খুলনা | বৃহস্পতিবার | ২১ নভেম্বর ২০২৪ | ৭ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

স্বাস্থ্য প্রশাসনের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ, খুলনায় এইচপিভি টিকা কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়ার শঙ্কা

বশির হোসেন |
০১:৩৯ এ.এম | ২৩ অক্টোবর ২০২৪


জরায়ুমুখ ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে দেশে বছরে প্রায় ৫ হাজার নারী মারা যান। প্রতিবছর লাখে ১১ জন নারী এ ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। খুলনাসহ উপকূলে নারীদের মধ্যে এ সংখ্যা সব থেকে বেশি। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে সারাদেশের ন্যায় খুলনায়ও শুরু হচ্ছে প্যাপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি) টিকাদান কর্মসূচি। তবে খুলনার স্বাস্থ্য প্রশাসনের গাফিলতিতে গুরুত্বপূর্ণ এ টিকা কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। 
মহানগরসহ খুলনা জেলায় লক্ষাধিক শিশুকে টিকার আওতায় আনার কথা বলা হলেও মঙ্গলবার দুপুর ২টা পর্যন্ত ১০ শতাংশ কিশোরীও রেজিস্ট্রেশন করতে পারেনি। ফলে রেজিস্ট্রেশন ছাড়া টিকা দেয়ার সুযোগ না থাকায় মুখ থুবড়ে পড়তে পারে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এ কার্যক্রম।
খুলনা সিভিল সার্জন অফিস থেকে পাওয়া তথ্যমতে, সারাদেশের ন্যায় খুলনায়ও জরায়ুমুখ ক্যান্সার প্রতিরোধে আগামী ২৪ অক্টোবর থেকে খুলনা সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ৩২ হাজার ৭৪৩ কিশোরীকে এবং খুলনা জেলার নয়টি উপজেলায় ৭১ হাজার তিনশ’ ২৮ কিশোরীকে হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি) টিকা প্রদান করার টার্গেট গ্রহণ করা হয়েছে। তবে মঙ্গলবার দুপুর ২টা পর্যন্ত খুলনা মহানগর এলাকায় ৩ হাজার ৮৭০ এবং নয় উপজেলায় মাত্র ৬ হাজার ৯৪৯ জন কিশোরী রেজিস্ট্রেশন করতে পেরেছে। যা লক্ষ্যমাত্রার ১০ শতাংশের কম। কার্যক্রম শুরুর মাত্র একদিন আগে রেজিস্ট্রেশনের এমন অবস্থায় খুলনার স্বাস্থ্য প্রশাসনকেই দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা।
খুলনা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী সমৃদ্ধি স্বস্তি। শারদীয়া দুর্গোৎসবের ১১ দিনের ছুটি শেষে গত ২০ অক্টোবর স্কুলে গিয়ে জানতে পারেন এইচপিভি টিকা নেওয়ার কথা এবং শ্রেণি শিক্ষক বলে দেন, ২২ অক্টোবরের মধ্যে রেজিস্ট্রেশন কমপ্লিট করতে হবে। কয়েকদিন নিজেরা বাসায় চেষ্টা করে না পেরে মঙ্গলবার তার মা ডলি কুন্ডুকে সঙ্গে নিয়ে একটি নেট সার্ভিস প্রতিষ্ঠানের সাহায্য নিয়ে ৫০ টাকার বিনিময়ে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করেন।
সমৃদ্ধির মা বলেন, স্কুলগুলোকে যদি বাধ্য করা হতো বা শতভাগ শিক্ষার্থী রেজিস্ট্রেশন নিশ্চিত করার তাগিদ থাকতো তাহলে নিশ্চই স্কুলগুলো যথাযথ দায়িত্ব পালন করতেন। “এখনো সময় আছে সরকারি প্রচার মাধ্যম, সংবাদপত্র বা ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ মাধ্যমে শতভাগ শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের আওতায় আনতে না পারলে এই কার্যক্রমের যথাযথ উদ্দেশ্য সাধিত হবে না বলে আমি মনে করি।
স্বস্তির ভাগ্যে রেজিস্ট্রেশন জুটলেও এখনও রেজিস্ট্রেশন করতে পারেনি খুলনার ৯০ শতাংশ কিশোরী। দাকোপ ও বটিয়াঘাটার বেশ কয়েকটি স্কুলে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এখনও অধিকাংশ শিক্ষার্থী রেজিস্ট্রেশন করতে পারেনি।
বটিয়াঘাটার সুরখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আইয়ুব আলী গাজী বলেন, আমরা তিনদিন ধরে এইচপিভি টিকার জন্য শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন করছি। মোটামুটি হয়েছে বাকি দুই একদিনের মধ্যে শেষ করে ফেলবো।
খুলনা প্রেসক্লাবের সদস্য সচিব রফিউল ইসলাম টুটুল বলেন, আমার মেয়ের জন্য টিকার রেজিস্ট্রেশন করতে আমি তিনঘন্টা ধরে চেষ্টা করেও মোবাইলের ওটিপি পাইনি। আমার যদি এই অবস্থা হয়, তাহলে সাধারণ মানুষের কি অবস্থা হবে প্রশ্ন এই সিনিয়র সাংবাদিকের।
খুলনার ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডাঃ শেখ মোঃ কামাল হোসেন বলেন, আমরা ইতোমধ্যে সকল স্টেক হোলডারদের নিয়ে অনেকগুলো এডভোকেসী সভা করেছি। অনেকদিন ধরে এই প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। আশা করছি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ভালোভাবে লক্ষ্য পুরণ করতে পারবো।

্রিন্ট

আরও সংবদ