খুলনা | রবিবার | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৩১ ভাদ্র ১৪৩১

সংঘর্ষে নিহত ৩৬

খবর প্রতিবেদন |
০১:১৫ এ.এম | ০৬ অগাস্ট ২০২৪

 

রাজধানীর উত্তরা পূর্ব থানা ঘেরাও করে বিক্ষুব্ধ জনতা। এ অবস্থায় থানা থেকে অনবরত ছুড়তে থাকা রাবার বুলেট ও গুলিতে অন্তত ১০ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন শতাধিক। সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে জানা গেছে, শত শত বিক্ষুব্ধ জনতা থানা ঘিরে রেখেছে। থানার ছাদ থেকে সিভিল ড্রেসে ২ জনকে রাবার বুলেট ও গুলি চালাতে দেখা যায়।
উত্তরার ক্রিসেন্ট হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, সেখানে ১০ জনের মরদেহ আছে। আহতদের অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। উত্তরার বিভিন্ন হাসপাতালে শতাধিক মানুষ চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।
বার্তা সংস্থা এএফপিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ বাচ্চু মিঞা জানান, আমরা এখানে ২০ জনের মরদেহ পেয়েছি। তবে এ নিয়ে বিস্তারিত আর কিছুই জানাননি তিনি।
অপর দিকে রাজধানীর কাকরাইলে প্রধান বিচারপতির বাস ভবন দখলে নেন বিক্ষুব্ধ জনতা। সোমবার বিকেল পৌনে ৫টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
ডেইলী স্টার তাদের অনলাইনে জানায়, বাস ভবনের প্রায় সব কিছু লুট হয়ে গেছে। তারা ভাঙচুর চালিয়েছে।
চট্টগ্রাম : জেলার পতেঙ্গা, চান্দগাঁও থানাসহ বিভিন্ন থানা ঘেরাও, দামপাড়া পুলিশ লাইন্সে হামলার খবর পাওয়া যায়। পতেঙ্গা থানায় হামলা ও আগুন দেওয়ার খবর নিশ্চিত করে এডিসি (বন্দর) কাজী হুমায়ুন রশীদ জানান, হামলাকারীরা থানার সামনে ঘেরাও করে রেখেছে। ইপিজেড থানা ঘিরে রেখেছে। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে এ ঘটনা ঘটে বলে জানান তিনি। বিকেল সাড়ে ৫টার সামনে দামপাড়া পুলিশ লাইন্সের সামনে অনেক বিক্ষোভকারী ছিল। ভাঙচুর করে ও আগুন দেওয়ার চেষ্টা করে তারা। পরবর্তীতে পুলিশ সেখানে গুলি করে ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে সবাইকে সরিয়ে দেয়।
ঢাকা : সাভারে শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে পুলিশের উপর্যুপরি গুলিতে সন্ধ্যা পর্যন্ত মারা গেছেন নারীসহ ৯ জন। গুলিবিদ্ধ হয়েছেন সাংবাদিক, শিক্ষার্থীসহ দেড় শতাধিক মানুষ। তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যদিকে ধামরাই থানায় আগুন দিয়েছে ক্ষুব্ধ জনতা। 
বিকেলে সাভার থানা থেকে পুলিশ কর্মকর্তারা পালিয়ে গেলে থানার সামনে বিভিন্ন যানবাহন ও ভবনে আগুন দেওয়া হয়। সাভার থানার দিকে অগ্রসরমান হাজারও জনতার মিছিলে পুলিশ উপর্যুপরি গুলি ছোঁড়ায় বেড়েই চলে নিহতদের সংখ্যা। সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে আশুলিয়া থানার বাইপাইল থেকে সাভার থানা রোড পর্যন্ত।
উন্মুক্ত জনতা আশুলিয়া থানার দিকে অগ্রসর হলে পুলিশ আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। সেখানেও গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান মাছ ব্যবসায়ী রমজানসহ (৪০) দুইজন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা অসহযোগ ও ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে দুপুরে আন্দোলনকারীরা ঢাকার দিকে অগ্রসর হলে সাভার বাজারের বাসস্ট্যান্ডে সূচনা হয় সংঘর্ষের। তার আগে পরিস্থিতির বাছবিচার না করেই কারফিউ ভঙ্গ করে বাইরে কেন-এই অপরাধে নির্বিচারে গুলি ছোঁড়ে পুলিশ। এতে গুলিবিদ্ধ হন মাছরাঙ্গা টেলিভিশনের সাংবাদিক সৈয়দ হাসিবুন্নবীসহ অর্ধশতাধিক। এদের মধ্যে এক তরুণীসহ তিনজন মারা যান এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। একপর্যায়ে পুলিশ পিছু হটলে ক্ষুব্ধ জনতাও তাদের ধাওয়া করে। এ সময় আত্মরক্ষার্থে পুলিশ থানা রোডের পুলিশ হাউজিংয়ের বহুতল ভবনে আশ্রয় নিলে ক্ষুব্ধ জনতা তাদের ঘিরে ফেলে। এ সময় জনতাকে লক্ষ্য করে ভবনের ওপর থেকে গুলি ছোঁড়া হলে