খুলনা | শুক্রবার | ০৬ জুন ২০২৫ | ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

চার্জশিটভুক্ত যুবলীগ সভাপতি বিপুল এখন বিপুল অর্থবিত্তের মালিক!

দিঘলিয়ার সেনহাটি ইউপি চেয়ারম্যান গাজী হালিম হত্যাকান্ডের ১৩ বছর পেরোলেও বিচার হয়নি

নিজস্ব প্রতিবেদক |
১২:৩৯ এ.এম | ০২ নভেম্বর ২০২৪


আজ ২ নভেম্বর খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার সেনহাটি ইউপি চেয়ারম্যান গাজী আব্দুল হালিমের ১৩তম হত্যা বার্ষিকী। হত্যার পর ১৩ বছরে গোয়েন্দা সংস্থা ৭ম দফা চার্জশিট দাখিলের পরও আসামিরা রয়েছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। আর মামলার চার্জশিটভুক্ত অন্যতম আসামি উপজেলা যুবলীগের সভাপতি শেখ মনিরুল ইসলাম বিপুল অর্থবিত্তের মালিক বনে গেছেন। হালিম হত্যাকে পুঁজি করে কলেজ ফান্ডের অর্থ আত্মসাৎ, নিয়োগ বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি, জমি দখল, তেল সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণসহ চাঁদাবাজি করেছেন তিনি। তবে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর আত্মগোপনে আছেন বেশ কিছুদিন। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটিসহ বিভিন্ন দপ্তরে অবৈধ সম্পদ উপার্জন, ক্ষমতার অপব্যবহারের  অভিযোগ রয়েছে। 
উলে­খ্য, দিঘলিয়া উপজেলার সেনহাটির প্রয়াত ইউপি চেয়ারম্যান গাজী আব্দুল হালিম ২০১১ সালে ৩০ অক্টোবর গুলিবিদ্ধ হয়ে দুই নভেম্বর নিহত হন। এই হত্যাকান্ডের অন্যতম চার্জশিট ভুক্ত আসামি উপজেলা যুবলীগের সভাপতি শেখ মনিরুল ইসলামসহ অন্যরা রয়েছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। এ মামলায় অপর আসামি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোল­া আকরাম হোসেন স¤প্রতি অন্য একটি মামলায় আটক হয়েছেন। কথিত রয়েছে হালিম হত্যাকান্ডের পূর্বে মাথাগোঁজার ঠাঁই না থাকলেও হত্যাকান্ডকে পুঁজি করে অট্টালিকার মালিক হয়েছেন যুবলীগের সভাপতি। যেনতেন ভাবে স্কুল বাউন্ডারি পার হওয়ার পর গামছা বিক্রি করে চলছিলো সংসার। আকস্মিকভাবে যুবলীগের সভাপতি হওয়ার সুবাদে দেশ থেকে পলায়নকারি শেখ হাসিনার সরকারের আমলে সেনহাটি আলহাজ্ব সরোয়ার খাঁন কলেজ ফান্ডের ৩৪ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করে ক্ষ্যান্ত হয়নি। পরবর্তীতে কলেজ সরকারিকরণের দোহাই দিয়ে শিক্ষকদের বাধ্য করে  আবারো ১৮ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করে। কলেজটি সরকারি না হওয়ায় শিক্ষকরা অর্থ ফেরত চাইলে তৎকালীন সময়ে কলেজ ফান্ডের অর্থ আত্মসাতসহ অন্যান্য  তথ্য ফাঁস হওয়ায় পারভীন সুলতানা, মোহাম্মদ হাসান খান ও লোকমান হোসেন নামে তিন শিক্ষককে যুবলীগের এই নেতার চাপে সাময়িক বরখাস্ত করতে বাধ্য হয় কলেজ কর্তৃপক্ষ। উপজেলার এস এম মোস্তফা রশিদী সুজা মহিলা কলেজসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ বাণিজ্য, ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে  অবৈধ পন্থায় নিজের স্ত্রীকে সেনহাটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নিয়োগ পাইয়ে দেয়। একইভাবে মামা আলতাফ হোসেনকে আলহাজ্ব সরোয়ার খাঁন কলেজে অধ্যক্ষের চেয়ারে বসিয়েছেন বলে অভিযোগ।
সূত্র জানায়, মনিরুল ইসলাম বিপুল টেন্ডারবাজির মাধ্যমে বাগিয়ে নেয় একাধিক কাজ। ক্ষমতার প্রভাবে সঠিক ভাবে কাজ না করে বিল উত্তোলন করতেন তিনি। তবে কাজ সম্পন্ন না করে বিল উত্তোলনের জন্য দাখিল করলে বর্তমান উপজেলা নির্বাহী অফিসার খান মাসুম বিল­াহ কাজের অনিয়ম পেয়ে বিল জব্দ করেন। এছাড়া জমি দখল, তেল সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ, চাঁদাবাজি ও ক্ষমতার প্রভাব বিস্তার করে স্বল্প সময়ে বিপুল অর্থবিত্তের মালিক বনে গেছেন তিনি। 
আওয়ামী লীগ সরকার আমলে উপজেলার গোয়ালপাড়া গ্রামের শওকাত ও কওসারের জমি দখল করে নেন এই যুবলীগ নেতা ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা। শুধু জমি দখল করে ক্ষান্ত হননি তাদের নিকট থেকে আড়াই লক্ষ টাকা চাঁদা নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। মইন নামে এক ব্যবসায়ীর নিকট থেকে ৫০ হাজার টাকা ও জাহাঙ্গীর নামে আরেক ব্যবসায়ীর নিকট থেকে ২০ হাজার টাকা আদায় করেন ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে। তার নিয়ন্ত্রিত তেল সিন্ডিকেটে অস্থিরতা দেখা দিলে বিরোধীপক্ষকে দমন করতে যেয়ে অস্ত্রসহ ধরাও পড়ে যুবলীগ নেতার শ্যালক মুরাদ। কথিত রয়েছে উদ্ধার হওয়া অস্ত্রটি গাজী আব্দুল হালিম হত্যাকান্ডে ব্যবহার হয়েছিল। 
চরমপন্থি সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের রয়েছে তার নিবিড় সম্পর্ক।  উপজেলার সুগন্ধি গ্রামের মুন্না হত্যাকান্ডের সাথে যুবলীগের সভাপতি শেখ মনিরুলের জড়িত থাকার অভিযোগ  মুন্নার পরিবারের। আওয়ামী লীগ আমলে সেনহাটি এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করা মূর্তিমান আতঙ্কের  নাম শেখ মনিরুল ইসলাম। তার বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করলে তাঁকে প্রশাসন  ও দলীয় ক্যাডার বাহিনী দিয়ে বিভিন্ন ভাবে হয়রানির অভিযোগ রয়েছে। তবে গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনা দেশ থেকে পলায়নের মাধ্যমে আওয়ামী সরকারের পতনের পর আত্মগোপনে চলে যান যুবলীগের সভাপতি শেখ মনিরুল ইসলাম। তাকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

্রিন্ট

আরও সংবদ