খুলনা | বুধবার | ০২ জুলাই ২০২৫ | ১৮ আষাঢ় ১৪৩২

খুলনার ৩৪ ইউনিয়নে ‘নৌকা’র মূল প্রতিপক্ষ স্বতন্ত্র বিদ্রোহীরা

আশরাফুল ইসলাম নূর |
১২:৪৬ এ.এম | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২১

পাইকগাছা উপজেলার গড়াইখালী ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী রুহুল আমিন বিশ্বাসের মূল প্রতিদ্ব›দ্বী স্থানীয় সংসদ সদস্যের মামা আব্দুস সালাম কেরু। বিদ্রোহী দমনে গত ১১ সেপ্টেম্বর ১১ জনকে দল থেকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে জেলা আ’লীগ। তবুও নৌকা’র মূল প্রতিপক্ষ স্বতন্ত্রের আবরণে বিদ্রোহী বা স্বতন্ত্র প্রার্থীরাই। ফলে নির্বাচনকে ঘিরে উত্তাপ চরমে, বাড়ছে সহিংসতাও। যে কোন উপায়ে নির্বাচিত হতে মরিয়া প্রার্থীরা। হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনায় খুলনাতে এ পর্যন্ত অর্ধশত আহত হয়েছেন। যদিও প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইউপি নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার সর্বাত্মক প্রস্তুতির কথা বলা হচ্ছে।

জেলার ৩৪টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন, আগামী ২০ সেপ্টেম্বর। ভোট গ্রহনের আর মাত্র চারদিন। শেষ মুহূর্তের প্রচার-প্রচারণায় নির্ঘুম রাত কাটছে প্রার্থী ও কর্মী-সমর্থকদের। এবারের নির্বাচনেও দলীয়ভাবে প্রার্থী দেয়নি বিএনপি। ফলে চেয়ারম্যান পদে প্রতিটি ইউনিয়নেই রয়েছেন সরকারি দলের একাধিক শক্তিশালী বলয়।

জেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রথম ধাপে খুলনার পাঁচ উপজেলার ৩৪ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী ১৫৬ জন। এসব ইউনিয়নের ৩০৬টি ওয়ার্ডে ইউপি সদস্য পদ প্রার্থী এক হাজার ৪৮১ জন। সংরক্ষিত সদস্য পদে ৪৬৪ জন প্রার্থী রয়েছেন। এবারে ইউনিয়নগুলোতে মোট ভোটার সংখ্যা ৬ লাখ ৪০ হাজার ৭৭৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৩ লাখ ১৭ হাজার ৩৯৬ জন ও নারী ৩ লাখ ২৩ হাজার ৩৮৩ জন। 
অন্যদিকে, দাকোপের লাউডোব ইউনিয়নে আ’লীগ মনোনীত প্রার্থী শেখ যুবরাজ বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় চেয়ারম্যান ও কয়রা উপজেলা সদর ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডে শেখ সোহরাব আলী বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় মেম্বর পদে নির্বাচিত হচ্ছেন।

স্থানীয় প্রতিনিধিদের সাথে কথা বলেন জানা গেছে, ইউনিয়ন পর্যায়ে মূল প্রতিদ্ব›িদ্বতা হতে পারে আ’লীগ সমর্থিত প্রার্থী ও বিদ্রোহী বা স্বতন্ত্র প্রার্থীর আবরণে সরকারি দলীয় নেতাদের মধ্যেই।

