খুলনা | বৃহস্পতিবার | ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৪ আশ্বিন ১৪৩১

৫ দিনের জন্য ইন্টারনেট বন্ধ

বাড়ছে সহিংসতা, মণিপুরের ৩ জেলায় অনির্দিষ্টকালের কারফিউ জারি

খবর প্রতিবেদন |
০৪:১৫ পি.এম | ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪


ভারতের মণিপুর রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা সামলাতে গিয়ে ঘুম উড়েছে নিরাপত্তা বাহিনীর। সেপ্টেম্বর মাসে ড্রোন হামলা, ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ও তার পরবর্তী সময়ে এখন পর্যন্ত আটজন নিহত হয়েছে সেই রাজ্যে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে মণিপুরে বন্ধ করা হলো ইন্টারনেট পরিষেবা।
দেশটির এই রাজ্যের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সংঘর্ষে প্রাণহানি ঘটেছে। প্রথমবারের মতো রকেট ও ড্রোন হামলারও ঘটনা ঘটেছে। এই গোষ্ঠীগুলো অনেকদিন ধরেই স্বাধীনতার দাবি জানিয়ে আসছিল। গত বছর থেকে স্থানীয় মেইতে ও কুকি চিন নামের দুই জনগোষ্ঠীর সংঘাতের জেরে অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে মণিপুর। এর আগে ২০১৯ সালের ২৯ অক্টোবর লন্ডন থেকে মণিপুরকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে ঘোষণা করেছিলেন দুই বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা।
সর্বশেষ গত সোমবার মণিপুরের জিরিবাম জেলাসহ বেশ কয়েকটি জেলায় নতুন করে জাতিগত সহিংসতা শুরু হয়।
মঙ্গলবার বিকেল ৩টা থেকে আগামী পাঁচ দিনের জন্য (১৫ সেপ্টেম্বর দুপুর ৩টা পর্যন্ত) পুরো রাজ্যে ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। মঙ্গলবার এক নির্দেশিকা জারি করে এ কথা জানিয়েছে মণিপুর সরকার।
অশান্তির আবহে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের গুজব ছড়ানো হচ্ছিল বলে নির্দেশিকায় জানিয়েছে সরকার। পাশাপাশি তিন জেলায় কারফিউ জারি করেছে প্রশাসন। সেপ্টেম্বর মাসের শুরু থেকে একের পর এক যে ঘটনা ঘটেছে, তাতে অশান্তি থামাতে ইম্ফল পূর্ব, ইম্ফল পশ্চিম এবং থৌবল জেলায় জারি করা হয়েছে কারফিউ। এর আগে, ইম্ফল পূর্ব ও পশ্চিমের জেলাশাসক ভোর ৫টা থেকে বেলা ১০টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল করার কথা জানিয়েছিলেন। 
তবে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে মঙ্গলবার বেলা ১১টা থেকে পূর্ববর্তী নির্দেশিকা বাতিল করা হয়েছে। নতুন এক নির্দেশিকা জারি করে এ কথা জানিয়েছেন দুই জেলার জেলাশাসক।
দুই জেলাতেই মঙ্গলবার বেলা ১১টা থেকে সম্পূর্ণ কারফিউ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে জরুরি পরিষেবাকে কারফিউর আওতার বাইরে রাখা হয়েছে। থৌবল জেলাতেও রোববার থেকে ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতার আইনে কারফিউ জারি হয়েছে। পাঁচজন বা তার বেশি সংখ্যক মানুষের জমায়েত সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে সেখানে।
সেপ্টেম্বর মাসে নতুন করে তপ্ত হয়েছে মণিপুরের পরিস্থিতি। ঘুম উড়েছে নিরাপত্তা বাহিনীর। কখনো ড্রোন হামলা, কখনো ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, কখনো পুলিশের অস্ত্রাগার লুটের চেষ্টা। সা¤প্রতিক এই ঘটনাগুলোতে অন্তত আটজনের মৃত্যু হয়েছে। হিংসায় জখম হয়েছেন ১২ জনেরও বেশি মানুষ। সোমবারই এক অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্যের লাশ উদ্ধার হয়েছে। দু’দিন আগেই তাকে অপহরণ করা হয়েছিল বলে অভিযোগ। পুলিশ সূত্রে খবর, ইম্ফল পশ্চিম ও কাঙ্গপোকপি জেলার সীমানাবর্তী অঞ্চল থেকে ওই অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্যের লাশ পাওয়া গেছে।
মণিপুরের উদ্ভূত পরিস্থিতির প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছে শিক্ষার্থীরা। সোমবার ইম্ফলের রাস্তায় স্কুলের পোশাক গায়ে প্রচুর ছাত্র-ছাত্রী ভিড় করেছিল। সহিংসতার বিরুদ্ধে ও স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে প্রতিবাদ জানিয়েছিল শিক্ষার্থীরা। 
ইন্ডিয়া টুডের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিরাজমান আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির কারণে মণিপুরের ইম্ফল পূর্ব ও ইম্ফল পশ্চিম জেলায় কারফিউ জারি করা হয়েছে। ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহতি, ২০২৩-এর ১৬৩ ধারার অধীনে এই আদেশ দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে লাইভ মিন্ট বলছে, মণিপুরে নতুন করে সহিংসতার মধ্যে রাজ্যের ইম্ফল পশ্চিম, ইম্ফল পূর্ব এবং মণিপুরের থাউবাল জেলায় মঙ্গলবার বেলা ১১টা থেকে সর্বাত্মক কারফিউ ঘোষণা করা হয়েছে। 
স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ, পিএইচইডি, প্রেস এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়া এবং আদালতের মতো প্রয়োজনীয় পরিষেবার সাথে জড়িত ব্যক্তিরা কারফিউয়ের আওতামুক্ত থাকবেন। এছাড়া পৌরসভার কর্মকর্তা, বিদ্যুৎ কর্মী, পেট্রোল পাম্পের কর্মী, ফ্লাইটের যাত্রী এবং মিডিয়া কর্মীদেরও চলমান নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
লাইভ মিন্ট বলছে, রাজ্য সরকারের ডিজিপি এবং নিরাপত্তা উপদেষ্টাকে অপসারণের দাবিতে ছাত্রদের ব্যাপক বিক্ষোভের পরিকল্পনা করার প্রেক্ষিতে ইম্ফলের দু’টি জেলায় কারফিউয়ের এই আদেশ দেওয়া হয়েছে। রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি মোকাবিলায় ব্যর্থতার অভিযোগে এই বিক্ষোভের পরিকল্পনা করছে শিক্ষার্থীরা।
একই ভাবে, থাউবালে সোমবার আয়োজিত ছাত্র বিক্ষোভ হিংসাত্মক হয়ে ওঠার পর সেখানেও বাইরে বের হওয়া ও চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। মূলত সোমবার ওই বিক্ষোভের মধ্যে একজন পুলিশ অফিসার গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
এছাড়া ক্রমবর্ধমান সহিংসতা ও অস্থিরতার মধ্যে সোমবার রাজ্যের সকল স্কুল ৯ ও ১০ সেপ্টেম্বর বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন মণিপুরের স্কুল এডুকেশনের ডিরেক্টর।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা, ইন্ডিয়া টুডে এনই, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস ও লাইভ মিন্ট।

্রিন্ট

আরও সংবদ