গুলির মুখেই জনতা ওই ভবনে উঠে পড়ে। এ সময় উপর্যুপরি গুলিতে মারা যান আরও ৫ জন। অন্যদিকে ক্ষুব্ধ জনতার আরেকটি অংশ থানা অভিমুখে অগ্রসর হলে সেখান থেকে গুলি ছুঁড়লে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। স্রোতের মতো গুলিবিদ্ধরা আসতে থাকেন এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। দেড় শতাধিক গুলিবিদ্ধ মানুষকে একযোগে চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা। ধামরাই থানা পুড়িয়ে দেওয়া ও সাভার থানা আক্রান্ত হবার বিষয়টি নিশ্চিত করেন ঢাকার পুলিশ সুপার মোঃ আসাদুজ্জামান।
থানায় আক্রান্ত একাধিক পুলিশ সদস্য জানান, সেনাবাহিনীর সাহায্য চাওয়া হয়েছে। সেটা না পেয়ে এলাকায় বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে একটি ট্রাকে করে পালিয়ে যান সাভার মডেল থানার কর্মকর্তারা।
এদিকে ঢাকা জেলা আ’লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ফকরুল আলম সমর, সাভার উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল আলম রাজীব, কেন্দ্রীয় যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবু আহমেদ নাসিম পাভেল, উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আতিকুর রহমান আতিক, সহ-সভাপতি নিজাম উদ্দিন আহমেদ টিপুর বাড়িতে আগুন দিয়েছে ক্ষুব্ধ জনতা। সোমবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে সাভার মডেল থানার ৪০-৫০ জন পুলিশ ১২টি গাড়ি নিয়ে সাভার থেকে শিমুলতলা হয়ে উত্তর দিকে চলে যায়। এ সময় তারা এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করতে থাকে। এ সময় বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করেও গুলিবর্ষণ করতে থাকে পুলিশ। এতে কতজন হতাহত হয়েছেন জানা যায়নি। তিন থানা ভাঙচুরের পর ব্যাপক উত্তেজনা ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে সাভার, আশুলিয়া ও ধামরাইজুড়ে।
হবিগঞ্জ : জেলার বানিয়াচংয়ে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে শিশুসহ ৬ জন গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় পুলিশসহ আহত হয়েছেন আরও শতাধিক লোক। সোমবার দুপুর ১২টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীরা মিছিল নিয়ে বড় বাজার থেকে থানার দিকে আসতে থাকেন। এ সময় ঈদ গায়ের সামনে আন্দোলনকারীদের বাধা দেয় পুলিশ। একপর্যায়ে তারা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। তখন পুলিশ আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে রাবার বুলেট, কাঁদানে গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুঁড়ে এবং আন্দোলনকারীরা ইটপাটকেল ছুঁড়তে থাকে। সংঘর্ষের সময় শিশুসহ ৬ জন আন্দোলনকারী নিহত হয়েছেন। এতে আহত হয়েছেন আরও শতাধিক লোক।
নিহতরা হচ্ছেন যাত্রাপাশা গ্রামের সানু মিয়ার ছেলে হাসান মিয়া (১২), মাইঝের মহল­ার আব্দুর নূরের ছেলে আশরাফুল (১৭), পাড়াগাঁওয়ের শমসের মিয়ার ছেলে মোজাক্কির (৪০), কামালখানী গ্রামের নয়ন (১৮), জাতুকর্ণপাড়া গ্রামের আব্দুল রউফের ছেলে তোফাজ্জল (১৮) ও পূর্বগড়ের ধলাই মিয়ার ছেলে সাদিকুর (৩০)। মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষুব্ধ জনতা থানায় অগ্নিসংযোগ করে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বানিয়াচং উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ শামীমা আক্তার জানান, ৬ জনের মরদেহ আমরা পেয়েছি। এখন পর্যন্ত (সন্ধ্যা সোয়া ৬টা পর্যন্ত) মোট ৬২ জন ভর্তি হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে শিশুও রয়েছে।
হবিগঞ্জের সিভিল সার্জন ডাঃ মোহাম্মদ নূরুল হক জানান, ৬ জনের মৃত্যুর তথ্য তিনি শুনতে পেয়েছেন। তিনি বলেন, আমরা বানিয়াচং গিয়েছিলাম। থানায় ঢুকতে পারিনি। প্রাণ নিয়ে ফিরে এসেছি কোনোরকমে। এর বেশি কিছুই বলতে পারছি না।
বানিয়াচং থানার ওসি দেলোয়ার হোসেন জানান, কতজন মারা গেছে আমরা জানি না। এখন আমরা সবাই ছত্রভঙ্গ হয়ে আছি। থানার অবস্থা সম্পর্কেও জানি না। তবে মনে হয় থানায় কেউ নেই। তবে সেনাবাহিনী আছে।