কয়রা : উপজেলার  আমাদী ইউনিয়নে জিয়াউর রহমান জুয়েলের (নৌকা) সাথে মুখোমুখি আমীর আলী গাইন, বাগালী ইউনিয়নে নৌকার আব্দুস সামাদ গাজীর সাথে শক্ত প্রতিদ্ব›দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী জামায়াত নেতা মোঃ ওয়ালিউল­াহ্, মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নে শাহনেওয়াজ শিকারীর (নৌকা) শক্ত প্রতিপক্ষ দু’জন। তারা হলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মোঃ রফিকুল ইসলাম (বিএনপি) এবং উপজেলা আ’লীগের সদ্য বহি®কৃত বিজয় কুমার সরদার (বিদ্রোহী প্রার্থী)। মহারাজপুরে নৌকা মাঝি আব্দুল­াহ আল মাহমুদের প্রতিদ্ব›দ্বী সাবেক সেনা সদস্য মোঃ আনোয়ার হোসেন। কয়রা সদর ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান সাংবাদিক মোঃ হুমায়ুন কবির, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা রবিউল ইসলাম রবীন ও নৌকা প্রতীকের প্রার্থী এস এম বাহারুল ইসলামের ত্রিমুখী লড়াই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এদিকে, উত্তর বেদকাশি ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী আ’লীগ নেতা লুৎফর রহমান, জামায়াত নেতা নূর কামাল ও নৌকা প্রতীকের সরদার নুরুল ইসলামের মধ্যে ভোটের লড়াই জমবে। আর দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান জি এম শামসুর রহমান, ইউনিয়ন বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক জি এম সিরাজুল ইসলাম এবং আ’লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আছের আলী মোড়লের মধ্যে ত্রিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা দেখছেন ভোটাররা।

দাকোপ : উপজেলার পানখালী ইউনিয়নে নৌকার শেখ আবদুর কাদেরের প্রতিপক্ষ স্বতন্ত্র প্রার্থী আ’লীগ নেতা সাব্বির আহমেদ, দাকোপ সদর ইউনিয়নে বিনয় কৃষ্ণ রায়ের মুখোমুখি আ’লীগ নেতা সঞ্জয় রায়, কৈলাশগঞ্জে মিহির মন্ডলের নৌকার সাথে বাইচ ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা গৌরাঙ্গ প্রসাদ রায়ের, কামারখোলায় নৌকার মাঝি পঞ্চানন কুমার মন্ডলের প্রতিদ্ব›দ্বী আ’লীগ নেতা সমরেশ ঘরামী, তিলডাঙ্গায় রণজিৎ কুমার মন্ডলের নৌকা প্রতিপক্ষ বিদ্রোহী প্রার্থী মোঃ জালাল উদ্দিন গাজী, বাজুয়ায় মানস কুমার রায়ের শক্ত প্রতিপক্ষ দেবপ্রসাদ গাইন, বানিশান্তা ইউপিতে নৌকার সুদেব কুমার রায়ের মুখোমুখী সুধাংশু বৈদ্য, আর সুতারখালী ইউনিয়নে নৌকার মাসুম আলী ফকিরের প্রতিপক্ষ গাজী আশরাফ।

বটিয়াঘাটা : উপজেলার গঙ্গারামপুর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান হাদীউজ্জামানের প্রতিদ্ব›দ্বী মোঃ আসলাম হালদার, বালিয়াডাঙ্গা ইউনিয়নে মোঃ মুশিবর রহমান শেখের প্রতিদ্ব›দ্বী মোঃ গোলাম হাসান এবং আমিরপুর ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান জি এম মিলন হালদারের শক্ত প্রতিদ্ব›দ্বী খায়রুল ইসলাম খান জনি। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী সাবেক চেয়ারম্যান খায়রুল ইসলাম খান জনি।

দিঘলিয়া : উপজেলার গাজীরহাট ইউনিয়নে নৌকার মোঃ কামাল উদ্দিন সিদ্দিক হেলালের প্রতিদ্ব›দ্বী তারই চাচাতো ভাই মফিজুল ইসলাম ঠান্ডা এবং সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ; বারাকপুর ইউনিয়নে গাজী জাকির হোসেনের প্রতিপক্ষ শেখ আনসার আলী, সেনহাটি ইউনিয়নে নৌকার  মাঝি সাবেক চেয়ারম্যান ফারহানা নাজনীনের শক্ত প্রতিপক্ষ বিদ্রোহী প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান জিয়া গাজী, দিঘলিয়া সদর ইউনিয়নে মোঃ ফিরোজ মোল­ার মুখোমুখী হায়দার আলী মোড়ল, আর আড়ংঘাটা ইউনিয়নে নৌকার মোঃ মফিজুর রহমানের প্রতিপক্ষ বামপন্থী সংগঠনের নেতা এস এম ফরিদ আক্তার এবং যোগীপোল ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান নৌকার শেখ আনিছুর রহমানের প্রতিপক্ষ নগর যুবলীগ নেতা সাজ্জাদুর রহমান লিংকন। 

