খুলনা | রবিবার | ১৩ অক্টোবর ২০২৪ | ২৮ আশ্বিন ১৪৩১

খুলনায় মহানবী (সা.)কে নিয়ে কটূক্তি, অভিযুক্ত যুবকের বিরুদ্ধে মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক |
০৫:০৯ পি.এম | ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪


মহানবী (স.) কে নিয়ে কটুক্তি করার অভিযোগে খুলনার ওই কলেজছাত্রের বিরুদ্ধে সাইবার আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এদিকে যুবকটি এখনও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তার শারীরিক অবস্থার উন্নতি ঘটছে বলে জানা গেছে।

খুলনা সদর থানার ওসি কামাল হোসেন বলেন, ভুক্তভোগীর বসবাস আমার থানা এলাকায়। তাই এ ঘটনায় থানায় ৫ সেপ্টেম্বর রাতে অভিযোগ আসে। প্রাথমিক যাচাই-বাছাই করে অভিযোগটি সাইবার নিরাপত্তা আইনে নথিভুক্ত করা হয়েছে। মামলাটি দায়ের করেছেন নাসির হোসেন নামের এক ব্যক্তি। এ মামলায় ওই তরুণের বিরুদ্ধে সাইবার নিরাপত্তা আইনে ২৭, ২৮ ও ৩১ ধারার অভিযোগ আনা হয়েছে। মামলাটি ৫ সেপ্টেম্বরই নথিভুক্ত করা হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, কলেজছাত্রটি মহানবী (সা.) কে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে কটূক্তি করেন। ৩ সেপ্টেম্বর বিকেলে এ ঘটনার পর থেকে কিছু মাদ্রাসার ছাত্র তাকে খুঁজতে থাকে। ৪ সেপ্টেম্বর রাত পৌনে ৮টার দিকে তাকে খুঁজে পান। এরপর তাকে ধরে মহানগরীর সোনাডাঙ্গায় অবস্থিত ডেপুটি পুলিশ কমিশনারের (সাউথ) কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। এখানে তার মোবাইল যাচাই করা হয়।

তখন তিনি জানান, ৩ সেপ্টেম্বর একটি পোস্টে তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে একটি মন্তব্য করেছিলেন। পরে ভুল বুঝতে পেরে সেটি মুছে দিয়েছেন। কিন্তু কয়েকজন সেই মন্তব্যটির স্ক্রিনশট রেখে দেন এবং তা ছড়িয়ে দিয়ে তাকে বিপদে ফেলেন। এদিকে বিষয়টি জানাজানি হলে লোকজন পুলিশ কমিশনারের কার্যালয় ঘেরাও করে বিক্ষোভ করতে থাকেন। উত্তেজিত জনতা কটূক্তিকারীকে তাদের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য বিক্ষোভ করেন।

খবর পেয়ে সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনীর সদস্যরা সেখানে গিয়ে তাদেরকে শান্ত করার চেষ্টা করেন। এক পর্যায়ে তরুণটি ক্ষমা চান এবং সে কান ধরে ওঠবস করেন। ওই ভবনের তিনতলার এ দৃশ্য নিচের লোকজন জানালা দিয়ে দেখেন। এতেও জনতার ক্ষোভ কমেনি। ফলে বিক্ষোভকারীরা উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। এক পর্যায়ে তারা ওই ভবনের ভেতর ঢুকে পরে ওই যুবককে পিটিয়ে আহত করেন। এরপর সেনা সদস্যরা জনতার রোষানল থেকে তাকে উদ্ধার করেন। এ সময়ে স্থানীয় মসজিদের মাইক থেকে অভিযুক্তের মৃত্যুর খবর প্রচার ও জনতাকে ঘরে ফেরার আহ্বান জানানো হয়। এরপর বিক্ষোভকারীরা ধীরে ধীরে ওই এলাকা ত্যাগ করেন। ৫ সেপ্টেম্বর সকালে প্রশাসন থেকে নিশ্চিত করা হয় ওই তরুণটি মারা যায়নি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (সাউথ) মো. তাজুল ইসলাম জানান, পিটুনিতে আহত তরুণ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। সেখানে তার চিকিৎসা চলছে। তবে নিরাপত্তার স্বার্থে কোথায় কোন হাসপাতালে তা জানানো হচ্ছে না।

