেন ওবায়দুল কাদের। এ সময় পেছনে বসা ছাত্রলীগের সাবেক এক নেতা ‘ভুয়া, ভুয়া’ বলে আওয়াজ করেন। তারপর অনেকেই ‘ভুয়া, ভুয়া’ বলে ওঠেন। পরে সাবেক ছাত্রনেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় না করেই আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে নিজের কক্ষে চলে যান ওবায়দুল কাদের। অন্য কেন্দ্রীয় নেতারাও যাঁর যাঁর মতো করে চলে যান। এ সময় আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের নিচতলা ও সামনের সড়কে থাকা ছাত্রলীগের সাবেক নেতারাও ‘ভুয়া, ভুয়া’ বলে শ্লোগান দিতে থাকেন। এ অবস্থা ঘণ্টাখানেক চলে।
এদিন ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় মতবিনিময় সভায় আসা ছাত্রলীগের সাবেক কয়েকজন নেতা সাংবাদিকদের সঙ্গেও অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। 
সূত্র : প্রথম আলো, সমকাল, আজকের পত্রিকা, ভোরের কাগজ, ঢাকা পোষ্ট, অনলাইন।

্রিন্ট

আরও সংবদ