খুলনা | বৃহস্পতিবার | ২১ নভেম্বর ২০২৪ | ৭ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

খুলনার উদ্যোগ-কৌশল সিন্ডিকেট ভাঙতে দেশকে পথ দেখাতে পারে

|
১২:০২ এ.এম | ২৬ অক্টোবর ২০২৪


ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ছাত্র জনতার আন্দোলন এখনো শেষ হয়নি। গত দেড় দশকে পরতে পরতে ফ্যাসিবাদের যে বীজ রোপিত হয়েছে যে গাছ এখন উপড়ে ফেলতে না পারলে ছাত্র জনতার প্রত্যাশা পূরণের জন্য বিপ্লবের ফসল ঘরে তোলা যাবে না। প্রতি বিপ্লবের পদধ্বনি তাড়া করে ফিরবে। এ সত্য সচেতন নাগরিক ঠিকই ধরতে পেরেছেন। আন্দোলনের ফসল বলতে মোটা দাগে বলতে হবে আপামর মানুষের কল্যাণ। সাধারণ মানুষ যা দেশের ৯০ ভাগ। তারা যদি জীবনের বেঁচে থাকার মৌলিক চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হয় তাহলে বিপ্লব, সংস্কার, সরকার পরিবর্তনের সাথে জনস্বার্থের কি সম্পর্ক? বাজার সিন্ডিকেট সেখানে প্রশাসনের স্থবিরতা সাক্ষ্য দিচ্ছে সেখানে আইন, বিচার, সংবিধান সংস্কার সাধারণ মানুষের জন্য কতটা দরকার তা ভুক্তভোগী মাত্রই জানে। দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি বাজার সিন্ডিকেট ভাঙাই হবে, এটা জনবান্ধব সরকারের ফরজ কাজ, অন্যান্য সংস্কার হবে সুন্নত নফল।
বাজার সিন্ডিকেট ভাঙতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা খুলনার শিববাড়ী মোড়ে যে প্রকল্প চালু করেছে তা গোটা দেশকে পথ দেখাতে পারে। ‘বিনা লাভের দোকান’ নামে এ প্রকল্প থেকে ক্রেতারা ন্যায্যমূল্যে পণ্য কিনতে পারছেন। পর্যায়ক্রমে মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় এ প্রকল্প চালু হবে। খুলনার বিভিন্ন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এ দোকান পরিচালনা করছেন। বিনা লাভের দোকানে প্রতি কেজি মসুর ডাল ৯৯টাকা, আলু ৫০, লালশাক ২৫, পিঁয়াজ ৬৫ থেকে ১০০, লাউ ৩০ থেকে ৪০, ডিম প্রতি পিচ ১২ টাকা। প্রতিক্রেতা পাবেন ১ কেজি পণ্য ও ১ ডজন ডিম কিনতে যশোরের বিভিন্ন গ্রাম-গঞ্জ থেকে পণ্য সংগ্রহ করছেন শিক্ষার্থীরা। দেখা যায়, ৫০ হাজার টাকা পণ্য বিক্রয়ের পর ৫০ হাজার টাকাই ফেরত এসেছে। কাগজের প্যাকেট ও সুতার জালি ব্যাগ ব্যবহৃত হওয়ায় পলিথিন ও প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধ হচ্ছে। আনুসঙ্গিক খরচ শিক্ষার্থীরা পকেট থেকে দিচ্ছেন।
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের গঠিত টাস্ক ফোর্স থেকে এ পদ্ধতি সহজতর। আমরা জানি, উৎপাদক থেকে খুচরা বিক্রেতা পর্যন্ত আসতে ৫ থেকে ৭ বার পণ্যের হাত বদল ঘটে। ফলে অস্বাভাবিকভাবে পণ্যের মূল্য বেড়ে সিন্ডিকেট হোতাদের কারসাজিতে। এখন মধ্যস্বত্ব ভোগীদের জায়গা যদি দেশ প্রেমিক ছাত্র-জনতা দখল করে তা হবে বাজারমূল্য নিয়ন্ত্রণের নির্ভূল কৌশল। এক দিনে সিন্ডিকেট ভাঙা সম্ভব নয়।
আমরা মনে করি, মূল্য নিয়ন্ত্রণে ভোক্তার কাছে সহনীয় দামে খাদ্যদ্রব্য পৌঁছে দেয়ার খুলনায় এ উদ্যোগ রোল মডেল হিসেবে কাজ করবে। পরীক্ষায় দেখা গেছে, এতে বাজার মূল্য ৪০ শতাংশ কমবে। দক্ষিণবঙ্গের পূণ্যভূমি খুলনার এ মহতী উদ্যোগ সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কার কর্মযজ্ঞে গতি পাবে। দেশের সিংহভাগ মানুষকে অর্ধাহারে রেখে সংস্কার ফলপ্রসূ হবে না। সিন্ডিকেটের নমুনা কেবল বাজারে নয়, বুদ্ধিজীবি, রাজনীতিবিদ প্রশাসনে মেরামতে সিন্ডিকেটের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। তবে আপাতত বাজার সিন্ডিকেট ভাঙা বেশী জরুরি। টাস্ক ফোর্স যা না পারছে তরুণ ছাত্র সমাজ তা দেখাচ্ছে। আর তা প্রদর্শনে খুলনার তরুণ ছাত্র সমাজ এখন ড্রাইভিং সিটে।

্রিন্ট

আরও সংবদ