জানা গেছে, দুপুর ১২টার দিকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শিক্ষার্থীসহ কয়েকশ’ মানুষ একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি ঈদগায়ের সামনে পৌঁছলেই পুলিশ বাঁধা দেয়। তখন তাদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ বাঁধে। এ সময় পুলিশ রাবার বুলেট, কাঁদানে গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুঁড়তে থাকে। তখন আন্দোলনকারীরাও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে উলে­খিত ৬ জন নিহত হয়। তবে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে অনেকেই ধারণা করছেন।
আহতদের বানিয়াচং, হবিগঞ্জ, সিলেটসহ বিভিন্ন স্থানে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। উপজেলা সদরের আশপাশের গ্রামগুলোর লোকজন থানা ঘেরাও দিয়ে রেখেছেন।
নোয়াখালী : জেলার সোনাইমুড়ীতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী, বিএনপি ও জামায়াতের কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে ২ পুলিশ সদস্যসহ ৮ জন নিহত হয়েছেন। সোমবার বিকেল সোয়া চারটার দিকে সোনাইমুড়ী থানায় হামলা করতে গেলে সংঘর্ষে হতাহতের এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শী, আন্দোলনকারী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, থানায় আওয়ামী লীগের নেতারা আছেন এমন সংবাদে সোমবার বিকেল সোয়া চারটার দিকে আন্দোলনকারী, স্থানীয় বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মীরা থানা ঘিরে ফেলে। তারা ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করলে পুলিশ ফাঁকা গুলি ছোঁড়ে। এতে আন্দোলনকারীর পিছু হটে এবং থানার সামনের দোকানপাট আগুনে পুড়িয়ে দেয়। একপর্যায়ে তারা থানা চত্ত¡রে ঢুকে পুলিশের গাড়ি ও মোটরসাইকেলে আগুন দেয়। এ সময় পুলিশ গুলি চালায়। এতে ঘটনাস্থলেই ২ জনের মৃত্যু হয়। গুলিবিদ্ধ ১৮ জনকে হাসপাতালে নেওয়ার সময় মারা যান আরও ২ জন। হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও দু’জনের মৃত্যু হয়। সংঘর্ষে ২ পুলিশও নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া গুরুতর আহত হয়েছেন এসআই জাকির।
তবে সোনাইমুড়ী থানার ওসি বখতিয়ার উদ্দিন সংঘর্ষের ব্যাপারে বলেছেন, থানায় কোনো ঘটনা ঘটেনি।
বরিশাল : সাবেক সিটি মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল­াহ’র বাসভবন থেকে অগ্নিদ্বগ্ধ তিনজনের লাশ উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিস। সোমবার রাত ৮টার দিকে নগরের কালিবাড়ি রোডের সেরনিয়াবাত ভবন থেকে লাশগুলো উদ্ধার করা হয় বলে বরিশাল সদর ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার রবিউল আল আমিন জানিয়েছেন। তবে মৃতদের কারো নাম পরিচয় নিশ্চিত করতে পারেননি তিনি।
বরিশাল সদর ফায়ার সার্ভিসের ফায়ার ফাইটার উজ্জ্বল খান বলেন, বরিশালের সাবেক সিটি মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল­াহ’র দোতলা বাসভবনের সিঁড়ির ওপর থেকে তিনটি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তিনটি লাশ পুরুষের। তাদের বয়স আনুমানিক ৩৫ থেকে ৪০ বছর হবে।
লাশ উদ্ধার করে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলে জানান তিনি। এদিকে ঘটনার পর কোতোয়ালি থানায় খবর দেওয়া হলেও পুলিশ আসেনি। পরে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে তারা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, এর আগে বিকেল তিনটার দিকে সেরনিয়াবাত ভবনে আগুন দেয় বিক্ষোভকারীরা। সন্ধ্যার পর ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা বাসায় প্রবেশ করার সুযোগ পায়। তখন লাশের সন্ধান পায় তারা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, আগুনে পুড়ে যাওয়ার পর কিছু লোকজন সেরনিয়াবাত ভবনের যা পেয়েছে, নিয়ে যাচ্ছে।

্রিন্ট

আরও সংবদ