খুলনা | শুক্রবার | ০৩ জানুয়ারী ২০২৫ | ১৯ পৌষ ১৪৩১

বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের নিয়ে মোদির তোপ, লক্ষ্য ঝাড়খন্ড সরকার

খবর প্রতিবেদন |
০১:০১ এ.এম | ০৫ নভেম্বর ২০২৪


ভারতে কয়েক দিন ধরেই নতুন করে আলোচনায় ‘বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীরা’। মূলত ভারতে ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকারের শীর্ষ নেতৃত্ব বারবার অভিযোগ করছেন, দেশটির ঝাড়খন্ড রাজ্যে বিপুল পরিমাণ বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী আছে। এবার সেই আলোচনার অংশ হিসেবে আবারও মুখ খুলেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তাঁর লক্ষ্য ঝাড়খন্ডের সরকার। মোদি ঝাড়খন্ড সরকারকে অনুপ্রবেশকারীদের দোসর ও মাফিয়ার দাস বলে আখ্যা দিয়েছেন।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সোমবার ঝাড়খন্ডের গড়ওয়াড়ায় এক জনসভায় মোদি ঝাড়খন্ডে ক্ষমতাসীন ঝাড়খন্ড জনমুক্তি মোর্চার নেতৃত্বাধীন সরকারকে ‘ঘুসপাতিয়া বান্ধান’ বা অনুপ্রবেশকারীদের দোসর বলেছেন। একই সঙ্গে, তাদের ‘মাফিয়া কা গোলাম’ বা মাফিয়ার দাস বলে আখ্যা দিয়েছেন। মূলত বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের সঙ্গে ঝাড়খন্ড সরকারের যোগসাজশ আছে, এই ইঙ্গিত দিয়ে মোদি এ কথা বলেন। 
ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ঝাড়খন্ডে ক্ষমতাসীন জোটের নেতাদের কেলেঙ্কারি এখন এক শিল্পে পরিণত হয়েছে এবং দুর্নীতি ঝাড়খন্ডকে উইপোকার মতো গ্রাস করেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ঝাড়খন্ডে তোষণের রাজনীতি চরমে পৌঁছেছে, যেখানে জনমুক্তি মোর্চার জোট বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের সমর্থন দেওয়ায় ব্যস্ত। এভাবে চলতে থাকলে ঝাড়খন্ডের আদিবাসী জনসংখ্যা কমে যাবে। এটি আদিবাসী সমাজ ও দেশের জন্য হুমকি।’
ঝাড়খন্ডে ২৩ নভেম্বর বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচনে জিততে মরিয়া বিজেপি। নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণার পর থেকেই মোদি-অমিত শাহের বিজেপি ঝাড়খন্ডে তথাকথিত ‘বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী’ ইস্যুকে হাতিয়ার হিসেবে নিয়েছে। 
স¤প্রতি অমিত শাহও বলেছেন, বাংলাদেশিরা ব্যাপক হারে ঝাড়খন্ডে অনুপ্রবেশ করছে এবং বিজেপি রাজ্য ক্ষমতায় এলে তাদের ঝেটিয়ে বিদায় করা হবে।
মোদি বলেন, ভোট ব্যাংক রাজনীতির জন্যই ঝাড়খন্ডে জনমুক্তি মোর্চা, কংগ্রেস ও রাষ্ট্রীয় জনতা দল বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের ব্যবহার করছে। তাদের এখানে বসবাসের সুযোগ দিচ্ছে যা সামাজিক কাঠামোর জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং পরিস্থিতি গুরুতর করে তুলছে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘যদি স্কুলে সরস্বতী বন্দনা করা বাধাগ্রস্ত হয়, তাহলে বুঝতে হবে হুমকির মাত্রা কতটা ভয়াবহ। উৎসবের সময় কারফিউ জারি হয়...দুর্গাপূজা ও অন্য প্রধান উৎসবগুলোও প্রভাবিত হচ্ছে।’ মোদি অভিযোগ করেন, কেন্দ্র থেকে বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য পাঠানো হাজার হাজার কোটি টাকা ঝাড়খন্ডের জোট সরকারের দুর্নীতিগ্রস্ত নেতারা গিলে খাচ্ছে।
বাংলাদেশিদের অনুপ্রবেশে বদলে গেছে ঝাড়খন্ডের জনমিতি: ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্যের সাঁওতাল পরগনা অঞ্চলে বাংলাদেশিদের অনুপ্রবেশ ঘটেছে এবং সে কারণে সেখানকার জনমিতি বদলে গেছে। ভারতের ন্যাশনাল কমিশন ফর শিডিউলড ট্রাইবস (এনসিএসটি) দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দাখিল কো এক প্রতিবেদনে এই দাবি করেছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দুর প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। 
