খুলনা | রবিবার | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৩১ ভাদ্র ১৪৩১

প্রাণহানি কাম্য নয়, প্রয়োজন সমাধান

|
১২:১৫ এ.এম | ০৫ অগাস্ট ২০২৪


দেশব্যাপী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক দফা দাবি আদায়ে ডাকা অসহযোগ আন্দোলন এবং আ’লীগের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে অগ্নিগর্ভ দেশ। বিভিন্ন স্থানে হামলা-অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে বিভিন্ন স্থাপনা ও গাড়িতে। আন্দোলনকারী-আ’লীগ ও পুলিশের ত্রিমুখী সংঘর্ষে সারাদেশে গতকাল রোববার রাত পর্যন্ত ১৪ পুলিশসহ ৮০ জনের মৃত্যুর সংবাদ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ফেনিতে ৫ জন, মুন্সিগঞ্জে ৪, পাবনায় ৩, মাগুরায় ৪, রংপুরে ৪, কিশোরগঞ্জে ৪, বগুরায় ৩, কুমিল­ায় পুলিশসহ ২, ঢাকার সাইন্সল্যাবে ১, সিরাজগঞ্জে পুলিশ, সাংবাদিকসহ ২১,  সিলেটে ৩, ভোলায় ৩, জয়পুরহাটে ১, বরিশালে ১, ল²ীপুর ৫, শেরপুর ১ জন নিহত হয়েছেন। যার মধ্যে পুলিশ, সাংবাদিক, আ’লীগ, বিএনপি, শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষ রয়েছে। গুলিবিদ্ধ ও হামলায় আহতের সংখ্যা নিরুপণ এখনও অধরা। 
তার আগে গত ১৬ জুলাই থেকে ২১ জুলাই পর্যন্ত কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ঢাকাসহ সারা দেশে সহিংসতায় বহু হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় দুই শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন কয়েক হাজার, যাদের অধিকাংশই গুলিবিদ্ধ। উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, রাজপথে বাইরেও কেউ কেউ নিজের বাসায় কিংবা ছাদে গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন, যারা ছিলেন বিক্ষোভের বাইরে। এ অবস্থায় অভিযোগ উঠেছে, নিয়ম না থাকলেও বিক্ষোভ দমনে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ‘প্রাণঘাতী অস্ত্র’ ব্যবহার করায় এমন প্রাণহানি ঘটেছে। বিষয়টি নিয়ে দেশে ও আন্তর্জাতিক মহলেও চলছে আলোচনা-সমালোচনা। আইনজ্ঞসহ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাধারণ নাগরিকদের আন্দোলন দমনে এমন প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহার সংবিধান ও মানবাধিকারের স্পষ্ট লঙ্ঘন। যদিও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সরকারের একাধিক মন্ত্রী-এমপি’র দাবি, জীবন ও সম্পদ রক্ষার উদ্দেশ্যেই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী গুলি করতে বাধ্য হয়েছে।
সবার নিরাপত্তার স্বার্থেই গত কদিনের উদ্ভূত পরিস্থিতির নেপথ্য কারণ আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। যদিও তা তদন্তসাপেক্ষ, তবে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা যেভাবে একে অপরকে দোষারোপ করছেন, তাতে চলমান তদন্ত কার্যক্রম প্রভাবিত ও বাঁধাগ্রস্ত হতে পারে, তা স্মরণে রাখতে হবে। বরং দোষারোপ এড়িয়ে আলোচনার মাধ্যমে সংকট সমাধানে ভূমিকা রাখাই সবার জন্য হবে অধিক শ্রেয়। আলোচনায় সব সংকটের সমাধান যে মেলে, তা অতীতেও বহুবার প্রমাণিত হয়েছে। শিক্ষার্থীদেরও আলোচনার মাধ্যমে পড়ার টেবিলে ফিরিয়ে আনতে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। হতাহতদের ক্ষতিপূরণ প্রদান ও নিরপরাধ আটক ব্যক্তিদের অবিলম্বে মুক্তিদানে উদ্যোগী হলে চলমান সংকট দ্রুতই কেটে যাবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
বিদ্যমান পরিস্থিতিকে শান্ত করার প্রতি মনোযোগি না হয়ে তা প্রতিহত করার পন্থা অবলম্বন করলে মানুষের জানমালের ক্ষতি হওয়া ছাড়াও অর্থনীতিতেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে ইতোমধে। যা কারও জন্যই মঙ্গলজনক হবে না। জনমনে অসন্তোষ দেখা দিলে তা সামাজিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও হুমকি সৃষ্টি করতে পারে। দেখা দিতে পারে মত ও দর্শনগত বিভাজন। নিকট অতীত ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে আন্দোলন-সংগ্রামের প্রেক্ষাপটে দেশে সহিংস পরিস্থিতিতে দেশজুড়ে নাশকতামূলক কর্মকান্ডে যে ব্যাপক ব্যক্তিগত ও রাষ্ট্রীয় সম্পদহানি হয়েছিল, তার নেতিবাচক প্রভাব অর্থনীতিতেও পড়েছিল। তাই সংকট উত্তরণে সবপক্ষ সহনশীল মনোভাবের পরিচয় দেবে, এটাই প্রত্যাশা।

্রিন্ট

আরও সংবদ