পাইকগাছা : উপজেলার হরিঢালী ইউনিয়নে এক প্রার্থীর মৃত্যুর কারনে নির্বাচন স্থগিত রয়েছে। এছাড়া কপিলমুনিতে নৌকার মাঝি কওছার আলী জোয়াদ্দারের প্রতিদ্ব›দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী মোঃ মজিবুর রহমান, লতায় আ’লীগ মনোনীত প্রার্থী কাজল কান্তি বিশ্বাসের মুখোমুখি বর্তমান চেয়ারম্যান চিত্তরঞ্জন মন্ডল, দেলুটি ইউনিয়নে নৌকার রিপন কুমার মন্ডলের সাথে প্রতিদ্ব›িদ্বতা হবে দিজেন্দ্রনাথ মন্ডল, সোলাদানা ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান এস এম এনামুল হকের সাথে প্রতিদ্ব›দ্বী নৌকার আবদুল মান্নান গাজী, লস্কর ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকের কেএম আরিফুজ্জান তুহিনের মূল প্রতিদ্ব›দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী করিম গাইন, গদাইপুরে নৌকার শেখ জিয়াদুল ইসলামের লড়াই হবে বর্তমান চেয়ারম্যান ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী গাজী জোনায়েদুর রহমানের সাথে, রাড়ুলী ইউনিয়নে নৌকার আবুল কালাম আজাদের শক্ত প্রতিপক্ষ বর্তমান চেয়ারম্যান আ’লীগ নেতা আব্দুল মজিদ গোলদার, চাঁদখালী ইউনিয়নে নৌকার মুনসুর আলী গাজী, স্বতন্ত্র প্রার্থী মনি মোল­া ও শাহজাদা ইলিয়াজের ত্রিমুখী লড়াইয়ের আভাস রয়েছে এবং গড়াইখালী ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী রুহুল আমিন বিশ্বাসের মূল প্রতিদ্ব›দ্বী স্থানীয় সংসদ সদস্যের মামা আব্দুস সালাম কেরু। যদিও গত ১১ সেপ্টেম্বর জেলা আ’লীগের বর্ধিত সভায় সর্বসম্মতিক্রমে খুলনায় ইউপি নির্বাচনে ১১ জন বিদ্রোহী প্রার্থীকে দল থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।

এর মধ্যে সহিংস ঘটনা ঘটেছে কয়রার দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নে, পাইকগাছার সোলাদানায়, দাকোপের পানখালী ইউনিয়নে, দিঘলিয়া উপজেলার সেনহাটিতে, বটিয়াঘাটা উপজেলার আমিরপুর ইউনিয়নের সৈয়দের মোড়ে। এতে প্রার্থীসহ অন্তত অর্ধশত কর্মী-সমর্থক আহত হয়েছেন।

খুলনা জেলা সিনিয়র নির্বাচন অফিসার এম মাজহারুল ইসলাম জানান, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহনের জন্য প্রস্তুতি চলছে। নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিষয়ে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় সার্বিক বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

খুলনা জেলা প্রশাসক মোঃ মনিরুজ্জামান তালুকদার বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন স্থানীয় সরকারের তৃণমূল পর্যায়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন। এখানে প্রতিযোগিতা থাকবে, তবে বিশৃঙ্খলা কাম্য নয়। সকলেই চাই সুষ্ঠু নির্বাচন। সরকারেরও কঠোর নির্দেশনা রয়েছে নিরপেক্ষ নির্বাচন করার। অতএব একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করার জন্য প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে সবধরনের সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।

্রিন্ট

আরও সংবদ