খুলনা | বৃহস্পতিবার | ২১ নভেম্বর ২০২৪ | ৭ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

অমুসলিমদের প্রতি মুসলিমদের করণীয় (পর্ব-৩)

ড. মুহাম্মদ বেলায়েত হুসাইন |
০১:৫০ এ.এম | ০৪ অক্টোবর ২০২৪


যুদ্ধে সত্য-মিথ্যা বলে কিছু নেই। যুদ্ধের নীতিই হল, যে কোন পন্থায় শত্র“র মনে ভীতি সৃষ্টি করতে হবে এবং যে কোনো মূল্যে বিজয় লাভ করতে হবে। কিন্তু বিস্ময়ে হতবাক হতে হয়, এখানেও ইসলাম ন্যায়পরায়নতা ও উদারতার উজ্জল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
প্রসিদ্ধ সাহাবী হযরত হুযায়ফা ইবনে ইয়ামান রাযিয়াল্লাহু আনহু’র ঘটনা যিনি রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের গোপন কথা জানতেন। রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মদীনায় হিজরতের কিছু পরের কথা, যখন হুযায়ফা ইবনে ইয়ামান রাযিয়াল্লাহু আনহু ও তাঁর পিতা মুসলমান হয়ে রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার জন্য মদীনায় যাচ্ছিলেন ঠিক সেই সময়ে অপরদিকে ইসলামের ঘোরতর শত্র“ আবু জাহেল রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিরুদ্ধে সৈন্যবাহিনী নিয়ে মদীনায় যাচ্ছিল। পথিমধ্যে আবু জাহেলের সঙ্গে হুযায়ফা ইবনে ইয়ামান রাযিয়াল্লাহু আনহুর সাক্ষাৎ হয়ে যায়। ফলে সে তাদের পাকড়াও করে জিজ্ঞেস করল, কোথায় চাচ্ছ? তারা বললেন, আমরা মদীনায় রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের খেদমতে যাচ্ছি। একথা শুনে আবু জাহেল বলল, তাহলে তো তোমাদের ছাড়া হবে না। কারণ তোমরা মদীনায় গিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ অংশগ্রহণ করবে। তাঁরা বললেন, আমাদের উদ্দেশ্য হল শুধু রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে সাক্ষাৎ ও জিয়ারত। আমরা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করব না। 
আবু জাহেল বলল, তাহলে আমাদের সঙ্গে অঙ্গীকার কর যে, সেখানে গিয়ে শুধু মুহাম্মদ সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে। যুদ্ধে অংশ নেবে না। তাঁরা তার সঙ্গে অঙ্গীকারে আবদ্ধ হলেন। ফলে আবু জাহেল তাদের ছেড়ে দিল।
ইতোমধ্য রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদীনা হতে সাহাবায়ে কেরামকে নিয়ে বদর যুদ্ধের জন্য রওনা হয়ে গিয়েছিলেন ফলে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে পথে হযরত হুযায়ফা রাযিয়াল্লাহু আনহুর সাক্ষাৎ হল। তখন তিনি প্রথমে রাস্তায় ঘটে যাওয়া পূর্ণ ঘটনার বিবরণ দিলেন যে, পথিমধ্যে আবু জাহেল আমাদেরকে আটক করেছিল, আমরা তার সঙ্গে এই অঙ্গীকার করে মুক্ত হয়েছি যে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করব না। 
তারপর তারা রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে আবেদন করলেন, হে আল্লাহর রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এটা বদর যুদ্ধ যেখানে আপনি তাশরীফ নিয়ে যাচ্ছেন। আমাদের অনেক ইচ্ছা আপনার সঙ্গে এই যুদ্ধে শরীক হতে। আর আবু জাহেলের সঙ্গে আমাদের অঙ্গীকার তা তো সে আমাদের গর্দানের উপর তরবারি রেখে আদায় করেছে যে, আমরা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করব না। তার কথায় যদি আমরা সম্মত না হতাম, তাহলে সে আমাদের আটকিয়ে রাখতো। সুতরাং হে আল্লাহর রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ! আমাদেরকে ইসলামের এই প্রথম জিহাদে অংশগ্রহণ করার অনুমতি দিন, যাতে আমরাও তার ফযীলত লাভে সৌভাগ্যবান হতে পারি। (আল-ইসাবা)
কিন্তু রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উত্তরে তাদের বললেন, তোমরা এ যুদ্ধে শরীক হতে পারবে না। যেহেতু তোমরা তাদের সঙ্গে এই অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়ে এসেছ যে, এখানে শুধু আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে, যুদ্ধে অংশগ্রহণ করবে না। ফলে এ শর্তের উপর তারা তোমাদের মুক্তি দিয়েছে। সুতরাং তোমাদের যুদ্ধ অংশগ্রহণ করার অনুমতি দেয়া যাবে না।
সায়েখুল ইসলাম আল্লামা মুফতী তাকী উসমানী দামাত বারাকাতুহুম বলেন, একটু ভেবে দেখুন, ইসলামের হক ও বাতিলের প্রথম লড়াই ‘বদর যুদ্ধ’। তা এমন যুদ্ধ যাকে কুরআনুল কারীমে হক ও বাতিলের মাঝে পার্থক্যের দিন হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এই যুদ্ধে যেই ব্যক্তিই অংশগ্রহণ করেছে তাকে ‘বদরী’ বলা হয়। সাহাবয়ে কেরামের মাঝে বদরী সহাবীদের অনেক সম্মান ও মর্যাদা ছিল। তাঁদের ব্যাপারে রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন সব আহলে বদর, যারাই এই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে তাদের ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে। এমন গুরুত্বপূর্ণ একটি জিহাদ সংগঠিত হওয়ার পথে যখন রাসূলে কারীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে হযরত হুযায়ফা রাযিয়াল্লাহু আনহুর সাক্ষাৎ হল। রাসূলে কারীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অনুমতি দিলেন না।
আর এটা হল এই স্থান যেখানে মানব জীবনের কঠিনতম এক পরীক্ষার মুহূর্ত একজন মানুষ নিজের জবান, ওয়াদার প্রতি কতটা যত্নবান, তাদের সঙ্গে ওয়াদা খাঁটি মনে করিনি। তারা তো বলপ্রয়োগ ও জোরপূর্বকভাবে ওয়াদা নিয়েছে। আল্লাহ ভাল জানেন, এমন আর কত বাহানা খুঁজে বের করতাম। যেই ওজর ছিল, আর সময়ের দাবি হল রাসূলের সঙ্গে জিহাদে শরীক হয়ে কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা। যেহেতু মুসলমানদে সৈন্য সংখ্যা মাত্র তিনশ’ তেরজন ছিল। তাদের মাঝে আবার অনেকেই ছিলেন নিরস্ত্র। ফলে এই অবস্থায় প্রত্যেকটি মানুষের মূল্য অপরিসীম। যাদের কাছে মাত্র সত্তরটি উট, ছয়টি ঘোড়া, আটটি তরবারি অবশিষ্টদের কারো কাছে লাঠি, কারো কাছে পাথর ছিল। সাহবাদের এই ক্ষুদ্র দলটি এক হাজার কাফের যোদ্ধার মোকবেলা করতে যাচ্ছিলেন। তাই জনশক্তির খুব প্রয়োজন ছিল। এতকিছু সত্ত্বেও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, প্রতিশ্র“তি/ওয়াদা ভঙ্গ করা যাবে না এবং তার খেলাফ কিছু করাও যাবে না। (ইসলাম আওর হামারী যিন্দেগী) (চলবে)।
সংকলক: লেখক ও গবেষক।

্রিন্ট

আরও সংবদ