খুলনা | বৃহস্পতিবার | ২১ নভেম্বর ২০২৪ | ৭ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ফের বাড়লো নীতি সুদহার

খবর প্রতিবেদন |
০৩:২৭ পি.এম | ২২ অক্টোবর ২০২৪


উচ্চ মূল্যস্ফীতি মোকাবিলায় বড় ব্যবধানে নীতি সুদহার বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংক এক বিজ্ঞপ্তিতে এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে। দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়। মঙ্গলবার নীতি সুদহার বিদ্যমান শতকরা ৯ দশমিক ৫০ শতাংশ হতে ৫০ বেসিস পয়েন্ট বৃদ্ধি করে ১০ শতাংশে পুনঃনির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যা আগামী সপ্তাহের শুরু থেকে কার্যকর হবে।
গত বছরের মার্চ থেকে দেশের মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের বেশি থাকায় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পরামর্শের সঙ্গে মিল রেখে নীতি সুদহার বাড়ানো হয়। গত ২৪ সেপ্টেম্বর নীতি সুদহার ৯ শতাংশ থেকে ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে সাড়ে ৯ শতাংশ নির্ধারণ করেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ড. আহসান এইচ মনসুর বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে দায়িত্বে আসার পর এ নিয়ে তৃতীয়বারে মতো বাড়ানো হলো। এর আগে প্রথমে সাড়ে ৮ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৯ শতাংশ করা হয়েছিল। 
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নীতি সুদহার বা রেপো রেট দশমিক ৫০ শতাংশ পয়েন্ট বাড়িয়ে ৯ দশ ৫০ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছে। এর ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলো যে টাকা ধার করবে, তার সুদহার বাড়বে। অর্থাৎ বাংলাদেশ ব্যাংক আরও সংকোচনমূলক মুদ্রা সরবরাহের পথে হাঁটছে।
নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, নীতি সুদহার করিডরের ঊর্ধ্বসীমা স্ট্যান্ডিং ল্যান্ডিং ফ্যাসিলিটি (এসএলএফ) সুদহার ১১ শতাংশ থেকে ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ১১ দশমিক ৫০ শতাংশে পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া নীতি সুদহার করিডরের নিম্নসীমা স্ট্যান্ডিং ডিপোজিট ফ্যাসিলিটি (এসডিএফ) সুদহার ৮ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৮ দশ৫০  শতাংশে বেসিস পয়েন্ট করা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, নীতি সুদহার বাড়ানোর এ সিদ্ধান্ত ২৭ অক্টোবর থেকে কার্যকর হবে।
নতুন নির্দেশনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক অনুসৃত সংকোচনমূলক পদক্ষেপ অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে ওভারনাইট রেপোনীতি সুদহার বিদ্যমান শতকরা ৯ দশমিক ৫০ শতাংশ হতে ৫০ বেসিস পয়েন্ট বৃদ্ধি করে ১০ শতাংশে পুনঃনির্ধারণ করা হলো।
এ ছাড়া ব্যাংকসমূহের তারল্য ব্যবস্থাপনা অধিকতর দক্ষতার সঙ্গে পরিচালন করার লক্ষ্যে নীতি সুদহার করিডোরের ঊর্ধ্বসীমা স্ট্যান্ডিং লেন্ডিং ফ্যাসিলিটি (এসএলএফ)-এর ক্ষেত্রে বিদ্যমান সুদহার শতকরা ১১ শতাংশ হতে ৫০ বেসিস পয়েন্ট বৃদ্ধি করে ১১ দশমিক ৫০ শতাংশ করা হয়েছে। আর নীতি সুদহার করিডোরের নিম্নসীমা স্ট্যান্ডিং ডিপোজিট ফ্যাসিলিটি (এসডিএফ) শতকরা ৮ শতাংশ হতে ৫০ বেসিস পয়েন্ট বৃদ্ধি করে ৮ দশমিক ৫০ শতাংশে পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছে। নতুন এ সিদ্ধান্ত বুধবার (২৭ অক্টোবর) হতে কার্যকর হবে।
বিবিএস-এর তথ্য মতে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১২ মাসের গড় মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৭৩ শতাংশে দাঁড়ানোর পর চলতি বছরের জুলাইয়ে ভোক্তা মূল্যস্ফীতি বেড়ে ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশ হয়। যা ২০১০-১১ অর্থবছরের পর সর্বোচ্চ। বিগত সরকার গত অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ৭ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যে রাখার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল। যদিও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক বেশি মূল্যস্ফীতি ছিল দেশে।
অন্যদিকে দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক ২০২২ সালের মে থেকে বেশ কয়েকবার সংকোচনমূলক নীতি অনুসরণ করছে। বাড়ানো হচ্ছে পলিসি রেট। নীতি সুদহার বাড়ানোর ফলে ব্যাংক ঋণের সুদ বেড়েছে। এতে ঋণ নেওয়া আগের চেয়ে ব্যয়বহুল হয়ে পড়ছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ব্যাংকগুলো যখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ধার করে তখন তার সুদহার ঠিক হয় রেপোর মাধ্যমে। আর রিভার্স রেপোর মাধ্যমে ব্যাংকগুলো তাদের উদ্বৃত্ত অর্থ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা রাখে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে যে সুদ হারে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ দেয়, তাকে বলে ব্যাংক রেট। রেপো রেট বৃদ্ধি করায় ব্যাংকগুলোর অর্থ নেয়ার খরচ বাড়বে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে।

্রিন্ট

আরও সংবদ