খুলনা | মঙ্গলবার | ০৫ নভেম্বর ২০২৪ | ২১ কার্তিক ১৪৩১

প্রশিক্ষিত পেশাদার পুলিশ বাহিনী গঠন এখন সময়ের দাবি

|
১১:৫৯ পি.এম | ৩০ অক্টোবর ২০২৪


দেশের এই ক্রান্তি লগ্নে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন একটি প্রশিক্ষিত দক্ষ পুলিশ বাহিনী। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করতে পুলিশ বাহিনীর বিকল্প নেই। তবে বাহিনী থাকলে কেবল হবে না। দরকার নিয়মতান্ত্রিক পেশাদার পুলিশ বাহিনী। অকার্যকর ও অনৈতিক দলবাজ পুলিশ বাহিনী দিয়ে প্রয়োজন মেটানো সম্ভব না। বিগত সরকার দেশটাকে একটি পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত করে ফেলেছিলো। সরকার গঠন ও ক্ষমতায় টিকে থাকতে পুলিশ তাদের সহায়তা করেছে অতঃপর সরকার পুলিশের বিশ্বস্ত বন্ধুতে পরিণত হয়েছে। সরকারের সাথে দোস্তী পাতাতে জনগণকে বানাতে হয়েছে শত্র“। বস্তুত গত দশক আওয়ামী সরকার পুলিশকে পরিণত করেছিল পেটোয়া বাহিনীতে। সরকার হয়েছিল পুলিশ সমর্থক, জন সমর্থক নয়। যা চূড়ান্ত দৃষ্টান্ত আমরা দেখেছি আগস্ট বিপ্লবের আন্দোলনকারীদের সাথে পুলিশের নির্মম আচরণে।
এক প্রতিবেদনে প্রকাশ ২০০৯-২৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ পুলিশে মোট ৮৩ হাজার ৭০টি নতুন পদ সৃষ্টি হয়। দেড় দশকে শুধু কনস্টেবল, এসআই ও সার্জেন্ট পদে নিয়োগ দেয়া হয় ১ লাখ ১৯ হাজার ৯১৯ জনকে। এই বিশাল জনবলকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করেছে সরকার। ছাত্রলীগ, যুবলীগ কর্মীদের এতে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। অন্যদিকে বিরোধী তথা সাধারণ জনগণের দমন পীড়নে তাদের ব্যবহার করা হয়েছে। প্রতারণা এবং অযোগ্যতার কারণে পুলিশের কমপক্ষে ৯০ হাজার নিয়োগ সম্পর্কে অভিযোগ রয়েছে। 
বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর দুর্নীতি ও অপেশাদার আচরণ জনগণের আকাক্সক্ষা পূরণে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। অভ্যুত্থান দমন করতে গোটা দেশে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগে বিপুল সংখ্যক পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ফলে অনেক পুলিশ ও তাদের কর্মকর্তা এখন পলাতক। ফলে পুলিশ জনবলের ঘাটতি আইন-শৃঙ্খলার পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক পর্যায়ে আনতে বিশ্বাসের অভাব এবং দলবাজ পুলিশের অসহযোগিতার কারণে আইন-শৃঙ্খলা’ রক্ষার ক্ষেত্রে এখনো কোনো কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারছে না। পুলিশের একটি অংশ এখনো তাদের দলীয় আনুগত্যের জন্য জনগণের জন্য কাজ করতে আগ্রহী হচ্ছে না।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল ২০২১ সালের সমীক্ষায় দেখা যায় আইন প্রয়োগকারী সংস্থা সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত। কিন্তু ২ লাখ ১৩ হাজার সদস্যের পুলিশের ১ শতাংশের বিরুদ্ধে এখনো পর্যন্ত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয় নি। সরকার পতনের পর রাজধানীতে ৯৪জন পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ২৮৭টি মামলা হয়েছে। অভিযুক্তদের ভেতর রয়েছে পুলিশ মহাপরিদর্শক, উপ-পরিদর্শক, সুপার, এসপি পর্যন্ত। এসব শূন্যতার দ্রুত সময়ে পূর্ণ করতে না পারলে ফলপ্রসূ আইন-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে না। সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য ৪০-৪৫ বছর বয়সে অবসরে গেলেও তারা তখন শারিরীক ও মানসিকভাবে যোগ্য থাকে। জরুরি প্রয়োজনে এদের নিয়োগ ২০ থেকে ২৫ হাজার পুলিশ সদস্যের শূন্যতা পূরণ করা সম্ভব। আনসার বাহিনীদের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সদস্যদের প্রাধিকার ও জরুরি প্রয়োজন মেটাতে পারবে। যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রেও এমন নিয়োগের প্রচলন রয়েছে। পুলিশ বাহিনী পুনর্গঠন এখন সময়ের দাবি।

্রিন্ট

আরও সংবদ