খুলনা | বুধবার | ১৬ অক্টোবর ২০২৪ | ১ কার্তিক ১৪৩১

সাড়ে ৫ বছরে দুর্ঘটনায় মানবসম্পদের ক্ষতি ৮৮ হাজার কোটি টাকা: জরিপ

খবর প্রতিবেদন |
০২:০০ পি.এম | ১৬ অক্টোবর ২০২৪


গত সাড়ে ৫ বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রায় ৮৮ হাজার কোটি টাকার মানব সম্পদের ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন। আজ বুধবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ দাবি করে সংগঠনটি। দেশের ৯টি জাতীয় দৈনিক,৭টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল, ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম এবং সংস্থার নিজস্ব তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে তারা।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী—২০১৯ সাল থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত সাড়ে ৫ বছরে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৩২ হাজার ৭৩৩টি। এসব দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৩৫ হাজার ৩৮৪ জন এবং আহত হয়েছেন ৫৩ হাজার ১৯৬ জন। সড়ক দুর্ঘটনায় ৮৭ হাজার ৮৮৪ কোটি ১২ লাখ টাকার মানব সম্পদের ক্ষতি হয়েছে।

সংগঠনটি বলছে, নিহতের মধ্যে নারী ৫ হাজার ১০৩ (১৪ দশমিক ৪২ শতাংশ), শিশু ৪ হাজার ৭৮৫ (১৩ দশমিক ৫২ শতাংশ)। ১১ হাজার ৬৬৯টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত ১১ হাজার ৫৯৩ জন, যা মোট নিহতের ৩২ দশমিক ৭৬ শতাংশ। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ৩৫ দশমিক ৬৪ শতাংশ। দুর্ঘটনায় ৮ হাজার ৩৫৮ জন পথচারী নিহত হয়েছেন, যা মোট নিহতের ২৩ দশমিক ৬২ শতাংশ। যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ৫ হাজার ২৬১ জন, অর্থাৎ ১৪ দশমিক ৮৬ শতাংশ।

এই সময়ে ৫৮৭টি নৌ-দুর্ঘটনায় ১ হাজার ২১ জন নিহত, ৫৮২ জন আহত এবং ৩৬৯ জন নিখোঁজ রয়েছেন। ১ হাজার ২২৮টি রেলপথ দুর্ঘটনায় ১ হাজার ৪০৩ জন নিহত এবং ১ হাজার ২৬৯ জন আহত হয়েছেন।

দুর্ঘটনার যানবাহনভিত্তিক নিহতের চিত্র
দুর্ঘটনায় যানবাহনভিত্তিক নিহতের পরিসংখ্যানে দেখা যায়-মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী ১১,৫৯৩ জন (৩২ দশমিক ৭৬ শতাংশ), বাস যাত্রী ১৯১৫ জন (৫ দশমিক ৪১ শতাংশ), পণ্যবাহী যানবাহনের আরোহী (ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ডভ্যান-ট্রাক্টর-ট্রলি-লরি ইত্যাদি) ২৫১১ জন (৭ দশমিক ০৯ শতাংশ), প্রাইভেটকার-মাইক্রোবাস-অ্যাম্বুলেন্স-জিপ আরোহী ১৫৪৪ জন (৪ দশমিক ৩৬ শতাংশ), থ্রি-হুইলার যাত্রী ৬০৮০ জন (১৭ দশমিক ১৮ শতাংশ), স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহনের যাত্রী (নসিমন-করিমন-ভটভটি-আলমসাধু-মাহেন্দ্র-টমটম) ২৩৫৭ জন (৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ) এবং বাইসাইকেল-প্যাডেল রিকশা-রিকশাভ্যান আরোহী ১০২৬ জন (২ দশমিক ৮৯ শতাংশ) নিহত হয়েছেন।

দুর্ঘটনা সংঘটিত সড়কের ধরন
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ বলছে, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ১১,৯৪২টি (৩৬ দশমিক ৪৮ শতাংশ) জাতীয় মহাসড়কে, ১১, ৬৯৮টি (৩৫ দশমিক ৭৩ শতাংশ) আঞ্চলিক সড়কে, ৫০৬৩টি (১৫ দশমিক ৪৬ শতাংশ) গ্রামীণ সড়কে, ৩৯৭৪টি (১২ দশমিক ১৪ শতাংশ) শহরের সড়কে এবং অন্যান্য স্থানে ৫৬টি (০ দশমিক ১৭ শতাংশ) সংঘটিত হয়েছে।

দুর্ঘটনার ধরন
দুর্ঘটনাসমূহের ৬৮৪৩টি (২০ দশমিক ৯০ শতাংশ) মুখোমুখি সংঘর্ষ, ১২, ১৬৭টি (৩৭ দশমিক ১৭ শতাংশ) নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে, ৮৬৩১টি (২৬ দশমিক ৩৬ শতাংশ) পথচারীকে চাপা/ধাক্কা দেওয়া, ৪৩৩৬টি (১৩ দশমিক ২৪ শতাংশ) যানবাহনের পেছনে আঘাত করা এবং ৭৫৬টি (২ দশমিক ৩০ শতাংশ) অন্যান্য কারণে ঘটেছে।

দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহন
দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের মধ্যে পণ্যবাহী যানবাহন (ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ডভ্যান-ড্রামট্রাক ট্রাক্টর-ট্রলি-লরি তেলবাহী ট্যাংকার, বিদ্যুতের খুঁটিবাহী ট্রাক, সিটি করপোরেশনের ময়লাবাহী ট্রাক ইত্যাদি) ২৫ দশমিক ৪১ শতাংশ, যাত্রীবাহী বাস ১২ দশমিক ৭৩ শতাংশ, মাইক্রোবাস-প্রাইভেটকার-অ্যাম্বুলেন্স, জিপ ৪ দশমিক ৩৪ শতাংশ, মোটরবাইক ২১ দশমিক ৪৮ শতাংশ, থ্রি-হুইলার (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটো ভ্যান-মিশুক-টেম্পো-লেগুনা ইত্যাদি) ১৮ দশমিক ৯২ শতাংশ, স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহন (নসিমন-করিমন-ভটভটি-আলমসাধু-মাহেন্দ্র-টমটম) ৮ দশমিক ৮২ শতাংশ, বাইসাইকেল-প্যাডেল রিকশা-রিকশাভ্যান ৫ দশমিক ৩১ শতাংশ এবং অজ্ঞাত যানবাহন ২ দশমিক ৯৬ শতাংশ।

দুর্ঘটনার সময় বিশ্লেষণ
সময় বিশ্লেষণে দেখা যায়, দুর্ঘটনাসমূহ ঘটেছে ভোরে ১৮৫৩টি (৫ দশমিক ৬৬ শতাংশ), সকালে ৯৬১৪টি (২৯ দশমিক ৩৭ শতাংশ), দুপুরে ৫৯০০টি (১৮ শতাংশ), বিকেলে ৬১৯২টি (১৮ দশমিক ৯১ শতাংশ), সন্ধ্যায় ২৯৬১টি (৯ শতাংশ) এবং রাতে ৬২১৩টি (১৮ দশমিক ৯৮ শতাংশ)।

দুর্ঘটনার বিভাগ ওয়ারী পরিসংখ্যান
দুর্ঘটনার বিভাগ ওয়ারী পরিসংখ্যান বলছে, ঢাকা বিভাগে দুর্ঘটনা ২৪ দশমিক ৯৬ শতাংশ, প্রাণহানি ২৪ দশমিক ৮৯ শতাংশ, রাজশাহী বিভাগে দুর্ঘটনা ১৪ দশমিক ৫২ শতাংশ, প্রাণহানি ১৪ দশমিক ১৫ শতাংশ, চট্টগ্রাম বিভাগে দুর্ঘটনা ১৮ দশমিক ৫৪ শতাংশ, প্রাণহানি ১৮ দশমিক ৫০ শতাংশ, খুলনা বিভাগে দুর্ঘটনা ১১ দশমিক ৩২ শতাংশ, প্রাণহানি ১১ দশমিক ৩৪ শতাংশ, বরিশাল বিভাগে দুর্ঘটনা ৭ দশমিক ৭২ শতাংশ, প্রাণহানি ৮ দশমিক ০৪ শতাংশ, সিলেট বিভাগে দুর্ঘটনা ৬ দশমিক ২৯ শতাংশ, প্রাণহানি ৬ দশমিক ৪৫ শতাংশ, রংপুর বিভাগে দুর্ঘটনা ৮ দশমিক ৬৯ শতাংশ, প্রাণহানি ৮ দশমিক ৬৩ শতাংশ এবং ময়মনসিংহ বিভাগে দুর্ঘটনা ৭ দশমিক ৯২ শতাংশ, প্রাণহানি ৭ দশমিক ৯৬ শতাংশ ঘটেছে।

ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে। ৮১৭১টি দুর্ঘটনায় ৮৮১০ জন নিহত হয়েছেন। সিলেট বিভাগে সবচেয়ে কম ২০৬২টি দুর্ঘটনায় ২২৮৫ জন নিহত হয়েছেন।

এসব দুর্ঘটনার বিশ্লেষণের ওপর ভিত্তি করে ১২টি সুপারিশ করেছে সংগঠনটি। সেগুলো হলো—

১. দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ বৃদ্ধি করতে হবে। 
২. চালকদের বেতন-কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করতে হবে। 
৩. বিআরটিএর সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। 
৪. পরিবহন মালিক-শ্রমিক, যাত্রী ও পথচারীদের প্রতি ট্রাফিক আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। 
৫. মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন বন্ধ করে এগুলোর জন্য আলাদা রাস্তা (সার্ভিস লেন) তৈরি করতে হবে। 
৬. পর্যায়ক্রমে সকল মহাসড়কে রোড ডিভাইডার নির্মাণ করতে হবে। 
৭. সড়ক এবং সড়ক পরিবহন নারী, শিশু ও প্রতিবন্ধীবান্ধব না হওয়া। 
৮. গণপরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে। 
৯. রেল ও নৌ-পথ সংস্কার করে সড়ক পথের ওপর চাপ কমাতে হবে। 
১০. টেকসই পরিবহন কৌশল প্রণয়ন করতে হবে। 
১১. সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ বাধাহীনভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। 
১২. সরকারি এবং বেসরকারি উদ্যোগে গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ে জীবনমুখী সচেতনতামূলক প্রচারণা চালাতে হবে।

্রিন্ট

আরও সংবদ