খুলনা | শুক্রবার | ২৯ অগাস্ট ২০২৫ | ১৩ ভাদ্র ১৪৩২

সারাদেশে ৩১ হাজার ৪৬১ মন্ডপে দুর্গাপূজা

মহাষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে আজ শুরু হচ্ছে শারদীয় দুর্গাপূজা

নিজস্ব প্রতিবেদক |
০১:৩৪ এ.এম | ০৯ অক্টোবর ২০২৪


ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও ব্যাপক উৎসব মুখর পরিবেশে আজ বুধবার মহাষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হচ্ছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ৫ দিনব্যাপী সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। আগামীকাল বৃহস্পতিবার মহাসপ্তমী, শুক্রবার মহাষ্টমী ও মহানবমী, ১২ অক্টোবর শনিবার বিজয় দশমী পূজার পর প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য শেষ হবে এ উৎসব। 
গত ২ অক্টোবর মহালয়া অনুষ্ঠিত হয়েছে। চলছে দেবী পক্ষ। অশুভ শক্তির নাশ এবং সত্যকে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বলে দেবী দুর্গাকে দুর্গতি নাশিনী বলা হয়। মহিষাসুরের অসুর বাহিনীকে পরাজিত করেছিলেন তাকে মহিষসুর মোদিনী বলা হয়ে থাকে। বাংলাদেশসহ পৃথিবীর অন্যান্য দেশে এ পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এবার খুলনা জেলাসহ সারাদেশে ৩১ হাজার ৪৬১ মন্ডপে মন্দিরে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। 
এ উপলক্ষে পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন এবং  অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। 
অন্যদিকে শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে সারাদেশের ন্যায় খুলনাতে নেওয়া হয়েছে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সেনাবাহিনীর পাশাপাশি নৌবাহিনী, বিজিবি’র টহল জোরদার, পুলিশ, র‌্যাব ও আনসার বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে।
যশোরের কেশবপুরের ভেরচী গ্রামে নিমতলা রাধা-গোবিন্দ সেবাশ্রম পূজা মন্ডপে ৩শ’ দেব-দেবীর প্রতিমা নিয়ে এবারও দেশের সর্ববৃহৎ দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। 
দুর্গাদেবী এবার দোলায় আগমন করবেন এবং ঘোটকে গমন করবেন। এই ৫ দিন প্রতিটি মন্দিরে পূজা-অর্চনা, সন্ধ্যা আরতি, ধর্মীয় আলোচনা ও প্রসাদ বিতরণ করা হবে। মন্দির প্রাঙ্গণে দর্শকদের ভীড় পরিলক্ষিত হবে। ইতোমধ্যেই প্রতিমা তৈরির ও মন্দিরের সাজ-সজ্জার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। 
জানা যায় পুরাকালে মহিষাসুর নামে এক অসুর ব্রহ্মাদেবের তপস্যা করে বরপ্রাপ্ত হন যে, তাকে কেউই যুদ্ধে তাকে পরাজিত করতে পারবে না, তবে নারীর হাতে তার মৃত্যু হবে। ব্রহ্মার বরে বলিয়ান হয়ে মহিষাসুর দেবতাদের স্বর্গ আক্রমণ করেন। দেবরাজ ইন্দ্রের কাছ থেকে স্বর্গরাজ্য দখল করেন। মহিষাসুরের অত্যাচারে অবশেষে সকল দেবতা বিষ্ণুর শরণাপন্ন হন। বিষ্ণু ও শিব দেবতাদের মুখে মহিষাসুরের অত্যাচারের কথা শুনে ক্রোধান্বিত হন। তাদের তেজদীপ্ত ক্রোধে আবির্ভূত হলেন দশভূজা শ্রীশ্রী