এ বিষয়ে আইএসপিআর থেকে ৫ সেপ্টেম্বর বিকালে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত ৪ সেপ্টেম্বর ওই ছাত্র (বয়স ২২ বছর) মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) কে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কটূক্তিমূলক পোস্ট করায় স্থানীয় জনগণ তাকে আটক করে ডেপুটি কমিশনার পুলিশ, খুলনা (দক্ষিণ) এর কার্যালয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উপস্থিত হন। পরে সে স্থানে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার স্থানীয় বাসিন্দা উপস্থিত হয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে এবং অভিযুক্তকে প্রকাশ্যে শাস্তি দিতে আন্দোলন করতে থাকেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যগণ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। এ সময় কিছু উচ্ছৃঙ্খল জনতা ডেপুটি কমিশনার পুলিশ, খুলনা (দক্ষিণ) এর কার্যালয়ে প্রবেশ করে অভিযুক্তের ওপর আক্রমণ চালায়।

সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের আপ্রাণ চেষ্টায় তাকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। বর্তমানে তিনি সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন এবং তিনি আশঙ্কামুক্ত।

সোনাডাঙ্গা থানা পুলিশ জানায়, ডেপুটি পুলিশ কমিশনার কার্যালয়ে ভাঙচুরের ঘটনায় ২০০/২৫০ জন অজ্ঞাতকে আসামি করে একটি মামলার প্রস্তুতি রয়েছে। তবে কেএমপির নতুন কমিশনার দায়িত্ব নেওয়ার পর তার সাথে পরামর্শ করে মামলাটি নথিভুক্ত করা হবে।

বাদী তার অভিযোগে উল্লেখ করেন, গত ৩ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ বনাম পাকিস্তানের খেলা দেখার একপর্যায়ে লক্ষ্য করেন, ফেসবুকে একটি আইডি থেকে মহানবী (স.) কে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ পোস্ট দেয়। গত ৪ সেপ্টেম্বর সকাল অনুমান ১১টার সময় আসামিকে তার খুলনার ভাড়া বাসা থেকে কয়েকজন খুলনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নিয়ে যান। সেখানে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সন্তোষজনক জবাব না পাওয়ায় সবাই মিলে সোনাডাঙ্গা উপ-পুলিশ কমিশনারের (দক্ষিণ) কার্যালয়ে নিয়ে যান। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামি নিজে স্বীকার করে এবং তার মোবাইল ফোন পর্যালোচনা করে ধর্মীয় উস্কানিমূলক পোস্ট করেছে বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। বিষয়টি সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ পেলে হাজার হাজার উৎসুক জনতা বিচারের জন্য ডিসি অফিসের সামনে হাজির হন।

জনতাকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনীর টিম হাজির হয়। উত্তেজিত জনতা একপর্যায়ে ভবনে ঢুকে আসামিকে মারধর করে মারাত্মকভাবে জখম করলে সেনাবাহিনী তাকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যায়। আসামি বর্তমানে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন রয়েছে। আমি রাত্র অনুমান ১২টার দিকে সেখানে গিয়ে হাজার হাজার জনতাকে দেখতে পাই এবং জানতে পারি, আসামি তার ফেসবুক আইডি থেকে মহানবী (স.) কে নিয়ে অনেক অশ্লীল মন্তব্য করেছে, যা ইসলাম ধর্মের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত এনেছে। আসামি এমনটা করায় আইনশৃঙ্খলার অবনতির পাশাপাশি ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত এসেছে। তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার প্রয়োজন মনে করে আমি।
সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন 

্রিন্ট

আরও সংবদ