খুলনা | শনিবার | ২১ জুন ২০২৫ | ৭ আষাঢ় ১৪৩২

মুক্ত আমান আযমী মীর আহমাদ ও ব্যারিস্টার আরমান

‘আয়নাঘরে হতো নির্মম নির্যাতন অনেক রাত ঘুমাতে পারিনি’

খবর প্রতিবেদন |
০২:০১ এ.এম | ০৭ অগাস্ট ২০২৪


দীর্ঘদিন নিখোঁজ থাকার পর খোঁজ মিলেছে জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির প্রয়াত গোলাম আযমের মেজো ছেলে সেনাবাহিনীর সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহিল আমান আযমী ও ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর নেতা মীর কাসেম আলীর ছোট ছেলে মীর আহমাদ বিন কাসেম আরমানের। সোমবার মধ্যরাতে আয়নাঘর থেকে মুক্ত হয়েছেন। মঙ্গলবার সকালে জামায়াতে ইসলামীর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এ তথ্য জানানো হয়।
ফেসবুক পেজে বলা হয়েছে, ‘আমিরে জামায়াত অধ্যাপক গোলাম আযম রাহিমাহুল্লাহর সুযোগ্য সন্তান বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (সাবেক) আব্দুল্লাহিল আমান-আল আযমী ও মীর কাসেম আলীর ছোট ছেলে মীর আহমাদ বিন কাসেম (আরমান) ফিরে এসেছেন। আল্লাহ তায়ালা যেন সব গুমকৃতদের আমাদের মাঝে ফিরিয়ে দেন।’
২০১৬ সালের ৯ আগস্ট ব্যারিস্টার আহমদ বিন কাশেম আরমানকে নিজ বাসা থেকে ধরে নিয়ে যায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় মিরপুর ডিওএইচএস’র ১১ নম্বর সেকশনের ৭ নম্বর রোডের ৫৩৪ নম্বর বাড়ির দোতালায় থাকতেন তিনি। এই বাসা থেকেই দুই শিশু সন্তান, স্ত্রী ও বোনের সামনে থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল তাকে। এরপর আর আনুষ্ঠানিকভাবে তার হদিস পাওয়া যায়নি।
সোমবার রাতে কর্নেল সামসের নেতৃত্বে রাতে ২০ থেকে ২৫ জন সাবেক সেনা কর্মকর্তা ও গুম হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনরা রাজধানীর ক্যান্টনমেন্টের কচুক্ষেত এলাকায় অবস্থান নেন।
তারা গণমাধ্যমকে বলেন, ডিজিএফআইয়ের আয়না ঘরে অনেক মানুষকে অন্যায়ভাবে বন্দি করে রাখা হয়েছে। বন্দিদের ছাড়িয়ে নিতে আমরা অবস্থান নিয়েছি। তাদের অক্ষত অবস্থায় হস্তান্তর না করা পর্যন্ত আমরা ফিরবো না। বন্দিদের মুক্তি না দেয়া পর্যন্ত আমাদের অবস্থান চলবে। আমাদের সঙ্গে গুম হওয়া স্বজনদের সংগঠন মায়ের ডাকও যোগ দেয়। মুক্তির জন্য জন্য চাপ প্রয়োগের এক পর্যায়ে মুক্ত হওয়ার সংবাদ পাওয়া যায়।
এ সময় উপস্থিত লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অবঃ) হাসিনুর রহমান বীর প্রতীক বলেন, বছরের পর বছর ডিজিএফআই, র‌্যাব ও পুলিশের বন্দিশালায় অসংখ্য মানুষকে গুম করে রাখা হয়েছে। রাতের মধ্যে তাদের মুক্তি দিতে হবে। তা না হলে দায়মুক্তির জন্য তাদের মেরে ফেলা হতে পারে। যদি আমাদের কাছে হস্তান্তর করা না হয় তাহলে পরবর্তী ঘটনার দায় ডিজিএফআইয়ের বর্তমান কর্মকর্তাদের নিতে হবে। আমরা দাবিগুলো সেনা কর্তৃপক্ষ ও সেনাপ্রধানকে পাঠিয়েছি। তাদের উত্তরের অপেক্ষায় আছি।