দুর্গা দেবী। তেজময়ী দেবীকে দেবতারা একে একে তাদের অস্ত্র দিয়ে সাজিয়ে তুললেন রণরঙ্গিনী মূর্তিতে। মহাদেব দিলেন তাঁর শূল, বিষ্ণু দিলেন সুদর্শন চক্র, দেবরাজ ইন্দ্র দিলেন বজ্র, যমরাজ দিলেন কালদণ্ড, পবনদেব দিলেন ধনুক ও বানপূর্ণ তৃণ, বরুণদেব দিলেন শঙ্খ, হিমালয় পর্বত প্রদান করলেন বাহনরূপে একটি সিংহ। দেবীদুর্গা দেবতাদের অস্ত্র  ও অলঙ্কারে সজ্জিত হয়ে রণভূমিতে উপস্থিত হলেন। মহিষাসুরের অসুর বাহিনীকে দেবী দুর্গা পরাজিত করলেন। অবশেষে মহিষাসুর নিজে আসলেন যুদ্ধে। যুদ্ধে দেবী দুর্গা মহিষাসুরকে শূল দিয়ে বিদ্ধ করলেন। মৃত্যুমুখে মহিষাসুর মা দুর্গা দেবীর কাছে বরপ্রাপ্ত হন যে, শ্রীশ্রী দুর্গাদেবীর সঙ্গে যেন তার পূজা হয়। শ্রীশ্রী দুর্গা দেবী মহিষাসুরকে বর দেন, পূজা দেবতাদের জন্য তোর মত অসুদের জন্য নয়, তবে আমার সঙ্গে মত্তবাসী তোর পূজা করবে তবে দেবতা জ্ঞানে নয় অসুর জ্ঞানে। বসন্তকালে পঞ্চমী তিথিতে বাসন্তি পূজা নামে এ পূজা অনুষ্ঠিত হতো। 
এদিকে বাল্মিকী মুনির রামায়ন থেকে জানা যায়, অযোধ্যার রাজা দশরথের পুত্র শ্রীরামচন্দ্র পিতৃসত্য পালনে স্ত্রী সীতা ও ভাই লক্ষনসহ ১৪ বছর বনে বাস করেন। এ সময় লঙ্কার রাজা দশানন সীতাকে হরণ করেন। সীতা উদ্ধারের জন্য রাবনকে বধ করার সময় শ্রীরামচন্দ্র শরৎকালে উত্তরায়নে অকাল বোধন করে শ্রীশ্রী দুর্গা পূজার আয়োজন করেন। 
বৈদিক মতে জানা যায়, উপমহাদেশে দুর্গাপূজা শুরু হয় ষোড়শ শতাব্দিতে রাজশাহী জেলার তাহিরপুরে। কুল­কভট্টের পুত্র রাজা কংস নারায়ণ মোঘল সম্রাট আকবরের রাজত্বকালে তৎকালীন আট লক্ষ টাকা ব্যয় করে শরৎকালে প্রথম সাড়ম্বরে দুর্গাপূজার আয়োজন করেছিলেন। পরবর্তীতে ভাদুরিয়ার রাজা জগৎ নারায়ণ নয় লক্ষ টাকা ব্যয় করে বসন্তকালে দুর্গাপূজা করেন। নদীয়ার বিখ্যাত রাজা কৃষ্ণ চন্দ্র ও  রাজা নবকৃষ্ণ দেব দুর্গাপূজা করেন। বৃটিশ শাসনামলে কলকাতায় ধর্নাঢ্য ব্যবসায়ীদের মধ্যে দুর্গাপূজার ব্যাপক প্রচলন দেখা যায়। স্বামী বিবেকানন্দ ১৯০৪ সালে বেলুর মঠে সার্বজনীন দুর্গাপূজার প্রবর্তন করেন। এ ভাবেই উপমহাদেশে সার্বজনীন দুর্গাপূজার প্রচলন লাভ করেছে। 
শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশন বিশেষ অনুষ্ঠান মালার আয়োজন করেছে। মহানগরী ছাড়াও সকল উপজেলায় ব্যাপক উৎসব মুখর পরিবেশে এ পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। পূজার সময় সবাই নতুন জামা কাপড় পরিধান করে মাকে দর্শন করেন। বিজয় দশমীর দিনে বধূরা সিঁদুর উৎসবের আয়োজন করেন। দেবী দুর্গাকে সিঁদুর ও মিষ্টি মুখ করে বিদায় জানাবে। দুর্গাপূজা বাঙালির হাজার বছরের ঐতিহ্য রক্ষা করে চলেছেন।
সারাদেশে ৩১ হাজার ৪৬১ মন্ডপে দুর্গাপূজা  : চলতি বছর সারাদেশে ৩১ হাজার ৪৬১ মন্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা উদ্যাপিত হবে। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকায় ২৫২টি মন্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে। মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে পূজা কমিটির সভাকক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। 
