খুলনা | শুক্রবার | ০৬ জুন ২০২৫ | ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

কলেজ ছাত্র আমিনুরকে গুলি করে হত্যার অভিযোগ

সাতক্ষীরার সাবেক এসপি মঞ্জুরুল, এএসপি মনির ও ওসি ইনামুলসহ ২৮ জন আসামি

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা |
০১:২২ এ.এম | ২০ অগাস্ট ২০২৪


একজন কলেজ ছাত্রকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে সাতক্ষীরার সাবেক পুলিশ সুপার চৌধুরী মঞ্জুরুল কবীর, তৎকালীন সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) কাজী মনিরুজ্জামান, সাতক্ষীরা সদর থানার তৎকালিন ওসি মোঃ ইনামুল হকসহ ২৮ জনের বিরুদ্ধে আদালতে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। কালিগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ রঘুনাথপুর গ্রামের মফিজউদ্দিন সরদারের ছেলে মোঃ সিরাজুল ইসলাম বাদী হয়ে সোমবার জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী-১ নং আদালতে এই মামলাটি দায়ের করেন।
আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নয়ন বড়াল মামলাটি তদন্ত সাপেক্ষে এজাহার হিসেবে গণ্য করার জন্য সাতক্ষীরা সদর থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন। ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল সাতক্ষীরা শহরের কামালনগরের একটি ছাত্রাবাসে আমিনুর রহমানকে হত্যাসহ আরো ৭ জনকে গুলি করার অভিযোগে এ মামলাটি দায়ের করেন তিনি। নিহত কলেজ ছাত্র আমিনুর রহমান সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ রঘুনাথপুর গ্রামের মফেজ সরদারের ছেলে। 
মামলার আসামিরা হলেন, সাতক্ষীরার সাবেক পুলিশ সুপার চৌধুরী মঞ্জুরুল কবীর, সাবেক পুলিশ সুপার ও তৎকালীন সিনিয়র সহকারি পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) কাজী মনিরুজ্জামান, সদর থানার সাবেক অফিসার ইনচার্জ মোঃ ইনামুল হক, এসআই যথাক্রমে আবুল কাশেম, হুমায়ুন কবীর, আব্দুল হান্নান, হান্নান শরীফ, আবুজার গিফারী, বিধান কুমার বিশ্বাস, ইয়াছিন আলী ও এএসআই লিটন বিশ্বাস, কনস্টেবল জাহাঙ্গীর আলম, বেলায়েত হোসেন, জিল­ুর রহমান, বাবুল হোসেন, ফারুখ হোসেন, শেখ আলম, হাবিবুর রহমান, রাসেল মাহমুদ, ওমর ফারুক, আব্দুর রহমান, আবিদুর রহমান, আসাদুজ্জামান, মোঃ আলী হোসেন ও বদরুল আলম এবং  আ’লীগ নেতা সাতক্ষীরা শহরের কামালনগর গ্রামের মোঃ আনারুল ইসলাম রনি ও মোঃ বাবর আলী এবং  যুবলীগ নেতা এস এম ইউসুফ সুলতান। 
মামলার বিবরণে জানা যায়, ভিকটিম আমিনুর রহমান লেখাপড়া করার জন্য সাতক্ষীরা শহরের কামালনগর সরকারি কবরস্থানের উত্তর পাশে জনৈক মুকুলের ছাত্রাবাসের একটি রুমে ভাড়া থাকতো। তার সাথে ওই ছাত্রাবাসে আবু তালেব, আক্তার হোসেন, আজিজুল ইসলাম, অব্দুস সবুর, আব্দুল গফুর, নুর মোহাম্মাদ ও ইমরান হোসেন নামের আরো সাতজন ছাত্র থাকতো। ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল বেলা ৩টার দিকে মৃত ভিকটিমসহ অন্যান্য ভিকটিমগণ সকলে একত্রিত হয়ে দুপুরের ভাত খাওয়াকালীন ছাত্রাবাসের বাহিরের প্রাচীরের গেট ধাক্কানোর শব্দে শুনে শেখ আব্দুল গফুর নামের এক ছাত্র গেট খুলে দেয়। এ সময় আসামি এসআই আব্দুল হান্নান তার হাতে থাকা পিস্তল আব্দুল গফুরের বুকে ধরে শব্দ করতে নিষেধ করে ভিতরে ঢোকে। এ সময় বাইরে অবস্থানকারী আগে থেকে ওৎ পেতে থাকা অন্যান্য আসামিরা একত্রে বাড়ির মধ্যে ও খাবার ঘরে ঢুকে খাওয়ারত অবস্থায় মৃত ভিকটিম আমিনুর রহমানসহ অন্যান্য ভিকটিমদের অস্ত্রের মুখে ছাত্রাবাসের বারান্দায় নিয়ে আসে। সেখানে আসামি এসআই আবুল কাশেম হত্যার উদ্দেশ্যে তার হাতে থাকা পিস্তল দ্বারা ভিকটিম আমিনুর রহমানকে পিছন দিক থেকে পিঠের বাম পার্শ্বে গুলি করে। গুলি করার সাথে সাথে সে মেঝেতে পড়ে গেলে পায়েও গুলি করে। একপর্যায় গুরুতর রক্তাক্ত অবস্থায় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মারা যায় আমিনুর। যা মামলার সাক্ষীরা প্রত্যক্ষ করে।  এ সময় মামলার সাক্ষী অন্যান্য ভিকটিম (আবু তালেব, আক্তার হোসেন, আজিজুল ইসলাম, অব্দুস সবুর, আব্দুল গফুর, নুর মোহাম্মাদ ও ইমরান হোসেন) দের প্রত্যেকের পায়ের হাটুতে আগ্নেয়াস্ত্র দ্বারা গুলি করে রক্তাক্ত জখম করে। পরে আসামিরা ভিকটিমদের (স্বাক্ষীদের) ব্যবহৃত নিজস্ব ৪টা মটর সাইকেল, বাই-সাইকেল, মোবাইল ফোনসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রাদি ও জিনিষপত্রাদি নিয়ে আসামিদের ব্যবহৃত এ্যাম্বুলেন্স যোগে নিয়ে যায়। এছাড়া অন্যান্য গুরুতর জখমী ভিকটিমদের (সাক্ষীদের) একটি এ্যাম্বুলেন্স যোগে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়।
মৃত ভিকটিম আমিনুর রহমানের ময়না তদন্ত শেষে বাদীর মেজ ভাই মোঃ হাবিবুর রহমান বরাবর লাশ দাফন, কাফনের স্বার্থে হস্তান্তর করা হয়। পরে পুলিশ প্রহরায় মৃতের বাড়িতে নিয়ে লাশ দাফন করা হয়। অন্যান্য জখমী ভিকটিমদের সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা জখমের গুরুতর প্রকৃতি অনুধাবন করে উন্নত চিকিৎসার স্বার্থে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করে। পুলিশের তত্ত¡াবধানে সরকারি এ্যাম্বুলেন্স যোগে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়।
পরে আসামিরা পরস্পর যোগাযোগে সংঘটিত উলে­খিত ঘটনা ভিন্ন খাতে তথা রাজনৈতিক অসৎ উদ্দেশ্যে পরিগণিত কবার স্বার্থে মৃত ভিকটিম সহ অন্যান্য জখমী ভিকটিমদের বিরুদ্ধে আসামিদের হেফাজতে রক্ষিত অস্ত্রাদি দ্বারা মিথ্যা বর্ণনায় সাতক্ষীরা থানার মামলা নং- ৭৫, উদ্ভুত জি আর- ৩২৮/১৪ (সাতঃ) এবং মামলা নং- ৭৬, উদ্ভূত জি আর- ৩২৯/১৪ (সাতঃ) মামলা দায়ের করা হয়।
বাদী পক্ষের আইনজীবী এড. এটিএম বাসারুতুল­াহ আওরঙ্গী বাবলা বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, ওই সময়কার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের কারণে আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা সম্ভব না হওয়ায় রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তণ হওয়ায় মামলাটি দায়ের করতে বিলম্ব হয়েছে। তিনি আরো জানান, এ মামলা দায়েরের সময় তার সহযোগী হিসেবে এড. হাফিজুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

্রিন্ট

আরও সংবদ