খুলনা | সোমবার | ০২ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১৮ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

ডাল ভাতের পরিবর্তে শাক ভাতও এখন নাগালের বাইরে

|
১২:২৭ এ.এম | ১২ নভেম্বর ২০২৪


বাংলাদেশের একটা প্রচলিত পদ্য ছন্দ- ‘‘আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে’’। দুধ-ভাতের ভরসার ইতি ঘটার পর আসে ডাল ভাত। সর্বশেষ শাক ভাত ছাড়া কি থাকে? বাঁচতে হলে তো খেতে হবে। চাঁদের সৌন্দর্য দিয়ে চোখের তৃষ্ণা কিছুটা মিটলেও পেটের ক্ষুধার উপর তার কোনো প্রভাব নেই। পেটে নূন্যতম শাক-ভাত চাই, তাও এখন কতটা নাগালের ভেতর ভুক্তভোগীরাই জানে। সবজি সিন্ডিকেটের যাতাকল ভাঙতে, সরকারকে সহযোগিতা করতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা কর্মীরা দেশের বিভিন্ন জায়গায় ন্যায্যমূল্যে নিত্য প্রয়োজনীয় শাক সবজি বিক্রি কেন্দ্র খুলেছে। রাজধানী ঢাকায় গড়ে তুলেছে ‘স্বস্তি হাট’ নামে বিকল্প বাজার ব্যবস্থা। ট্রাকে করে ন্যায্যমূল্যে খাদ্য সামগ্রী বিক্রি করছে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। বর্তমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে ১৫টি উৎপাদক অঞ্চল থেকে কৃষি পণ্য সংগ্রহ করে দেশব্যাপী সরবরাহ করার মহতী উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল কর্তৃপক্ষ। নিত্যপণ্যের মূল্য স্থিতিশীল ও স্বাভাবিক রাখতে সরকার বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করেছে। কিন্তু সবশেষ হচ্ছে বৃক্ষ তোমার নাম কি ফলে পরিচয়। যদিও ফল আসতে একটু সময় লাগবে। কিন্তু রোগী মরার পর ডাক্তার আসলে কি হবে? তাই সময় থাকতে সিন্ডিকেট ভাঙতে জনবান্ধব বাজার সৃষ্টিতে কঠোর হতে হবে।
ভোক্তারা কিভাবে নাজেহাল হচ্ছে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে তা শুধু জানলে নয়, বন্ধ করতে হবে। ভোক্তা অধিদপ্তরের এক জনের অভিজ্ঞতা-স্থানীয় প্রান্তিক চাষিরা ঝুড়ি করে কাঁচা শাক-সবজি আনলেও ঝুড়ি প্রতি ২০০ টাকা দেওয়া লাগে। স্থানীয় চাঁদাবাজদের যারা সাধারণত কোনো দলীয় লিডার। এর পর ব্যবসায়ী অল্প পরিমাণ শাক-সবজি বিক্রি করলেও প্রতি মুঠা বা প্রতি কেজির জন্য চাঁদা দিতে হয়। যে কারণে পাইকারী বাজার থেকে সবজি কিনে নিয়ে বাজারে অন্তত ১৫ থেকে ২০ টাকা বেশি ধরে বিক্রি করতে হয় সাধারণ ভোক্তার কাছে। তারপর পণ্য পরিবহনের জন্য দিতে হয় পরিবহন টোল। এভাবে বেপরোয়াভাবে খাজনা ও চাঁদা আদায়ের কারণে খুচরা পর্যাযে শাক-সবজির দাম বেড়ে যায়। তবে এ চেইনটা কিছুটা দমন হওয়ার কারণে অন্যভাবে সিন্ডিকেট কুতুবরা দাম বাড়ানোর কোশেস করছে।
কম্বল চাড়লেও ডুবন্ত ব্যক্তিকে কম্বল ছাড়ছেনা। বগুড়ার মহাস্থান হাট থেকে প্রতি কেজি ৬০ টাকার করলা কারওয়ান বাজারে বিক্রি হয় ৮০ টাকা। ৩০ টাকার বেগুন ৬০ টাকা, ৪০ টাকার শসা ৬০ টাকা, ৬০ টাকার কাঁকরোল ৭৫ টাকা, ৫০ টাকার মুলা ৬৫ টাকা, ৫০ টাকার ঢ্যাঁড়শ ৮০ টাকা, ৪০ টাকার বরবটি ১০০ টাকায়।
রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের আগে দেশের বিভিন্ন হাট থেকে কারওয়ান বাজার পৌঁছাতে পথে পথে প্রতি ট্রাককে গড়ে দূরত্ব ভেদে ১ থেকে ৩ হাজার টাকা চাঁদা দিতে হতো। এর বাইরে দিতে হতো পুলিশের মাসিক টোকেন। হালে দলীয় ও পুলিশের চাঁদাবাজী বন্ধ হলেও ফড়িয়াদের দৌরাত্ম্য রয়ে গেছে। দেখা গেছে, কোনো বাজারে বরবটি প্রতি কেজি ৬৫ টাকা হলেও একই দিকে কয়েক কিলো মিটার দূরের বাজারে বিক্রি হেেচ্ছ ১২০-১৩০ টাকা।
উৎপাদকরা বলছেন, সরকারি লোকজন ও খুচরা ব্যবসায়ীরা যদি আমাদের কাছ থেকে সরাসরি কিনতো তা হলে ভোক্তারা ও  আমরা বেঁচে যেতাম। সরকার ডিম, আলু ও পেঁয়াজসহ বিভিন্ন নিত্য পণ্যের যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে। এখন এর তদারকিতে কঠোর হতে হবে। সার, বীজ ও কীটনাশকের দাম কমাতে হবে। ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে হবে। তাদের লাভের মার্জিন ঠিক করতে হবে। উৎপাদনে সুদিন এলে মূল্যস্ফিতি হ্রাস পাবে।

্রিন্ট

আরও সংবদ