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ঢাকা মহানগর পূজা উদ্যাপন কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব। এ সময়ে বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর, মহানগর সার্বজনীয় পূজা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ড. তাপস চন্দ্র পাল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। 
জয়ন্ত কুমার দেব বলেন, সারাদেশে ৩১ হাজার ৪৬১টি মন্ডপে পূজার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ঢাকা মহানগরীতে এবার ২৫২টি পূজা অনুষ্ঠিত হবে। গত বছর ঢাকায় মহানগরে ২৪৮টি পূজার আয়োজন করা হয়েছিল। সে হিসেবে মহানগরে চারটি পূজা বেড়েছে।
তিনি জানান, যেসব ক্ষেত্রে খোলা জায়গায় অস্থায়ী প্যান্ডেলে দুর্গাপূজা করা হবে, সেসব ক্ষেত্রে সরকার নির্দের্শিত বিধি-বিধান মেনে সবার সঙ্গে সমন্বয় করে পূজা আয়োজনের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রতিমা নির্ধারিত দিনেই (১৩ অক্টোবর) বিসর্জন দিতে হবে। বিসর্জনের দিন শোভাযাত্রায় সর্বোচ্চ সতর্কতা ও নিরাপত্তা বজায় রাখতে হবে। 
সারাদেশে এ বছর পূজার সংখ্যা কমার কারণ হিসেবে বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ শর্মা জানান, প্রস্তুতি নিয়ে অপারগ হওয়ায় ও বন্যার কারণেও দুর্গত এলাকায় কোথাও-কোথাও পূজার্থীরা এবার পূজার আয়োজন করতে পারেনি।
তিনি বলেন, দুর্গাপূজা উপলক্ষে রাজধানীসহ সারাদেশের প্রতিটি পূজামন্ডপের নিরাপত্তায় পুলিশ, আনসার, বিজিবি, র‌্যাবসহ অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। পুলিশ ও র‌্যাবের পাশাপাশি প্রায় প্রতিটি মন্ডপে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী দায়িত্ব পালন করবে। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন সেনাপ্রধান। নিরাপত্তায় কোন ধরনের ঘাটতি থাকবে না। ঢাকেশ্বরী মন্দির মেলাঙ্গনে মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির উদ্যোগে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে বলেও জানান সন্তোষ শর্মা।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে শঙ্কার মধ্যেও সরকার, রাজনৈতিক দল, সেনাবাহিনী, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও ছাত্র নেতৃবৃন্দের প্রত্যয়ী মনোভাব ও পদক্ষেপ আমাদের পূজার আয়োজনে সাহস জোগাচ্ছে। পূজা কমিটির নেতৃবৃন্দ মনে করেন আবহমানকাল ধরে এ মাটিতে যে ঐতিহ্য ও সহমর্মিতার সংস্কৃতি লালিত হচ্ছে, তা সবার সহযোগিতা ও ঐক্যবোধের চেতনায় সমৃদ্ধ হবে। 
এছাড়াও সংবাদ সম্মেলনে হিন্দু স¤প্রদায়ের শারদীয় দুর্গাপূজায় অষ্টমী থেকে দশমী তিন দিন, বৌদ্ধ স¤প্রদায়ের প্রবারণা পূর্ণিমায় একদিন, ও খ্রিস্টান স¤প্রদায়ের ইস্টার সানডে’তে একদিন সরকারি ছুটি ঘোষণার দাবি জানানো হয়।

্রিন্ট

আরও সংবদ