খুলনা | বুধবার | ১৫ জানুয়ারী ২০২৫ | ২ মাঘ ১৪৩১

গুমের বিরুদ্ধে দৃঢ় পদক্ষেপ: অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্যোগকে সাধুবাদ

|
১২:১৯ এ.এম | ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৪


অবশেষে জাতিসংঘের গুম ও নির্যাতনবিরোধী আন্তর্জাতিক কনভেনশনে স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ, যা ছিল প্রত্যাশিত। দেশের মানুষকে গুম হওয়া থেকে রক্ষা করতে বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এ সনদে স্বাক্ষর করেন। দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই অন্তর্বর্তী সরকারের এমন উদ্যোগ সাধুবাদযোগ্যই শুধু নয়, গুমের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান যে দৃঢ়, তাও স্পষ্ট হয়েছে। শুধু তাই নয়, বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগের শাসনামলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধানে পাঁচ সদস্যের কমিশনও গঠন করেছে সরকার। গত মঙ্গলবার জারি করা এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ‘কমিশন অব ইনকোয়ারি এ্যাক্ট, ১৯৫৬’ অনুসারে তদন্তকাজ সম্পন্ন করে কমিশনকে আগামী ৪৫ কার্যদিবসের মধ্যে সরকারের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে হবে। এতে আরও বলা হয়, আইন-শৃঙ্খলা প্রয়োগকারী সংস্থা তথা বাংলাদেশ পুলিশ, র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব), বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ, অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), বিশেষ শাখা, গোয়েন্দা শাখা, আনসার ব্যাটালিয়ন, জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই), প্রতিরক্ষা বাহিনী, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তর (ডিজিএফআই), কোস্ট গার্ডসহ দেশের আইন প্রয়োগ ও বলবৎকারী কোনো সংস্থার কোনো সদস্যের মাধ্যমে জোরপূর্বক গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধানের জন্য এ তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়েছে।
জাতিসংঘের গুম ও নির্যাতনবিরোধী আন্তর্জাতিক কনভেনশনটি ২০০৬ সালে গঠিত হলেও বাংলাদেশ কেন এতদিন এতে স্বাক্ষর করেনি, সে প্রশ্নের জবাব দেরিতে হলেও আমরা পেয়েছি। বিগত সরকারের পতনের পর স¤প্রতি আয়নাঘরসহ গুম-খুনের নানা তথ্য বেরিয়ে আসায় এটা স্পষ্ট যে, রাষ্ট্রীয় ইন্ধনে এ ধরণের অপরাধপ্রবণ ব্যক্তিরা এতটাই বেপরোয়া হয়ে উঠেছিল যে, তারা কোনো কিছুরই তোয়াক্কা করতো না। এককথায়, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তাদের দায়িত্বের বিপরীতে ব্যবহার করা হয়েছে। বলা বাহুল্য, বিনাবিচারে কাউকে আটক বা বন্দি রাখা বা গুম করা সম্পূর্ণ বেআইনি। একইসঙ্গে তা দেশীয় ও আন্তর্জাতিক আইনসহ মানবতা ও মানবাধিকারের পরিপন্থি।
দেশে মানবাধিকারের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সমস্যাগুলো হলো-বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, রাষ্ট্রীয় বাহিনীর হাতে গুম, বিনা বিচারে আটক, নির্বিচারে অবৈধভাবে আটক, সংখ্যালঘু স¤প্রদায়ের ওপর হামলা ও নির্যাতন, খুন, সন্ত্রাস, নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা ইত্যাদি। বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডসহ এসব ঘটনার জন্য জাতিসংঘ ও বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা, যেমন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল তৎকালীন সরকারকে নিন্দা জানালেও তাতে তারা কর্তপাত করেননি। অপরাধের এসব পৌনঃপুনিক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে গুমের শিকার ব্যক্তিদের সন্ধানে অন্তর্বর্তী সরকার কর্তৃক বিশেষ কমিশন গঠনের পাশাপাশি জাতিসংঘের গুম ও নির্যাতনবিরোধী আন্তর্জাতিক কনভেনশনে যুক্ত হওয়ার পদক্ষেপটি সময়োচিত, সন্দেহ নেই। স্বাভাবিকভাবেই ধামাচাপা দিয়ে রাখা প্রতিটি গুম-খুনের ঘটনার উদঘাটন জরুরি হয়ে পড়েছে। এসব অপরাধের বিচার ত্বরান্বিত করতে এবং আগামীতে এ ধরণের ন্যক্কারজনক পদক্ষেপের রাশ টানতে অন্তর্বর্তী সরকার যে সদিচ্ছার পরিচয় দিয়েছে, জাতি তা মনে রাখবে নিশ্চয়ই। একইসঙ্গে এখনো যারা নিখোঁজ রয়েছেন, তাদের খুঁজে বের করতে সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে, এটাই প্রত্যাশা।
 

্রিন্ট

আরও সংবদ