খুলনা | রবিবার | ২৯ জুন ২০২৫ | ১৫ আষাঢ় ১৪৩২

এইচআরএসএস’র প্রতিবেদন : নিহতদের বেশির ভাগের বয়স ৩০ বছরের মধ্যে

কোটা আন্দোলন ও ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে নিহত ৮৭৫, গুলিতে মৃত্যু বেশি, শীর্ষে ঢাকা

খবর প্রতিবেদন |
১২:৫৫ এ.এম | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪


কোটা সংস্কার আন্দোলন ও ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ১৬ জুলাই থেকে ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৮৭৫ জন নিহত হয়েছেন। গুলিতে বেশির ভাগ মানুষের মৃত্যু ঘটেছে। ১৮ থেকে ২০ জুলাই এবং ৪ থেকে ৭ আগস্ট, এই সাত দিনেই নিহত হয়েছেন ৭৪৮ জন। এ ছাড়া অভ্যুত্থানে আহত হয়েছেন ৩০ হাজারের বেশি মানুষ।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে কোটা সংস্কারের দাবিতে নানা কর্মসূচি ও ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে হতাহতদের বিষয়ে তথ্য বিশ্লেষণ করে এ তথ্য জানিয়েছে হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি (এইচআরএসএস)।
মানবাধিকার সংগঠন এইচআরএসএস শুক্রবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে পর্যালোচনামূলক ওই প্রতিবেদনের কথা জানায়। ১২টি জাতীয় দৈনিক, এইচআরএসএসের তথ্য অনুসন্ধানী ইউনিট ও সারা দেশ থেকে স্বেচ্ছাসেবকদের পাঠানো তথ্য বিশ্লেষণ করে এই প্রতিবেদন করা হয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উলে­খ করা হয়েছে। সংগঠনটির ভাষ্য গণমাধ্যম, হাসপাতাল ও বিভিন্ন মাধ্যম থেকে যেসব বিশ্বাসযোগ্য তথ্য পাচ্ছে তারা, তাতে তাদের মনে হচ্ছে, নিহতের সংখ্যা কমপক্ষে এক হাজার হবে।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতন ঘটে। ওই দিন তিনি দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যান।
এইচআরএসএসের প্রতিবেদনে নিহত ব্যক্তিদের একাংশের বয়স, পেশা, মৃত্যুর কারণ বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ১৬ জুলাই থেকে ৩ আগস্ট পর্যন্ত ৩২৭ জন এবং ৪ আগস্ট থেকে ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত (অনেকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরে মারা যান) ৫৪৮ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক ৭৭ শতাংশ গুলিতে মারা গেছেন। ১৯ থেকে ৩০ বছর বয়সীরা বেশি মারা গেছেন। এ হার ৫৩ শতাংশ। আর ৩০ বছরের মধ্যে বয়স ধরলে, নিহতের হার দাঁড়ায় ৭০ শতাংশে। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক শিক্ষার্থী, এ হার ৫২ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি নিহত হয়েছেন গুলিতে এবং পুলিশের হামলায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ছাত্রলীগকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার জন্য আদেশ দেওয়া হয়। পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাব, আনসার, সোয়াট, বিজিবি ও সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হেলিকপ্টার থেকে গুলির বেআইনি ব্যবহার, কাঁদানে গ্যাসের শেল, এ কে ঘরানার অ্যাসল্ট রাইফেলের মতো প্রাণঘাতী আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করেছে।
শেখ হাসিনার দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর সারাদেশে থানা (৫শ’র বেশি), সরকারি স্থাপনা এবং সংখ্যালঘুদের স্থাপনায় হামলা-ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে।
নিহতদের বেশির ভাগের বয়স ৩০ বছরের মধ্যে : এইচআরএসএস জানিয়েছে, নিহত ৮৭৫ জনের মধ্যে ৭৪৩ জনের নাম জানা গেছে। তাঁদের মধ্যে শিক্ষার্থী, শ্রমজীবী, সাংবাদিক, পেশাজীবী, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, শিশু ও নারীসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী ও সমর্থক আছেন। আন্দোলনে কমপক্ষে ১০৭টি শিশু, ৬ জন সাংবাদিক, ৫১ জন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য এবং ১৩ জন নারী ও মেয়ে শিশু নিহত হয়েছেন।
নিহত ৮৭৫ জনের মধ্যে ৬১৯ জনের বয়স সম্পর্কে তথ্য পাওয়া গেছে বলে উলে­খ করেছে এইচআরএসএস। নিহতদের মধ্যে ৪ বছরের আহাদ ও ৬ বছরের রিয়া গোপসহ প্রায় সব বয়সী মানুষ রয়েছেন। ৬১৯ জনের মধ্যে ১০৭টি (১৭ শতাংশ) শিশু (১৮ বছরের কম বয়সী) রয়েছে। এ ছাড়া ১৯ থেকে ৩০ বছর বয়সী বা তরুণ ৩২৭ (৫৩ শতাংশ) জন, ৩১ থেকে ৫০ বছর বয়সী বা মধ্যবয়সী ১৫৮ (২৬ শতাংশ) জন, ৫০ বছরের বেশি বয়সী ২৭ জন (৪ শতাংশ) বলে উলে­খ করা হয়েছে। অর্থাৎ ৬১৯ জনের মধ্যে ৭০ শতাংশেরই বয়স ৩০ বছরের মধ্যে।
পেশাভিত্তিক তথ্য বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিহতদের মধ্যে ৩৫২ জনের পেশা সম্পর্কে তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে শিক্ষার্থী ১৮৪ জন (৫২ শতাংশ), শ্রমজীবী ৭০ জন (২০ শতাংশ), আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ৫১ জন (৫ শতাংশ)।
নিহত বেশি গুলিতে : প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মোট ৭৭২ জনের মৃত্যুর ধরণ সম্পর্কে তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৫৯৯ জন বা ৭৭ শতাংশ গুলিতে নিহত হয়েছেন। ৬১ জন (৮ শতাংশ) অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা গেছে। ৮৫ জনকে (১১ শতাংশ) পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। অন্যান্য কারণে মারা গেছেন ২৭ জন (৪ শতাংশ)।
প্রতিবেদনে কোন বিভাগে কত নিহত হয়েছেন, সেই তথ্যও দেওয়া হয়েছে। এতে দেখা যায়, নিহত ৮৭৫ জনের মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক ঢাকা বিভাগে ৫৪০ জন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া চট্টগ্রামে ৯১ জন, খুলনায় ৮১ জন, রাজশাহীতে ৬৪ জন, ময়মনসিংহে ৩৮ জন, রংপুরে ২৯ জন, সিলেটে ২০ জন এবং বরিশালে ১৩ জন নিহত হয়েছেন।

্রিন্ট

আরও সংবদ