খুলনা | বুধবার | ১৫ জানুয়ারী ২০২৫ | ২ মাঘ ১৪৩১

কালো টাকার বিরুদ্ধে অভিযান পদ্ধতিগত সংস্কারও করতে হবে

|
১২:০৬ এ.এম | ৩১ অগাস্ট ২০২৪


দুর্নীতি সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করে গেছে। রাষ্ট্রের সব উন্নয়ন প্রচেষ্টা বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে লাগামহীন দুর্নীতির কারণে। তাই ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের ফলে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর স্বাভাবিকভাবেই দাবি উঠেছে, দুর্নীতির লাগাম টানতে হবে। অন্তর্বর্তীসরকারও বিষয়টি নিয়ে গুরুত্বের সঙ্গে চিন্তা-ভাবনা করছে।
সরকার কালো টাকা সাদা করার বিধান বাতিল করেছে। দায়িত্বশীল সূত্রের বরাত দিয়ে এ বিষয়ে গণমাধ্যমের প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়, সরকারের চারটি সংস্থার সমন্বয়ে শিগগির এ ধরণের একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হতে পারে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল (সিআইসি) ও মাঠ পর্যায়ের প্রশাসনের সমন্বয়ে গঠিতব্য টাস্কফোর্স কিভাবে অভিযান পরিকল্পনা ও পরিচালনা করবে, তা-ও প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, আগামী অক্টোবর নাগাদ টাস্কফোসে সাঁড়াশি অভিযান শুরু হতে পারে। কোনো কারণে তা সম্ভব না হলে আগামী জানুয়ারির মধ্যে তা শুরু হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে উলে­খ করা হয়েছে।
সা¤প্রতিক সময়ে গণমাধ্যমে বেশ কিছু সরকারি কর্মকর্তার হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির খবর প্রকাশিত হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরও কোনো কোনো রাজনীতিবিদের বাড়ি থেকে কোটি কোটি টাকা উদ্ধারের খবর প্রকাশিত হয়েছে। নিকট অতীতে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) ও দুর্নীতিবিরোধী অন্যান্য সংস্থার গবেষণায়ও উঠে এসেছে তিনটি গোষ্ঠীর লাগামহীন দুর্নীতির কথা। গোষ্ঠী তিনটি হচ্ছে রাজনীতিবিদ, সরকারি কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ী। মূল্যস্ফীতির জাঁতাকলে পিষ্ট হতে থাকা সাধারণ মানুষের সীমাহীন দুর্ভোগের মধ্যে সুবিধাভোগী এসব গোষ্ঠীর লাগামহীন দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতা যেন জাতির সঙ্গে পরিহাসের শামিল হয়ে উঠেছিল। তাই দুর্নীতির বিরুদ্ধে মানুষের প্রতিবাদ এক নতুন মাত্রা পায়।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার যে চিন্তা অন্তর্বর্তী সরকার করছে, তা অবশ্যই অত্যন্ত সময়োপযোগী, যদিও এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের মধ্যে এক ধরণের মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়। অনেকেই একে সময়ের প্রয়োজন হিসেবে উলে­খ করেছেন। তাঁরা এতে ক্ষমতাবেষ্টিত ও ক্ষমতার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের প্রাধান্য দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। কেউ কেউ মনে করছেন, এ ধরণের অভিযানের ফলে সমাজে আতঙ্ক তৈরি হতে পারে। নানা ক্ষেত্রে তার বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। প্রায় সবাই মনে করছেন, অভিযানের পাশাপাশি পদ্ধতিগত সংস্কার বা সিস্টেম উন্নয়নের প্রয়োজন রয়েছে, যাতে দুর্নীতির মাধ্যমে উপার্জিত অর্থ বা অবৈধ আয় সহজেই ধরা পড়ে যায় এবং পাচার রোধ করা যায়।
অতীতেও এ ধরণের অভিযান হয়েছে। ১৯৯৬ সালে বিচারপতি হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন তত্ত¡াবধায়ক সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর শুরু হয়েছিল যৌথ অভিযান। ২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত¡াবধায়ক সরকারের আমলেও একই ধরণের অভিযান পরিচালিত হয়। তখন আতঙ্কে দুর্নীতিবাজদের অনেকে রাস্তায় গাড়ি ও টাকার ব্যাগ ফেলে যায়। কিন্তু পদ্ধতিগত সংস্কার তেমনভাবে না হওয়ায় পরবর্তী রাজনৈতিক সরকারগুলোর আমলে আবারও ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে।
আমরা চাই, দুর্নীতির বিরুদ্ধে শক্তিশালী অভিযান পরিচালিত হোক। পাশাপাশি প্রয়োজনীয় পদ্ধতিগত সংস্কারগুলোও সুসম্পন্ন করা হোক।
 

্রিন্ট

আরও সংবদ