খুলনা | বুধবার | ২৩ অক্টোবর ২০২৪ | ৭ কার্তিক ১৪৩১

পরিবর্তিত সংবিধানের স্তম্ভ যেন অলংকারিক না হয়

|
১২:০৬ এ.এম | ১৯ অক্টোবর ২০২৪


কোনো দেশের সরকার যখন সংবিধান পরিপন্থি কাজ করে বা এমন কোনো প্রক্রিয়ায় দেশ পরিচালনা করে যা দেশের বৃহত্তম জনগোষ্ঠীর স্বার্থের পরিপন্থি এবং আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন তখন সেই সরকারের বিরুদ্ধে জনগণ আন্দোলনমুখী হয়। কোনো কোনো সময় সে আন্দোলন বাঁধ ভাঙা জোয়ারের মত সব কিছু ভেঙে-চুরে একাকার করে দেয়। আগস্ট আন্দোলন তার উদাহরণ। সংবিধানের দোহাই দিয়ে নির্বাচন করেছিল গত হাসিনা সরকার। আন্দোলনের তোড়ে কোথায় ছিল সে সংবিধান। সংবিধানে আছে রাষ্ট্রের মালিক জনগণ। সেই জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে রাষ্ট্র কিভাবে পরিচালিত হবে। এক্ষেত্রে লিখিত সংবিধানের কি কার্যকারিতা থাকে। কার্যকারী ফলপ্রসূ ভূমিকা রাখে কেবল জনগণের ইচ্ছা। বর্তমান সরকারকে যে নামেই ডাকা হোক না কেন এ সরকার সে বিপ্লবী চেতনা প্রসূত তাতে সন্দেহ করার কোনো কারণ নেই। এ  চেতনাই নতুনভাবে সংবিধান প্রণয়নে উদ্যোগ নিয়েছে। কারণ বিদ্যমান সংবিধান আওয়ামী সরকারের স্বার্থ হাসিলের হাতিয়ারে পরিণত হয়েছিল। যা শাসক চক্রকে স্বৈরাচারি হতে সহায়তা করেছিল। ফলে এ সংবিধান সম্পদ না হয়ে বোঝায় পরিণত হয়েছে। বলাবাহুল্য এজন্যই নব সংবিধান প্রণয়নে একটি শক্তিশালী কমিশন গঠন করা হয়েছে।
এখন প্রশ্ন হলো সংবিধান সংশোধনের কর্মপরিধি কি হবে। সংবিধান কি নতুন করে লিখবে না প্রয়োজনীয় সংশোধন/সংস্কার করবে। বিষয়টা সত্যিই স্পর্শকাতর। এখানে আবেগ অনুভূতির চেয়ে কঠিন বাস্তবতা কার্যকরী। বিদ্যমান সংবিধান কেন কাজ না করে রক্তগঙ্গা বইয়ে দিতে অংশ নিলো তা ভেবে দেখা দরকার। সংবিধানে রক্ষিত চার স্তম্ভ কেন জাতির আশা আকাক্সক্ষা পূরণে ব্যর্থ হলো? তাহলে কি সংবিধান প্রণেতারা দূরদৃষ্টি সম্পন্ন ছিলেন না। না জাতির প্রয়োজন, আশা-আকাক্সক্ষা, আবেগ-অনুভূতিকে বুঝতে বিজ্ঞ আইনবিদরা অক্ষম ছিলেন? সংবিধান অনেক কাটা ছেঁড়ার পরও তার শেষ রক্ষা হলো না। বরং এ সংবিধান এবং তার লেখকরা রক্তপাতের জন্য দায়ী এবং তার প্রতিবিধানে যদি কোনো নাগরিক আইনের আশ্রয় নেয় তাহলে তা অভূতপূর্ব হলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
সময়ের প্রয়োজনে ১৯৭২ সালে যে সংবিধান রচনা করা হয়েছিল বার বার পরিবর্তন ও সংশোধনের মাধ্যমে তাকে রীতিমত বিকলঙ্গ করে দেয়া হয়েছে। সংবিধান সংস্কার ইস্যুতে শক্তিশালী কমিশন গঠন করা হয়েছে। কেউ বলছেন বর্তমান পরিস্থিতির আলোকে সংবিধান নতুন করে লিখতে হবে। কেউ একে পুনঃলিখনের কথা বলছেন, কেউ আবার ৩০ লাখ শহীদের রক্তের দোহাই দিয়ে বিদ্যমান সংবিধান রেখে দেয়ার পক্ষে। এ পক্ষপাতিত্ব মনে হয় আবেগ প্রসূত।
৭২’ এর এর সংবিধানের সমাজতন্ত্র ছিল। কিন্তু সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা বিশ্ব থেকে বিদায় নিয়েছে। ভারতের ধর্ম নিরপেক্ষতা সে দেশের সা¤প্রদায়িকতা বন্ধ করতে পারেনি। বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ ও পাহাড়িদের মনমতো হয়নি। সুতরাং গালভরা স্তম্ভকে কেবল অলংকারিক না করে জনমানুষের বাসনাকে অক্ষুন্ন রেখে সংবিধান প্রণয়ন করতে হবে। এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

্রিন্ট

আরও সংবদ