খুলনা | বুধবার | ২৯ জানুয়ারী ২০২৫ | ১৬ মাঘ ১৪৩১

গুরবাজ-আজমতউল্লাহর দাপটে সিরিজ হারল বাংলাদেশ

ক্রীড়া প্রতিবেদক |
১২:২০ এ.এম | ১২ নভেম্বর ২০২৪


ওয়ানডেতে প্রথমবার ঘরের বাইরে আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ খেলতে নেমে সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে ছিল বাংলাদেশ। তবে নিকটদূরত্বের সেই সীমানা পেরিয়েছেন আফগান ওপেনার রহমানউল্লাহ গুরবাজ। তার সেঞ্চুরিতে টাইগারদের সিরিজ জয়ের আশা মুখ থুবড়ে পড়েছে। বাংলাদেশের দেওয়া ২৪৫ রানের লক্ষ্য পেরিয়ে ৫ উইকেটের জয়ে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ ছিনিয়ে নিলো হাশমতউল্লাহ শহিদীর দল।

শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে হওয়া ম্যাচটি জিতলে আফগানদের বিপক্ষে নিরপেক্ষ ভেন্যুতে প্রথম সিরিজ আসত মেহেদী মিরাজদের দখলে। ম্যাচটিতে জয়ের নায়ক গুরবাজ সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে শুরুতেই তাসকিন আহমেদের বলে আউট হয়েছিলেন। কিন্তু সেই তাসকিন আজকের একাদশে ছিলেন না বলেই কি তার এমন হুঙ্কার! তাসকিনের জায়গায় ওয়ানডেতে অভিষেক হওয়া নাহিদ রানা আফগান ব্যাটারকে খাবি খাইয়েছেন ঠিকই। বল করেছেন প্রায় ১৫১ কিলোমিটার গতিতে। তবে জয় হয়েছে গুরবাজ-ওমরজাইদের।

নাহিদ, মুস্তাফিজুর রহমান আর নাসুম আহমেদ মিলে বাংলাদেশকে সঠিক কক্ষপথে রাখছিলেন দ্বিতীয় ইনিংসের শুরু থেকে। তবে শরিফুল ও মিরাজের ওপর চড়াও ছিলেন গুরবাজ- হজরতউল্লাহ ওমরজাইরা। দুজন মিলে চতুর্থ উইকেট জুটিতে ১০০ রান যোগ করেন। ওমরজাই–ও দলের জয় নিশ্চিত করার পথে ফিফটি করেছেন। এর আগে ৮৪ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে আফগানরা কিছুটা চাপেই ছিল। গতির ঝড় তোলা নাহিদই প্রথম সাফল্য দেন বাংলাদেশকে। তার ১৮৭ কিলো গতিতে দিশেহারা সেদিকউল্লাহ অটল ইনসাইড এজ হয়ে বোল্ড হন ১৪ রানে।

পরে নাহিদের দলে যোগ দেন মুস্তাফিজও। দুই দফায় আক্রমণে এসে ফেরান রহমত শাহ (৮) ও হাসমতউল্লাহকে (৬)। এরপরই শুরু হয় গুরবাজ-ওমরাইয়ের পাল্টা লড়াই। তাদের জুটি ভেঙে মিরাজ ব্রেকথ্রু দিলেও ততক্ষণে কিছুটা দেরিই হয়ে যায়। কারণ গুরবাজ ১২০ বলে ৫ চার ও ৭ ছক্কায় খেলেছেন ১০১ রানের ইনিংস। যা ওয়ানডেতে তার অষ্টম সেঞ্চুরি, এর তিনটিই বাংলাদেশের বিপক্ষে। পরের ওভারেই নাহিদ এসে ফেরান গুলবাদিন নাইবকে (১)। অনেক ওপরে ওঠা বল তালুবন্দী করেন জাকের।

বাংলাদেশকে হতাশায় পোড়ানোর ম্যাচে দু’বার জীবন পান গুরবাজ। প্রথমবার ১২তম ওভারে মুস্তাফিজের পঞ্চম বলটি ব্যাটে ঠিকমতো খেলতে পারেননি। গুরবাজে ব্যাটের কানায় লেগে পয়েন্টের দিকে ভেসে গেলেও হাত ফসকে ক্যাচ ছাড়েন রিশাদ হোসেন। এরপর ২২তম ওভারে মিরাজের পঞ্চম বলে গুরবাজকে স্টাম্পিং করতে ব্যর্থ জাকের আলি অনিক। ওয়াইড বলটি গ্লাভসে নিতে পারেননি। ওই সময় গুরবাজ ৫৬ রানে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। তিনবার সুযোগ পেয়ে বাংলাদেশের হাত থেকে ক্রমাগত ম্যাচটি কেড়ে নিয়েছেন তিনি।

শেষদিকে কোনো নাটকীয়তা হয়নি। ওমরজাই-মোহাম্মদ নবি মিলে পৌঁছে গেছেন কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে। অপরাজিত থেকে ওমরজাই ৭০ এবং নবি ৩৪ রান করেন। বাংলাদেশের হয়ে ২টি করে উইকেট নিয়েছেন মুস্তাফিজ ও নাহিদ রানা। ১০ ওভারে মাত্র ২৪ রান দিয়েছেন নাসুম।

