খুলনা | বুধবার | ২৩ অক্টোবর ২০২৪ | ৭ কার্তিক ১৪৩১

নতুন ৫ দফা দাবি ঘোষণা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের * স্বৈরাচারের দোসর বঙ্গভবনে আরাম-আয়েশ করবে এটা মেনে নেওয়া হবে না

উত্তাল ঢাকার রাজপথ : পদ ছাড়তে রাষ্ট্রপতিকে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম

খবর প্রতিবেদন |
০১:২৬ এ.এম | ২৩ অক্টোবর ২০২৪


রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিনের অপসারণ দাবিতে উত্তাল রাজধানী ঢাকার রাজপথ। বঙ্গভবন ও জাতীয় শহিদ মিনারে একের পর এক ছাত্র বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে দাবি উঠেছে রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিনকে অপসারণসহ ছাত্র সমাজের নতুন পাঁচ দফা দাবি। দাবির মধ্যে আরো আছে, ‘৭২-এর সংবিধান বাতিল, নতুন সংবিধান লেখা, ছাত্রলীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ ঘোষণা, বিগত তিন সংসদ নির্বাচন বাতিল ও যারা অংশ নিয়েছে তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত, জুলাই বিপ্লব ও গণঅভ্যুত্থানের স্পিরিটের আলোকে ২৪ পরবর্তী বাংলাদেশ বিনির্মাণে এই সপ্তাহের মধ্যে নতুন করে রূপরেখা প্রণয়ন করতে হবে।
মঙ্গলবার বঙ্গভবন ঘেরাও কর্মসূচি পালন কর্মসূচিতে ছাত্র-জনতা আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রাষ্ট্রপতিকে পদত্যাগের আল্টিমেটাম দেওয়া হয়েছে। বিকেল সাড়ে ৪টায় বঙ্গভবনের সামনে থেকে এই ঘোষণা দেওয়া হয়। এ সময় বিপুল সংখ্যক সেনাসদস্য সাজোয়া যান নিয়ে বঙ্গভবন এলাকায় অবস্থান করে। তার সঙ্গে ছিল পুলিশ-র‌্যাবসহ অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। তবে কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। ছাত্র সমাজের এই বিক্ষোভ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে রাজপথে নামে হাজারো ছাত্র-জনতা। সবার এক দাবি রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ।
আন্দোলনকারীরা বলেন, বর্তমান রাষ্ট্রপতি আ’লীগ ও শেখ হাসিনার দোসর। আমরা চাই না তিনি রাষ্ট্রপতি পদে থাকুন। তাই আমরা তাকে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছি তিনি যেন রাষ্ট্রপতির পথ থেকে পদত্যাগ করেন। তিনি যদি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পদত্যাগ না করেন তাহলে আমরা জানি তাকে কীভাবে পথ থেকে সরাতে হয়। ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটামে কাজ না হলে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবো।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিজে আহত হয়েছেন জানিয়ে বাহার উদ্দিন নামে একজন বলেন, রাষ্ট্রপতি চুপ্পু যে পর্যন্ত তার পদ থেকে পদত্যাগ না করবেন সে পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছেড়ে যাব না। চুপ্পু একজন মিথ্যাবাদী। তিনি স্বৈরাচার শেখ হাসিনার দোসর। আমরা চাই না কোনো স্বৈরাচারের দোসর এই পদে থাকুক।
মোঃ সোহাগ নামে একজন বলেন, আমরা দেখতে চাই চুপ্পু কতদিন বঙ্গভবনে থাকতে পারেন। ছাত্র আন্দোলনে আহতরা পথে পথে আর দুর্নীতিবাজ ও স্বৈরাচারের দোসর রাষ্ট্রপতি চুপ্পু বঙ্গভবনে আরাম-আয়েশ করবে এটা মেনে নেওয়া হবে না। এই রাষ্ট্রপতি ভারতের দালাল এবং শেখ হাসিনার দোসর। 
ইনকিলাব মঞ্চ নামের ব্যানারে আন্দোলনে আসা আরেকটি পক্ষের লোকজন বলেন, আমরা চাই বর্তমান রাষ্ট্রপতি যেন দ্রুত পদত্যাগ করেন।
বঙ্গভবন এলাকার সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে ডিএমপির যুগ্ম-কমিশনার মোঃ ফারুক হোসেন বলেন, বঙ্গভবন এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য ডিএমপি থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। সাদা পোশাকে গোয়েন্দা পুলিশ সদস্যরা কাজ করছেন। অপ্রীতিকর কিছু যাতে না ঘটে সেজন্য স্থানীয় থানা পুলিশের পাশাপাশি সেখানে সহযোগিতায় রয়েছেন সেনাবাহিনী ও র‌্যাবের সদস্যরা।
প্রসঙ্গত, ছাত্র-জনতার তোপের মুখে গত ৫ আগস্ট পালিয়ে যান ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি পালিয়ে যাওয়ার পর জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন এবং আমি তা গ্রহণ করেছি।
