খুলনা | মঙ্গলবার | ২৮ জানুয়ারী ২০২৫ | ১৫ মাঘ ১৪৩১

কৃষিপণ্য পরিবহনে ট্রেন : সফল করতে বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ দরকার

|
১২:১৩ এ.এম | ৩০ অক্টোবর ২০২৪


সহজে ও কম খরচে কৃষিপণ্য পরিবহনের জন্য ট্রেন অনেক দেশেই জনপ্রিয় ও সহজলভ্য। বাংলাদেশে একসময় পণ্য পরিবহনের জন্য আলাদা ট্রেন কিংবা ট্রেনে আলাদা বগির ব্যবস্থা থাকলেও সা¤প্রতিক বছরগুলোতে সেটার চল একেবারেই উঠে যেতে আমরা দেখেছি। এর পরিবর্তে সড়কপথই মূলত পণ্য পরিবহনের মাধ্যম হয়ে উঠেছে।
এটা সত্যি যে যোগাযোগ অবকাঠামোর প্রভূত উন্নতি হওয়ায় কৃষকেরা একেবারে জমি থেকে এবং ব্যাপারীরা মোকাম থেকে তাঁদের পণ্য বিক্রি করতে পারেন। কিন্তু সড়কপথে পণ্য পরিবহন রেল ও পানিপথের তুলনায় অনেক ব্যয়বহুল। বাংলাদেশে উৎসস্থল থেকে ভোক্তার কাছে পণ্য পৌঁছাতে কয়েক গুণ দাম বেড়ে যায়। এর প্রধান দু’টি কারণ হলো কয়েক স্তরের মধ্যস্বত্বভোগী ও রাস্তায় রাস্তায় ক্ষমতাসীন দল ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চাঁদাবাজি।
এ বিবেচনায় রেলওয়ে কৃষিপণ্য পরিবহনের জন্য দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিশেষ ট্রেন চালানোর উদ্যোগটিকে আমরা সাধুবাদ জানাই। বিশেষ এই ট্রেনে অত্যাধুনিক লাগেজ ভ্যানে কৃষিপণ্য অর্থাৎ ফল, সবজি ছাড়াও রেফ্রিজারেটেড লাগেজ ভ্যানে হিমায়িত মাছ, মাংস ও দুধ পরিবহন করা যাবে। ফলে একদিকে যেমন কৃষিপণ্য ও অন্যান্য ভোগ্যপণ্য কম খরচে ঢাকার বাজারে পাঠানোর সুযোগ তৈরি হলো, ঠিক একই সঙ্গে রেলওয়েরও আয়ের ক্ষেত্র তৈরি হলো। তবে এটিকে সফল উদ্যোগে পরিণত করতে হলে রেলওয়েকে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ উতরাতে হবে। গণমাধ্যমের খবর জানাচ্ছে, খুলনা-ঢাকা এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ-ঢাকা রুটে কৃষিপণ্য পরিবহনের জন্য যে বিশেষ ট্রেন চালু হয়েছে, সেটা শুরুতে তেমন সাড়া ফেলতে পারেনি। এক্ষেত্রে যথেষ্ট প্রচারণা হয়নি বলে কৃষকেরা জানিয়েছেন। খুলনা ও যশোর অঞ্চলের ব্যাপারীরা বলছেন, ট্রাকে করে ঢাকায় সবজি পাঠাতে তাঁদের কেজিতে দুই টাকা পড়ে, কিন্তু ট্রেনে করে পাঠাতে হলে মোকাম থেকে স্টেশন পর্যন্ত আনা এবং স্টেশন থেকে বাজার পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া মোট মিলিয়ে তাঁদের প্রায় দ্বিগুণ খরচ পড়ে যায়।
ফলে কৃষকের জমি কিংবা স্থানীয় বাজার থেকে কাছে রেলস্টেশনে পৌঁছানো এবং ঢাকায় পৌঁছানোর পর সেখান থেকে পাইকারি বাজারে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে যে সমস্যার কথা কৃষক ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, সেটা বাস্তবসম্মত। এ সমস্যার সমাধান না করা গেলে ট্রেনে কৃষিপণ্য পরিবহনের উদ্যোগটি যত ভালো হোক না কেন, সেটা সফল হওয়া কঠিন।
আমরা মনে করি, উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গের কৃষিপণ্য উৎপাদনকেন্দ্রগুলো থেকে উৎপাদিত পণ্য ঢাকার বাজারে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে সড়কপথের একটি ভালো বিকল্প হতে পারে রেলপথ। কৃষক ও ব্যবসায়ীরা যাতে ট্রেনে করে পণ্য পরিবহনে আগ্রহী হন, সেজন্য ব্যাপক প্রচারণার বিকল্প নেই। একই সঙ্গে তাঁরা যে বাস্তব সমস্যার কথা বলছেন, তার সমাধানও জরুরি।

্রিন্ট

আরও সংবদ