এর আগে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতেই উইকেট হারাতে পারতো বাংলাদেশ। ইনিংসের তৃতীয় ওভারে ফজলহক ফারুকির অফ স্টাম্পের বাইরের ডেলিভারিতে জায়গায় দাঁড়িয়ে খেলতে চেয়েছিলেন তানজিদ। এজ হয়ে প্রথম স্লিপে থাকা গুলবাদিনের হাতে ক্যাচ গেলেও সেটা লুফে নিতে পারেননি। চতুর্থ ওভারেও বাঁহাতি ওপেনারকে ফেরানোর সুযোগ ছিল আফগানিস্তানের সামনে। গাজানফারের বলে সুইপ করতে গিয়ে টপ এজ হয়ে ক্যাচ দিলেও শর্ট মিড উইকেট ক্যাচ ছেড়েছেন হাশমতউল্লাহ। জীবন পাওয়ার পর সৌম্যকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যেতে থাকেন তানজিদ।

তাদের দুজনের ব্যাটে আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো উদ্বোধনী জুটিতে পঞ্চাশ পার করে বাংলাদেশ। যদিও ওমরজাইয়ের বলে চার মেরে জুটির পঞ্চাশ ছোঁয়ার ওভারে সাজঘরে ফিরেছেন সৌম্য। ডানহাতি পেসারের অফ স্টাম্পে পড়ে বেরিয়ে যাওয়া ডেলিভারিতে ইনসাইড এজ হয়ে বোল্ড হয়েছেন তিনি। বাঁহাতি ওপেনারকে ফিরতে হয়েছে ২৪ রানে। আরেক ওপেনার তানজিদ জীবন পেয়েও সেটাকে কাজে লাগাতে পারেননি। নবির অফ স্টাম্পের বলে ড্রাইভ করার চেষ্টায় শর্ট মিড অফে থাকা হাশমতউল্লাহকে ক্যাচ দিয়েছেন ১৯ রান করা এই ব্যাটার।

নাজমুল হোসেন শান্তর চোটে একাদশে সুযোগ পাওয়া জাকিরও ফিরেছেন দ্রুতই। মিরাজের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউটে কাটা পড়তে হয়েছে তাকে। ওমরজাইয়ের লেংথ ডেলিভারিতে পয়েন্টে ঠেলে দিয়ে রান নিতে চেয়েছিলেন মিরাজ। ডানহাতি ব্যাটারের ডাকে সাড়াও দিয়েছিলেন জাকির। তবে শেষ মুহূর্তে মিরাজ না করে দেয়ায় নন স্ট্রাইক প্রান্তে ফিরতে পারেননি জাকির। ফেরার আগে খারোটের সরাসরি থ্রোতে রান আউট হয়েছেন ৪ রান করা তরুণ এই ব্যাটার। একটু পর আউট হয়েছেন হৃদয়ও। পুরো সিরিজে ব্যাট হাতে রানের দেখা না পাওয়া হৃদয় ফিরেছেন ৭ রান।

রশিদের অফ স্টাম্পের বাইরের ডেলিভারিতে একটু পিছিয়ে কাট করবেন নাকি ডিফেন্স করবেন এমন দ্বিধায় পড়ে এজ হয়ে স্লিপে থাকা গুলবাদিনকে ক্যাচ দিয়েছেন। ৭২ রানে ৪ উইকেট হারানোর পর প্রতিরোধ গড়ে তোলেন মিরাজ ও মাহমুদউল্লাহ। তাদের দুজনের সাবলীল ব্যাটিংয়ে বিপদ কাটে বাংলাদেশের। মিরাজ একেবারে ধীরগতিতে খেললেও মাহমুদউল্লাহ ছিলেন ওয়ানডে মেজাজেই। দুজনে মিলে এদিন পেছনে ফেলেছেন ১৯৯৫ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে আমিনুল ইসলাম ও আকরাম খানের ৭২ রানের জুটিকে।

সবশেষ চার ম্যাচে ব্যাট হাতে রানের দেখা না পাওয়ায় সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে মাহমুদউল্লাহকে। ৬৩ বলে হাফ সেঞ্চুরি করে ব্যাট হাতে সমালোচনার জবাব দেয়ার চেষ্টা করেছেন তিনি। একটু পর পঞ্চাশ ছুঁয়েছেন মিরাজও। ১০৬ বলে নিজের একশত ওয়ানডেতে হাফ সেঞ্চুরি করেছেন ডানহাতি এই ব্যাটার। যদিও হাফ সেঞ্চুরির একটু পরই ফিরেছেন সাজঘরে। ওমরজাইয়ের অফ স্টাম্পের বাইরের স্লোয়ার ডেলিভারিতে উড়িয়ে মারার চেষ্টায় গুলবাদিনের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন তিনি। মাহমুদউল্লাহকে উইকেটে রেখে ৬৬ রানের ইনিংস খেলে আউট হন মিরাজ। তার বিদায়ে ভাঙে মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে ১৪৫ রানের জুটি।

ডানহাতি ব্যাটার ফেরার পর দ্রুতই সাজঘরের পথে হেঁটেছেন জাকের আলী অনিক। ওমরজাইয়ের অফ স্টাম্পের বাইরের লেংথ ডেলিভারিতে এজ হয়ে উইকেটের পেছনে গুরবাজের গ্লাভসে ক্যাচ দিয়েছেন ১ রান। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ক্যামিও ইনিংস খেলা নাসুম আউট হয়েছেন ৫ রানে। শেষ ওভারে এসে সেঞ্চুরির সুযোগ ছিল মাহমুদউল্লাহর সামনে। তবে সুযোগটা লুফে নিতে পারেননি তিনি। শেষ বলে যখন ৯৭ রানে দাঁড়িয়ে তখন দুই রান নিতে গিয়ে রান আউট হয়েছেন অভিজ্ঞ এই ব্যাটার। মাহমুদউল্লাহকে থামতে হয় ৯৮ রানের লড়াকু ইনিংস খেলে। আফগানিস্তানের হয়ে চারটি উইকেট নিয়েছেন ওমরজাই।

্রিন্ট

আরও সংবদ