ন্যাশনাল কমিশন ফর শিডিউলড ট্রাইবসের কর্মকর্তা আশা লাকড়া জানিয়েছেন, ঝাড়খণ্ডে বাংলাদেশিদের অনুপ্রবেশের কারণে সাঁওতাল পরগনা অঞ্চলে জনমিতি উলে­¬খযোগ্য ভাবে বদলে গেছে। দ্য হিন্দুকে আশা লাকড়া বলেছেন, তাদের তদন্ত নিশ্চিত করেছে যে ‘অনুপ্রবেশ ঘটছে।’ ২৮ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে তাঁরা এ বিষয়ে প্রমাণও সংগ্রহ করেছেন। 
আশা লাকড়া জানান, স্থানীয় বাসিন্দা, গ্রামবাসী ও পঞ্চায়েত সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে তাঁরা বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছেন। বিষয়টি এমন এক সময়ে সামনে এলো, যার মাত্র কিছুদিন পরেই রাজ্য বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। উলে­¬খ্য, ঝাড়খণ্ড রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন দল ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার প্রধান হেমন্ত সরেনের নিজের আসন বারহাইতও সাঁওতাল পরগনায় অবস্থিত। 
ভারতের আদিবাসী মন্ত্রণালয়ের অধীন এই কমিশনের প্রধান এই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা বলতে পারছি না ঠিক কখন এই অনুপ্রবেশ ঘটেছে, কিন্তু আপনি যদি বারহাইত সাঁওতালি উত্তর এবং দক্ষিণের মতো এলাকাগুলো দেখেন, সবই আদিবাসী গ্রাম ছিল। আজ এখানে আদিবাসীদের সংখ্যা কমে গেছে। এটি প্রমাণ করে যে অনুপ্রবেশ ঘটেছে এবং এটি গত দুই দশক বা তারও বেশি সময়ে ঘটেছে বলে মনে হচ্ছে। আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে আমাদের প্রতিবেদনে এটি বলেছি।’ 
এর আগে, ভারতীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত ১১ সেপ্টেম্বর ঝাড়খণ্ড হাইকোর্টে জমা দেওয়া এক দলিলে দাবি করে, এই অঞ্চলে ‘অনুপ্রবেশ’ হয়েছে এবং ১৯৫১ সাল থেকে এই অঞ্চলের উপজাতীয় জনসংখ্যা উলে­¬খযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। কিন্তু এ দু’টি বিষয় কীভাবে পরস্পর সংযুক্ত, তা মন্ত্রণালয় উলে­¬খ করেনি। দলিলে বলা হয়, ‘বাইরে থেকে আসা অভিবাসীদের কারণে উপজাতীয় জনসংখ্যার হ্রাসের পরিমাণ, উপজাতীয়দের মধ্যে কম শিশু জন্মের হার, খ্রিস্টান ধর্মে ধর্মান্তরিত হওয়া এবং অন্যান্য কারণও মূল্যায়ন করা প্রয়োজন।’ 
এক সময় পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির উপ-প্রধানের দায়িত্ব পালন করা আশা লাকড়া দীর্ঘদিন ধরেই বলে আসছেন, বাংলাদেশিরা অবৈধ ভাবে অনুপ্রবেশ করছে। এ ছাড়া বিজেপি সরকারের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা এবং বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এই অভিযোগের পালে হাওয়া দিয়েছেন। 
আশা লাকড়া জানিয়েছেন, কমিশন সাহেবগঞ্জ, পাকুর, গোড্ডা এবং জামতারা জেলা পরিদর্শনের ভিত্তিতে প্রতিবেদন তৈরি করেছে। তিনি বলেন, কমিশন গত দুই মাসে এসব জেলায় প্রায় দেড়শ’ জনের সঙ্গে কথা বলেছে। যারা ‘সাক্ষ্য দিয়েছে যে বাংলাদেশিরা তাদের গ্রামে অনুপ্রবেশ করছে এবং আদিবাসী নারীদের বিভ্রান্ত করে জমি দখল করছে এবং বিয়ের ফাঁদে ফেলছে।’ তবে আশা লাকড়া স্পষ্ট করেছেন যে, যারা সাক্ষ্য দিয়েছেন তাদের সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটেনি বলে জানিয়েছেন।লাকড়া জানিয়েছেন, এনসিএসটি তদন্ত দল এমন উদাহরণও খুঁজে পেয়েছে, যেখানে পবিত্র আদিবাসী ভূমি, যেখানে স্থানীয়রা উপাসনা করে, মুসলমানদের জন্য কবরস্থানে পরিণত করার অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। এ ঘটনা ঘটেছে সাহেবগঞ্জ জেলার তেতারিয়া গ্রামে। আশা বলেন, ‘আমরা প্রতিটি জেলায় এর উদাহরণ পেয়েছি।’

্রিন্ট

আরও সংবদ