খুলনা | শুক্রবার | ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৫ আশ্বিন ১৪৩১

গণপিটুনিতে ছাত্রলীগ নেতা শামীম নিহত জাবির ৮ শিক্ষার্থী সাময়িক বহিষ্কার

খবর প্রতিবেদন |
০১:৩৮ এ.এম | ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪


জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থী শামীম মোল­াকে গণপিটুনিতে হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে আটজন শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এছাড়াও এ ঘটনায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল আহসান এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
বহিষ্কৃত আটজন হলেন সরকার ও রাজনীতি বিভাগের ৪৬ ব্যাচের মোঃ রাজন মিয়া ও একই বিভাগরে ৪৫ ব্যাচের রাজু আহাম্মদ, ইতিহাস বিভাগের ৪৪ ব্যাচের জুবায়ের আহমেদ, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৭ ব্যাচের সোহাগ মিয়া, ইংরেজি বিভাগের ৪৯ ব্যাচের হামিদুল­াহ সালমান ও একই বিভাগের ৫০ ব্যাচের মাহমুদুল হাসান রায়হান, বায়োটেকনোলজি এ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৯ ব্যাচের আহসান লাবিব ও ম্যানেজমেন্ট বিভাগের আতিকুজ্জামান আতিক। 
জাবি উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল আহসান বলেন, শামীম মোল­াকে হত্যার ঘটনায় প্রাথমিক তদন্ত এবং ভিডিও ফুটেজ ও ছবি চেক করে ৮ জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। 
উপাচার্য আরও বলেন, এছাড়াও প্রতœতত্ত¡ বিভাগের অধ্যাপক ড. স্বাধীন সেনকে সভাপতি করে ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে ৩০ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত করে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
এর আগে বুধবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের জয় বাংলা ফটক সংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছিলেন শামীম মোল­া। খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী সেখানে গিয়ে তাকে আটক করে গণপিটুনি দেয়। ভিডিও ফুটেজে লাঠি হাতে শামীমকে মারতে দেখা যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি এ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আহসান লাবিবকে। এছাড়া লাথি দিতে দেখা গেছে ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ৪৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আতিককে। 
গণপিটুনির খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিম উপস্থিত হয়। একপর্যায়ে নিরাপত্তাকর্মীদের সহায়তায় শামীম বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা শাখায় নিয়ে আসা হয়। সেখানে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত শিক্ষার্থীরা তাকে আরেক দফা গণপিটুনি দেয়। এ ঘটনার ভিডিও ফুটেজ থেকে প্রাথমিকভাবে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের পাঁচজনকে শনাক্ত করা হয়। তারা হলেন সাঈদ হোসেন ভূঁইয়া, রাজু আহমেদ, রাজন হাসান, হামিদুল­াহ সালমান এবং এম এন সোহাগ।
ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণে দেখা যায়, নিরাপত্তা কার্যালয়ের ভেতরে চেক শার্ট পরিহিত অবস্থায় শামীমকে পেটাচ্ছেন রাজু আহমেদ। এ সময় তার হাতে গাছের ডাল দেখা গেছে। এছাড়া রাজন হাসানের গায়ে হাফ হাতা লাল রংয়ের শার্ট দেখা গেছে। হামিদুল­াহ সালমানের গায়ে হাফ হাতা শার্ট ও সোহাগের গায়ে সাদা টি শার্ট ও চশমা দেখা গেছে। 
প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে জানা যায়, জিন্স প্যান্ট ও শার্ট পরিহিত অবস্থায় শামীমকে মারধর করছেন সাঈদ হোসেন ভূঁইয়া। তবে তারা প্রত্যেকেই মারধরের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।
জানা গেছে, ১৮ সেপ্টেম্বর বুধবার রাতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জয় বাংলা ফটকের কাছ থেকে শামীম আহমেদ মোল­াকে ধরে গণপিটুনি দেয় একদল শিক্ষার্থী। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়, গত ১৫ জুলাই রাতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় শামীম মোল­া জড়িত ছিল।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম আহমেদ ওরফে শামীম মোল­াকে ওখানে মারধর করার পর তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির হাতে তুলে দেয়া হয়। এ সময়ও শামীমকে আরেক দফা মারধোরের অভিযোগ রয়েছে। এরপরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাকে আশুলিয়া থানার পুলিশের কাছে সোপর্দ করে দেয়। রাত ৯টার দিকে তাকে সাভারের গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে দায়িত্বরত চিকিৎসক শামীম মোল­াকে মৃত ঘোষণা করেন।  
গণপিটুনিতে নিহত শামীম সাভারের আশুলিয়া থানার কাঠগড়া এলাকার মোল­া বাড়ির ইয়াজ উদ্দিন মোল­ার ছেলে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষের (৩৯ ব্যাচ) ইতিহাসের বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।
বিক্ষোভ : জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের সাবেক নেতা শামীম আহমেদ মোল­াকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে আশুলিয়া থানায় নিহতের পরিবার মামলা দায়ের করেছে বলে শুনা গেলেও বিষয়টি নিশ্চিত করেনি পুলিশ।
এছাড়া শামীম মোল­াকে মারধরে মৃত্যুকে বিচারবহির্ভূত হত্যা উলে­খ করে বৃহস্পতিবার বিক্ষোভ করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষোভ করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মহুয়া মঞ্চ থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি বের করা হয়। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে নতুন প্রশাসনিক ভবনের সামনে গিয়ে শেষ হয়। এরপর সেখানে একটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা।
এর আগে বুধবার দিবাগত রাত ২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে গিয়ে শেষ হয়। এছাড়াও বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই মব কিলিং বন্ধে একুশের পদদেশে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের ৪৭ ব্যাচের শিক্ষার্থী প্রাপ্তি তাপসী বলেন, আমরা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, আমরা বিচারবহির্ভূত যেকোনো হত্যাকান্ডের বিরুদ্ধে। কেউ যদি অপরাধ করে, তাহলে তাকে রাষ্ট্রীয় আইনে শাস্তি দেয়া হোক, কিন্তু কাউকে বিচার বহির্ভূতভাবে পিটিয়ে মেরে ফেলাকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সমর্থন করে না।
শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, আমাদের ক্যাম্পাসে যে ঘটনাটি ঘটলো, ছাত্রলীগের একজন সাবেক নেতাকে দুই দফায় গণপিটুনি দেয়া হলো এবং এর ফলে তার মৃত্যু হলো। এটা কখনওই কাম্য নয়।
এ ব্যাপারে আশুলিয়া থানায় ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করা হয়েছে শুনা গেলেও আশুলিয়া থানার ডিউটি অফিসার জানান, এসআই অলক সাহেব লাশের সুরতহাল করেছেন। তবে, মামলা হয়েছে মর্মে থানায় কোন তথ্য নেই।
আশুলিয়া থানার এসআই অলক ও ওসি আবু বকর সিদ্দিকীকে মুঠো ফোনে কল করেও এ ব্যাপারে কোন কথা যায়নি।

্রিন্ট

আরও সংবদ