খুলনা | সোমবার | ০২ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১৮ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

শুরু হলো নির্বাচনমুখী যাত্রা নির্বাচন প্রক্রিয়া এগিয়ে নিন

|
১১:৫৭ পি.এম | ০১ নভেম্বর ২০২৪


ছাত্র-জনতার সফল অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট পতন ঘটে আওয়ামী লীগ সরকারের। ৮ আগস্ট দায়িত্ব নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। আগামী ৮ নভেম্বর এই সরকারের বয়স তিন মাস পূর্ণ হবে। এরই মধ্যে প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপিসহ সমমনা অনেক রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকেই নির্বাচনী রোডম্যাপ দাবি করা হয়েছে। সেই লক্ষে প্রথম পদক্ষেপ নেওয়া হলো নির্বাচন কমিশন (ইসি) পুনর্গঠনের জন্য অনুুসন্ধান বা সার্চ কমিটি গঠন প্রক্রিয়া শুরুর মাধ্যমে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল নিজেও সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘আমাদের সরকারের নির্বাচনমুখী প্রক্রিয়া গ্রহণ করার যে কাজ, সেটা শুরু হয়ে গেছে। আপনারা বলতে পারেন নির্বাচনমুখী যাত্রা শুরু হয়ে গেছে।’
বিগত ১৬ বছরে যে তিনটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, সেগুলোর গ্রহণযোগ্যতা ছিল না বললেই চলে। যেমন দেশের ভেতর থেকে, তেমনি দেশের বাইরে থেকেও এসব নির্বাচনের ব্যাপক সমালোচনা ছিল। এসব নির্বাচনকে ভোটারবিহীন নির্বাচন, রাতের নির্বাচন, ভোট চুরির নির্বাচনসহ আরো অনেক নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তাই দেশের মানুষ প্রকৃত গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অনুষ্ঠিত নির্বাচনে নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য উন্মুখ হয়ে আছে। রাজনৈতিক দলগুলোও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে জানতে চাইছে কবে নাগাদ নির্বাচন হবে।
দায়িত্ব গ্রহণের পর গত ২৫ আগস্ট জাতির উদ্দেশ্যে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের দেওয়া প্রথম ভাষণে নির্বাচনের রোডম্যাপ না থাকায় বিএনপিসহ অনেক রাজনৈতিক দল অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছিল। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ৩১ আগস্টের বৈঠকেও সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরতে বিভিন্ন ধরণের সংস্কার ও নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণার আহŸান জানায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জোট। গত ৫ অক্টোবর প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সংলাপেও নির্বাচন কমিশন গঠন এবং নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণার প্রস্তাব দেয় বিএনপিসহ বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল। প্রধান উপদেষ্টাও জানান, নির্বাচনই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এক নম্বর অগ্রাধিকার। ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন ২০২২’-এ বলা আছে, রাষ্ট্রপতি ছয় সদস্যের সমন্বয়ে একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করবেন।
কমিটির সভাপতি হবেন প্রধান বিচারপতি মনোনীত আপিল বিভাগের একজন বিচারপতি। সদস্য হবেন প্রধান বিচারপতি মনোনীত হাইকোর্ট বিভাগের একজন বিচারক, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন এবং রাষ্ট্রপতি মনোনীত একজন নারীসহ দু’জন বিশিষ্ট নাগরিক। জানা যায়, আইন অনুযায়ী প্রধান বিচারপতি সার্চ কমিটির জন্য দু’জন বিচারপতিকে মনোনীত করেছেন। তাঁরা হলেন সার্চ কমিটির সম্ভাব্য প্রধান হিসাব আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী এবং সদস্য হিসেবে হাইকোর্টের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান। এ ছাড়া সার্চ কমিটিতে পদাধিকারবলে সদস্য হবেন মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক মোঃ নুরুল ইসলাম, সরকারি কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যান মোবাশ্বের মোনেম। একজন নারীসহ দু’জন বিশিষ্ট নাগরিককে মনোনীত করবেন রাষ্ট্রপতি। ধারণা করা হচ্ছে, শিগগিরই সার্চ কমিটির গঠন সম্পন্ন হবে। কারণ কমিটি গঠনের পর ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার পদে নিয়োগের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে বিধি মোতাবেক নাম সুপারিশ করা হবে।
একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে দেশ দ্রুত গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ফিরে আসুক-এটি সবারই কাম্য। তবে নির্বাচনের নিরপেক্ষতা ও গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিত করার জন্য কিছু জরুরি সংস্কারকাজ পরিচালনা করাও প্রয়োজন। এ ছাড়া সঠিক ভোটার তালিকা প্রণয়ন এবং আরো কিছু সংস্কার ও ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। আমরা চাই, দ্রুত নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় দেশ এগিয়ে যাক এবং দেশে প্রকৃত গণতন্ত্রের চর্চা শুরু হোক।

্রিন্ট

আরও সংবদ