‘আয়নাঘরে হতো নির্মম নির্যাতন : বাংলাদেশের ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্সের (ডিজিএফআই) আয়নাঘরে প্রচুর লোক আটকা আছে বলে জানিয়েছেন সেখান থেকে ছাড়া পাওয়া ভুক্তভোগীরা। আয়নাঘরে আটকে থাকা লোকদের মুক্তির দাবিও করেছেন তারা। একইসঙ্গে এসব ঘটনায় জড়িত ডিজিএফআই-এর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিচার দাবি করেছেন তারা। 
আয়নাঘর থেকে ফিরে আসা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ভুক্তভোগী বলেন, আমাকে গুম করে রাখা হয়। সেটাকে জয়েন্ট ইন্টোরেগেশন সেল বলে। সেটাকে ডেভলপ করে আয়নাঘর বানানো হয়। প্রচুর লোক সেখানে আটকানো আছেন। তারা মানবেতর জীবন যাপন করছেন। সেখানে নির্যাতন চলছে, দীর্ঘদিন তারা রাতে ঘুমাতে পারেন না। এটা একটা স্বাধীন দেশে হতে পারে না। আমরা কারও পরাধীন না। কাউকে এভাবে উঠিয়ে নিয়ে রাখা যায় না।
তিনি বলেন, সেনাবাহিনী আমাদের গর্বের বাহিনী। সেনাবাহিনী স্বাধীনতার প্রতীক। সেনাবাহিনীর উপর বন্দুক রেখে ডিজিএফআই-এর অসৎ কিছু কর্মকর্তা রাজনৈতিক সুবিধা নেওয়ার জন্য সেনাবাহিনীকে বদনামে ফেলতে পারে না। এদেরকে চিহ্নিত করতে হবে এবং বিচারের আওতায় আনতে হবে। এছাড়া আয়নাঘরে যারা বন্দি আছেন, তাদেরকে মুক্তি দিতে হবে। আমরা চাই শান্তি ও শৃঙ্খলা।
তিনি আরও বলেন, ভেতরে যারা আটকা আছেন তাদের মুক্তি দিতে হবে। তাদেরকে চোখ বেঁধে দূরে কোথাও ফেলে দেবে, এমনটা আমরা হতে দেব না। আমরাও সেনাবাহিনীর অফিসার। অল্প কয়েকজন ডিজিএফআইয়ের সদস্যের জন্য আমরা এটা হতে দিতে পারি না। ডিজিএফআই দেশ চালায় না।
আয়নাঘর থেকে ফিরে আসা সাবেক রাষ্ট্রদূত মারুফ জামান বলেন, আমি সরকারি আমলা ছিলাম, সচিব হয়েছিলাম। পরে কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রদূতও হয়েছি। আমাকে কিছু লোক বহুদিন ধরেই ফলো করছিল। আমি ২০১৭ সালের ৪ ডিসেম্বর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ছোট মেয়েকে আনতে ধানমন্ডির বাসা থেকে যাওয়ার পথে ৮-১০ জন লোক আমার গাড়ি ভেঙে দুইটি পিস্তল মাথায় ঠেকিয়ে আমাকে নিয়ে গেছে। আমাকে আয়না ঘরে নিয়ে এখানে রেখেছে। আমি যেহেতু সেনাবাহিনীর অফিসার, এই ঢাকা সেনানিবাসেই আমি ছিলাম। তাই আমি বুঝতে পেরেছিলাম আমাকে কোথায় রাখা হয়েছে। সেখানে প্রচণ্ড নির্যাতন করা হতো লোকজনকে। গুটি কয়েক পলিটিক্যাল অফিসার যারা সেনাবাহিনীর মান ইজ্জত ডুবিয়ে দিয়েছে এই ডিজিএফআই থেকে। কত যে লোক মেরেছে তারা, সেটা আল্লাহ জানে। 
তিনি বলেন, আমি কখনও রাজনীতি করিনি, আমি কোনও দলও করিনি। আমি সরকারি কর্মকর্তা ছিলাম। আমার দোষ ছিল আমি লেখালেখি করতাম। তারা কি আমার কলমটাকেও কন্ট্রোল করতে চায়। আমি তো কোনও বিদ্রোহ লিখি নাই। আমি তো কোনও দেশের বিরুদ্ধে লিখি নাই। আমি চেয়েছিলাম ন্যায় বিচার আর এই ন্যায় বিচার চাওয়ার জন্য আমাকে ১৬ মাস মাটির তলে একটি রুমে আয়নাঘরে ফেলে রাখবে? আমি যে কত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি ফিজিক্যালি, সেটা বলে বোঝাতে পারবো না।
তিনি দাবি জানিয়ে বলেন, সবার মুক্তি চাই এবং যারা এটা করেছে তাদের বিচার চাই। এরা সেনাবাহিনীর কলঙ্ক ও জাতির কলঙ্ক। তাদেরকে যেন কোনদিন ছাড়া না হয়। যারা ভেতরে আটকা আছে তাদের মুক্তি চাই, জনগণ তাদের মুক্তি চায়।
 

্রিন্ট

আরও সংবদ