খুলনা | রবিবার | ১৩ অক্টোবর ২০২৪ | ২৮ আশ্বিন ১৪৩১

পলিব্যাগকে না বলি

ম. জাভেদ ইকবাল |
০২:৩৯ এ.এম | ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪


দশ টাকায় এক মুঠো শাক থেকে হাজার টাকার কেনাকাটায় বিক্রেতা আমাদের হাতে পণ্য পরিবহনের জন্য ধরিয়ে দিচ্ছেন এক বা তার অধিক পলিব্যাগ। সহজ প্রাপ্য আর সহজে বহনের কারণে আমরাও তা খুশি মনে গ্রহণ করে বাড়ি ফিরে আসছি। কিছু সময় পর এই পলিব্যাগের ঠিকানা হচ্ছে কোনো ডাস্টবিন অথবা বাড়ির আনাচে-কানাচে। এটুকুই অধিকাংশরা স্মরণে রাখতে পারি। ফেলে দেওয়া পলিব্যাগ কোথায় যাচ্ছে আর তার ভবিষ্যৎ প্রভাব আমাদের ওপর কীভাবে পড়ছে হাতে গোণা হয়তো কয়েকজন আমরা তা উপলব্ধি করতে পারি। পলিথিনের ক্ষতিকর বিষয়গুলো যদি আমরা সবাই উপলব্ধি করতে পারতাম, এর ব্যবহারে তাহলে আমরা সচেতন হতাম। 
পলিথিন মাটিতে মিশে যেতে সময় লাগে ২০০ থেকে ৪০০ বছর। মাটিতে বা জলাশয়ে থাকা ব্যাগগুলো পরিবেশের জন্য কতটা ক্ষতির কারণ হয়েছে, তা নিয়ে পরিবেশবিদরা বহু বছর ধরেই বলে আসছেন। পরিবেশ বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা আর্থ ডে নেটওয়ার্ক এক প্রতিবেদনে বলছে বিশ্বে প্লাস্টিক দূষণকারী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ ১০ নম্বরে।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, আগামী ১ অক্টোবর থেকে সুপারশপে কোনো পলিথিন শপিং ব্যাগ ও পলিপ্রোপিলিন ব্যাগ রাখা যাবে না এবং ক্রেতাদেরকে দেয়া যাবে না। বিকল্প হিসেবে সব সুপারশপে বা এর সম্মুখে পাট ও কাপড়ের ব্যাগ ক্রেতাদের ক্রয়ের জন্য রাখা হবে বলেও জানান পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে পলিথিন শপিং ব্যাগের নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের লক্ষ্যে স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত সভায় পরিবেশ উপদেষ্টা এ কথা বলেন। তিনি বলেন, বিকল্প হিসেবে সব সুপারশপে বা এর সম্মুখে পাট ও কাপড়ের ব্যাগ ক্রেতাদের ক্রয়ের জন্য রাখা হবে। এখানে তরুণ ও শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ত করা হবে। পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াতে ১ অক্টোবরের শপিং ব্যাগের ব্যানের বিষয়টি ব্যাপকভাবে প্রচার হবে। পত্রিকায় গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে।
বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় এক সপ্তাহের মধ্যে সব সুপারশপের সঙ্গে সভা করে পাটের শপিং ব্যাগের সরবরাহ নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, পরিবেশ অধিদফতর ইএসডিওর সঙ্গে মিলে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে বিকল্প পরিবেশবান্ধব উপাদানে তৈরি, পাট বা বস্ত্রের ব্যাগের উৎপাদনকারীদের নিয়ে একটি মেলার আয়োজন করবে। মেলায় সুপারশপের কর্তৃপক্ষ এবং উৎপাদনকারীরা নিজেদের চাহিদা এবং সরবরাহের বিষয়ে আলোচনা করতে পারবে।       ২০০২ সালে দেশে পলিথিনের শপিং ব্যাগ নিষিদ্ধ করা হয়। এতে বলা হয়, ‘পলিথিনের শপিং ব্যাগ বা অন্য যে কোনো সামগ্রী, যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর, সেসব উৎপাদন, আমদানি, বাজারজাতকরণ, বিক্রয়, বিক্রয়ের জন্য প্রদর্শন, মজুত, পরিবহন ইত্যাদি নিষিদ্ধ। এরপর দুই যুগ পেরিয়ে গেলেও যত্রতত্র পলিব্যাগের ব্যবহার বন্ধ হয়নি। বিভিন্ন সময়ে অভিযান চললেও উৎপাদন ও সরবরাহ কমেনি। পরিবেশ বিনষ্টকারী পলিথিনের উৎপাদন ও বিপণন কার্যক্রম এবং ব্যবহার বন্ধে বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫-এ বিধিনিষেধ আরোপ করা আছে। আইন অনুযায়ী বিভিন্ন পুরুত্বের পলিথিনের উৎপাদন, বিপণন কার্যক্রম ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
শপিংব্যাগের ব্যবহার বন্ধে প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে এই ব্যাগের বিকল্প তৈরি করা প্রয়োজন। এর বিকল্প হতে পারে পাটের ব্যাগ। পাট থেকে এক ধরণের ব্যাগ ইতোমধ্যে আমাদের দেশের বিজ্ঞানী মোবারক আহম্মদ খান তৈরি করেছেন। সেটা দেখতে অনেকটা পলিব্যাগের মতোই। এটার উৎপাদন দ্রুত শুরু করা প্রয়োজন। ক্রেতাদের মানসিক প্রস্তুতিরও প্রয়োজন রয়েছে। ক্রেতারা যেন বাজারে বা অফিসে বা বাইরে বের হলেই সাথে একটি ব্যাগ রাখেন। অর্থাৎ সচেতন হতে হবে নিজেকেই। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে পারলে আরও সুফল মিলবে। তারাই বড়দের বাধ্য করবে শপিংব্যাগের বিকল্প ব্যবহারে।
চারিদিকে পরিবর্তন আর সংস্কার শুরু হয়েছে। সময় এখনই। নিজেদেরেকে বদলে ফেলে পরিবেশ রক্ষায় সামিল হওয়ার সময় এসেছে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটা সুন্দর পরিবেশ যদি আমরা রেখে যেতে না পারি তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আমাদেরকে অভিশাপ দেবে। তাই আসুন, সচেতন হই, সুন্দর পরিবেশ গড়ে তুলি, পলিব্যাগকে না বলি। 
লেখক: উপ-প্রধান তথ্য অফিসার, আঞ্চলিক তথ্য অফিস, খুলনা।

্রিন্ট

আরও সংবদ