তবে স¤প্রতি মানজমিন পত্রিকার সম্পাদক মতিউর রহমানের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে রাষ্ট্রপতি জানান, তিনি শুনেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন, কিন্তু তার কাছে এ সংক্রান্ত কোনো দালিলিক প্রমাণ বা নথিপত্র নেই। রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘বহু চেষ্টা করেও আমি ব্যর্থ হয়েছি। তিনি হয়তো সময় পাননি।’ 
এরপর নতুন করে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে সরকার পতনে নেতৃত্বদানকারী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সমাজ। 
নতুন ৫ দফা দাবি : রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ, সংবিধান সংশোধন, বিগত তিনটি সংসদ নির্বাচন অবৈধ ঘোষণা, ছাত্রলীগ নিষিদ্ধসহ মোট পাঁচ দফা নতুন দাবি ঘোষণা করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।  
মঙ্গলবার বিকেল সোয়া পাঁচটায় কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের পাদদেশে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল­াহ। 
হাসনাত বলেন, সেদিন শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবি এই শহিদ মিনার থেকে দেওয়া হয়েছিল। মঙ্গলবারও এই শহিদ মিনার থেকেই ছাত্রলীগ, আ’লীগ নিষিদ্ধ করা, রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগ করানো এবং সংবিধান বাতিলসহ বিভিন্ন বিষয়ে ৫ দফা ঘোষণা দিতে যাচ্ছি। 
১. অনতিবিলম্বে ৭২ এর সংবিধান বাতিল করতে হবে। সেই জায়গায় ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের পক্ষ থেকে নতুন করে সংবিধান লিখতে হবে। ২. এই সপ্তাহের মধ্যে ছাত্রলীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে। তাদেরকে আজীবনের জন্য নিষিদ্ধ করতে হবে। ৩. এই সপ্তাহের মধ্যে বর্তমান রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দীনকে পদচ্যুত করতে হবে। ৪. জুলাই বিপ্লব ও গণঅভ্যুত্থানের স্পিরিটের আলোকে ২৪ পরবর্তী বাংলাদেশ বিনির্মাণে এই সপ্তাহের মধ্যে নতুন করে রূপরেখা প্রণয়ন করতে হবে। ৫. ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনকে অবৈধ ঘোষণা করতে হবে। এসব নির্বাচনে যারা নির্বাচিত হয়েছিল তাদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে হবে। একই সাথে তারা যেন ২৪ পরবর্তী বাংলাদেশে কোনো ভাবেই প্রাসঙ্গিক হতে না পারে এবং নির্বাচনে অংশ নিতে না পারে সেজন্য আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে।
সমন্বয়ক হাসনাত বলেন, শেখ হাসিনা, আ’লীগ, ছাত্রলীগ ২৪ এর বিপ্লব পরবর্তী বাংলাদেশে প্রাসঙ্গিক হবে কি না, তার ফয়সালা ১৭ জুলাই হয়ে গেছে। যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপর ছাত্রলীগ-যুবলীগের সন্ত্রাসীরা নগ্নভাবে হামলা চালিয়েছিল, সেদিনই সিদ্ধান্ত হয়ে গিয়েছে এই জঙ্গি সংগঠন এবং তাদের নেতা শেখ হাসিনার ঠাঁই বাংলার মাটিতে হবে না। রাস্তায় রক্ত দিয়ে আমরা সেটিকে নিশ্চিত করেছি। আমরা এই সপ্তাহের মধ্যে নিশ্চিত করতে চাই আ’লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ মুজিববাদী যত সংগঠন রয়েছে সবকিছু বাংলার মাটি থেকে উৎখাত হয়ে যাবে।  
আ’লীগের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্য করে হাসনাত বলেন, অনলাইনে সক্রিয় ছাত্রলীগ, যুবলীগ এবং আওয়ামী মুজিববাদীদের বলতে চাই, আমাদের ভয় দেখিয়ে লাভ নেই।  আমরা রাজপথে নেমে পুলিশ লীগের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে জয়ী হয়েছি। মৃত্যুর ভয় আমরা পাই না। মৃত্যুর পরোয়া আমরা করি না। শেখ হাসিনাকে পুনর্বাসিত করার স্বপ্ন ভুলে গিয়ে নিজেরাই বিচারের আওতায় চলে আসুন। শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে আসব। আমাদের বিপ্লব শেষ হয়ে যায়নি। আমরা ৫ আগস্ট শেখ হাসিনাকে উৎখাত করতে পারলেও এখন পর্যন্ত রাজনৈতিক বন্দোবস্ত করতে পারিনি। বিগত ১৬ বছর বিএনপি, জামায়াত, শিবির, ছাত্রদলের নেতাদের নির্যাতিত হতে দেখেছি। যতদিন পর্যন্ত সুষ্ঠু ধারার রাজনৈতিক সংগঠনগুলোকে আমরা ভালো পরিবেশ করে দিতে না পারছি, ততদিন পর্যন্ত আমাদের বিপ্লব শেষ হবে না। 
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আয়োজনে প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক সারজিস আলম, আব্দুল হান্নান মাসউদসহ অন্যান্যরা।

্রিন্ট

আরও সংবদ