খুলনা | রবিবার | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৩১ ভাদ্র ১৪৩১

পুলিশের করা মামলা : পুরোনো কর্মসংস্কৃতির অবসান জরুরি

|
১২:০৭ এ.এম | ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৪


যেই মামলায় ৫ আগস্টের আগে আসামি ছিলেন বিএনপি, জামায়াত ও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা, সেই মামলায় এখন আসামি ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের নেতা-মন্ত্রীরা। সরকার বদলের সঙ্গে সঙ্গে মামলার আসামি বদলের ঘটনা ন্যায়বিচারপ্রার্থী মানুষকে উদ্বিগ্ন না করে পারে না।
গণমাধ্যমের খবর থেকে জানা যায়, ৫ আগস্টের আগে ৬৪ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন থানায় পুলিশ যে ৩৪টি মামলা করেছিল, তাতে আসামি ছিলেন অজ্ঞাতনামা বিএনপি, জামায়াত ও কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা। একই সময়ে স্বজনদের বাদী করে করা তিনটি হত্যা মামলায়ও একই ঘটনা ঘটেছে। এসব মামলায় এখন আওয়ামী লীগের নেতা, সাবেক মন্ত্রী ও কর্মকর্তাদের গ্রেফতার করে রিমান্ডে নেওয়া হচ্ছে। এসব মামলার এজাহার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নিহত ব্যক্তিদের স্বজনেরাও। তাঁদের দাবি, তাঁরা এমন এজাহার দেননি। পুলিশ মনগড়া এজাহার দিয়েছে। এই প্রসঙ্গে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক নূর মোহাম্মদ এ ঘটনাকে হাস্যকর উলে­খ করে বলেন, কাউকে হুট করে একটা মামলায় গ্রেফতার দেখানো যায় না। গ্রেফারের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট কারণ লাগে।
নিউমার্কেট এলাকায় নিহত হকার শাহজাহান আলী হত্যা মামলায় সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও প্রধানমন্ত্রীর সাবেক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানকে গ্রেফতার দেখিয়ে রিমান্ডে নেওয়া হয়। অথচ মামলার এজাহারে বলা হয়েছিল, কোটাবিরোধী অজ্ঞাতনামা আন্দোলনকারীরা, জামায়াত-শিবির ও বিএনপি’র সশস্ত্র আসামিরা এক হয়ে অতর্কিতভাবে শাহজাহান আলীর ওপর আক্রমণ করেন। মামলার বাদী আয়েশা বেগম  বলেন, তাঁর ছেলেকে সরকারি লোকজন গুলি করে মেরেছেন।একই দিন নিহত ছাত্রলীগের কর্মী ঢাকা কলেজের ছাত্র সবুজ আলীর জানাযা হয় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এবং তাতে দলটির নেতা-কর্মীরা অংশ নেন। এই হত্যাকান্ডে উস্কানিদাতা ও হুকুমদাতা হিসেবে আনিসুল হক ও সালমান এফ রহমানকে আসামি করা হয়েছে ক্ষমতার পালাবদলের পর।
১৯ জুলাই পল্টন এলাকায় নিহত রিকশাচালক কামাল মিয়ার স্ত্রী ফাতেমা খাতুন বলেন, মামলার বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। স্বামীর লাশ বুঝে নেওয়ার সময় থানা-পুলিশ বিভিন্ন কাগজে সই নিয়েছে। পরে তিনি জানতে পেরেছেন যে পুলিশের গুলিতে তাঁর স্বামী মারা গেছেন। যেখানে স্ত্রীর ভাষ্য অনুযায়ী কামাল মিয়া পুলিশের গুলিতে মারা গেলেন, সেখানে একবার বিএনপি-জামায়াতের, আরেকবার আওয়ামী লীগের নেতাদের আসামি করার পেছনে রহস্য কী?
এখানে ঢাকার কয়েকটি উদাহরণ উঠে এসেছে। সারা দেশেই এ ধরণের মামলা করে অসংখ্যা নেতা-কর্মীকে আসামি করে হয়রানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ আছে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে করা এসব মামলার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মীরাও। আগে যদি পুলিশ আওয়ামী লীগকে খুশি করার জন্য বিএনপি জামায়াতের কর্মীদের নামে মামলা করে থাকে, এখন তারা কাদের খুশি করছে? কোনো ঘটনায় ১০০-১৫০ জন অজ্ঞাতনামা আসামি করার অর্থ হলো, পুরো বিচারপ্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করা। এতে মামলাগুলো দুর্বল হয়ে পড়বে, যা ন্যায়বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে অন্তরায়।বিগত সরকারের আমলে ক্ষমতাসীনদের অনেকেই নানা রকম অপকর্মে জড়িত ছিলেন। তাঁদের বিরুদ্ধে অবৈধ পথে অর্থ উপার্জন, ব্যাংক থেকে অর্থ লোপাট ও বিদেশে পাচারের গুরুতর অভিযোগ আছে। এসব নিয়ে মামলা না করে যিনিই ধরা পড়েছেন, যাঁকেই ধরা হচ্ছে, তাঁর বিরুদ্ধে হত্যা মামলা পুলিশের পুরোনো কর্মসংস্কৃতির কথাই মনে করিয়ে দেয়।
 

্রিন্ট

আরও সংবদ