খুলনা | বৃহস্পতিবার | ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৪ আশ্বিন ১৪৩১

তদন্ত হলেও নেই অগ্রগতি

সিটি গার্লস কলেজের অধ্যক্ষের পদে নাদিরার নিয়োগে অনিয়ম, রয়েছে নানা অভিযোগ!

এন আই রকি |
০১:৩৪ এ.এম | ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪


খুলনার সিটি গার্লস কলেজের অধ্যক্ষ পদে নাদিরা পারভীনের নিয়োগ নিয়ে নানান অভিযোগ উঠেছে। বিধি বহির্ভূত ভাবে নিয়োগ প্রাপ্ত হয়ে সরকারি বেতন উত্তোলনের কারণে দুর্নীতি দমন কমিশনে লিখিত অভিযোগ জমা পড়ে, আর তার তদন্ত করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর। কিন্তু কলেজের সভাপতি পদে সাবেক কেসিসি মেয়র ও নগর আ’লীগের সভাপতি তালুকদার আব্দুল খালেক থাকায় তদন্ত রিপোর্ট আলোর মুখ দেখেনি। পাশাপাশি অধ্যক্ষ নাদিরা পারভীনের ভাই মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আলমগীর হোসেন নগর আ’লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং প্রভাবশালী হওয়ায় আ’লীগ সরকারের আমলে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায়নি। 
অনুসন্ধানে জানা যায়, কলেজটি প্রতিষ্ঠার পর অধ্যক্ষ ছিলেন জিনাত সুলতানা। তার শিক্ষাগত যোগ্যতা ছিল শিক্ষক নিয়োগ কারিকুলাম অনুযায়ী, তিনি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সবোর্চ্চ ডিগ্রিধারী। কিন্তু ১৯৯৬ সালে ক্ষমতা পরিবর্তনের সুবাদে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তৎকালীন প্রভাষক নাদিরা পারভীন তার ভাই মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার ও নগর আ’লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আলমগীর হোসেনের প্রভাব খাটিয়ে বৈধ অধ্যক্ষকে ভয়ভীতি দেখিয়ে কলেজ থেকে বের করে দেন বলে অভিযোগ আছে। তাছাড়া তার অফিসের কাগজপত্রও কলেজের কর্মচারীদের দ্বারা সরিয়ে ফেলেন বলে সূত্রগুলো জানিয়েছেন। 
একাধিক সূত্র জানায়, কলেজের অধ্যক্ষ পদে যোগদান করতে শিক্ষাগত যোগ্যতার পাশাপাশি ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা প্রয়োজন। কিন্তু নাদিরা পারভীন ১৯৯৪ সালের ৩ ডিসেম্বর কলেজের প্রভাষক পদে যোগদানের পর মাত্র ৭ বছরের মাথায় অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ পান। শুধু তাই নয় ১৯৮২ সালের প্রণীত উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা পরিদপ্তরের নিয়োগ বিধি অনুযায়ী প্রভাষক পদের জন্য দ্বিতীয় শ্রেণির অনার্সসহ দ্বিতীয় শ্রেণির মাস্টার্স ডিগ্রী অথবা প্রথম শ্রেণির মাস্টার্স ডিগ্রীসহ সকল পরীক্ষায় দ্বিতীয় বিভাগ থাকার নিয়ম রয়েছে। তবে নাদিরা পারভীন স্বাক্ষরিত শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদে তিনি নিজে উলে­খ করেছেন যে, ১৯৮৫ সালে এইচএসসিতে তৃতীয় বিভাগ এবং ১৯৮৭ সালে স্নœাতকে তৃতীয় বিভাগ পেয়েছিলেন। 
এদিকে অধ্যক্ষ নাদিরা পারভীনের বিরুদ্ধে ২০২২ সালের ১৬ ডিসেম্বর দুদক খুলনার উপ-পরিচালকের নিকট লিখিত আকারে অভিযোগ জমা পড়ে। তা দুদকের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের অনুমোদনের পর ২০২৩ সালের ২০ মার্চ অভিযোগটি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের নিকট প্রেরণ করা হয় তদন্তের জন্য। তৎকালীন অধিদপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত মহাপরিচালক প্রফেসর নেহাল আহমেদ অধ্যক্ষ নাদিরা পারভীনের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগটি ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত করতে নির্দেশ দেন। অধিদপ্তর থেকে তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে খুলনার অঞ্চলের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষার পরিচালক প্রফেসর শেখ হারুনর রশীদকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হলেও আজ অবধি আলোর মুখ দেখেনি। আর  কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় কলেজের শিক্ষক ও কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। 
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক-কর্মচারী জানান, শুধু অধ্যক্ষ পদ নয়, তার প্রভাষক পদে নিয়োগ নিয়েও সমস্যা। যেটা কলেজের সবাই জানেন। কিন্তু তার ভাই বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং খুলনা জেলা প্রশাসকের সাথে সুসম্পর্ক থাকায় এবং কলেজের সভাপতি নগর আ’লীগের সভাপতি থাকায় অযোগ্যতার বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া হয়। সব বিষয় নানানভাবে ধামচাপা দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে শিক্ষক নিয়োগের অর্থ তছরুপেরও অভিযোগ রয়েছে। বিগত বিএনপি’র আমলে তার নিয়োগ ও নিয়োগ অর্থ গ্রহণের বিষয়ে একাধিক তদন্ত কমিটি গঠণ হলেও অজ্ঞাত কারনে সে সকল কমিটি কোন কাজ করেনি।
এদিকে অধ্যক্ষ নাদিরা পারভীনের আনীত অভিযোগ ও দুদকের নির্দেশনার বিষয়ে খুলনা অঞ্চলের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষার পরিচালক প্রফেসর শেখ হারুনর রশীদ বলেন, নিয়োগ সংক্রান্ত এবং শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে অভিযোগ উঠেছিল। সেটা তদন্ত করে জমা দেওয়া হয়েছে। আশাকরি খুব দ্রুতই তদন্তে পরিপ্রেক্ষিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 
তবে অপর একটি সূত্র জানায়, খুলনা অঞ্চলের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষার পরিচালকের পরামর্শে নাদিরা পারভীন তার নিয়োগ সংক্রান্ত কাগজপত্র এমন ভাবে তৈরি করে দিয়েছেন। যাতে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া সুযোগ না থাকে।  
অধ্যক্ষ নাদিরা পারভীন জানান, আমি কোন দুর্নীতি করিনি। আমি নিজেই স্বীকার করছি আমার থার্ড ক্লাস আছে। বিষয়টি আমি নিয়োগের সময় যারা ছিল তাদেরকে বলেছিলাম। তারা আমাকে বলেছিল এতে কোন সমস্যা নেই। যদি কোন দোষ থাকে সেটা যারা নিয়োগ দিয়েছিলেন তাদের হয়েছিল। আমি পরীক্ষা দিয়ে এখানে এসেছি। আমি কোন জালিয়াতি বা টাকা দিয়ে চাকুরি নেয়নি।   
উলে­খ্য, ১৯৯৪ সালে ৩৬ শতক জমির ওপর সোনাডাঙ্গা থানার বানরগাতী এলাকায় সিটি গার্লস কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হয়। কলেজে ২৯ জন শিক্ষক এবং ১১ জন কর্মচারি থাকলে শিক্ষার্থী রয়েছে প্রায় দুইশ’। 

্রিন্ট

আরও সংবদ