খুলনা | সোমবার | ০২ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১৮ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

দৌলতপুর (দিবা-নৈশ) কলেজের দুর্নীতি

অধ্যক্ষসহ সাত শিক্ষকের নিয়োগ নিয়ে ধুম্রজাল, বেতন বন্ধের নির্দেশ

এন আই রকি |
০১:০৮ এ.এম | ১২ নভেম্বর ২০২৪


খুলনার দৌলতপুর কলেজের (দিবা-নেশ) অধ্যক্ষসহ সাত শিক্ষকের বিরুদ্ধে নিয়োগে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এই অনিয়মগুলোর সাথে জড়িত রয়েছে কলেজের অধ্যক্ষ এ এস এম আনিসুর রহমানসহ তার স্ত্রী এবং খুলনা-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্যের আস্থাভাজন এক শিক্ষক। স্বৈরাচারী সরকারের আমলে কলেজটির অনিয়ম নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাউশি এবং দুদকে অভিযোগ করা হয়। কিন্তু প্রভাব খাটিয়ে এসব অভিযোগের তদন্ত প্রতিবেদন আলোর মুখ দেখেনি বলে কলেজটির একাধিক শিক্ষক জানিয়েছেন।  
তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের একজন শিক্ষকের নিবন্ধন পরীক্ষার সার্টিফিকেট জাল থাকার কারণে তার বেতন বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া কলেজের অনিয়মের বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্ত করলে থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষকরা। কলেজটিতে নিয়োগের সময় আবেদন অনুযায়ী সার্টিফিকেট না থাকা, তৃতীয় শ্রেণির নিচে শিক্ষকতা যোগ্যতা, একটি ডিপার্টমেন্টের নিয়োগের বিপরীতে অন্য ডিপার্টমেন্টে শিক্ষক নিয়োগ, বাতিলযোগ্য প্রতিষ্ঠানের সার্টিফিকেট ব্যবহার, নিয়োগ নিয়ে হাইকোর্টের স্থগিত অমান্যসহ জাল নিবন্ধন সার্টিফিকেট দিয়ে চাকুরি নেওয়ার অভিযোগ আছে।
অনুসন্ধান অনুযায়ী, কলেজটির বর্তমান অধ্যক্ষের দায়িত্বে থাকা এ এস এম আনিসুর রহমানের প্রয়োজনীয় নট্রামস সনদ না থাকা সত্তে¡ও সাচিবিকবিদ্যা ও অফিস ব্যবস্থাপনা বিষয়ে তার নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। এছাড়া তার বিরুদ্ধে প্রতারণামূলক ভাবে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নিকট আর্থিক অর্থ নিয়ে নয়ছয় করার অভিযোগে একাধিক মামলাও রয়েছে। অধ্যক্ষের স্ত্রী শার্মিনা ইয়াসমিন বর্তমানে কলেজের সহকারী শিক্ষক। অথচ তার নিয়োগ হয়েছিল ২০০৬ সালে হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা থাকা দারুল ইহসান ইউনিভার্সিটির সার্টিফিকেট দিয়ে। খুলনা-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এবং সাবেক শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রীর আস্থাভাজন হিসেবে একক প্রভাব ছিল কলেজটির রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক মোঃ জাহাঙ্গীর আলম সবুজের। তার এইচএসসি পরীক্ষায় কম্পার্টমেন্টাল সনদ ছিল। যা তৃতীয় শ্রেণি বা বিভাগের নিচের মানের সমান। তারপরও প্রভাব খাটিয়ে তার নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। কলেজটিতে আ’লীগের আমলে নিয়মিত না এসে বেতন নেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। 
এদিকে পত্রিকায় ফাইন্যান্স বিষয়ে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে হিসাববিজ্ঞানে অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রীধারী মোঃ আবুল কালাম আজাদ বুলুকে ফাইন্যান্সের প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ দেন। বর্তমানে তিনি হিসাববিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। শতকরা ৩০ ভাগ মহিলা কোটা পূরণ না করেই মোঃ আরিফুজ্জামান মাহামুদকে অর্থনীতি বিভাগের প্রভাষক পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। তার বিরুদ্ধে চেক ডিজওনার মামলা থাকায় দীর্ঘদিন পলাতক থেকে বেতন নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। কলেজটির ইংরেজী বিভাগের শিক্ষক পদে মিলন চন্দ্র মন্ডলকে নিয়োগ দেওয়া হয়। অথচ এই নিয়োগের সময় প্রথম স্থান হওয়া প্রার্থী ফারজানা হক দুর্নীতির অভিযোগে মামলা করলে আদালত নিয়োগ কার্যক্রম স্থগিত রাখার নির্দেশ দিয়েছিল। আদালতের নির্দেশনা অমান্য করে নিয়োগ দেওয়া হয়। হিসাববিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক মোছাঃ আল সানিয়ার নিবন্ধন পরীক্ষার সনদ জাল থাকার কারণে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে একাধিবার তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেও কলেজ কর্তৃপক্ষ বিষয়টি আমলে নেয়নি। 
কলেজের একাধিক শিক্ষক জানান, অধ্যক্ষ এ এস এম আনিসুর রহমান এবং মোঃ জাহাঙ্গীর আলম সবুজের প্রভাবে এইসব অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে। স্থানীয় আ’লীগের সাবেক সংসদ সদস্য বেগম মন্নুজান সুফিয়ান কলেজটির সভাপতি থাকাকালীন সময়ে সবথেকে বেশি অনিয়ম হয়েছে। এইসব বিষয়ে একাধিকবার বিভিন্ন স্থানে লিখিত অভিযোগ করার পর তদন্ত হয়। কিন্তু তার কোন ফলাফল আসে না। 
চলতি বছরের শুরুতে এস এম কামাল হোসেন আ’লীগের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর কলেজটির অনিয়মের বিষয়ে পুনরায় তদন্ত শুরু হয়। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি টিম এসকল অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তু শুরু করেন। সর্বশেষ গত ১ অক্টোবর মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে কলেজটির হিসাববিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক মোছাঃ আল সানিয়ার নিবন্ধন পরীক্ষার সনদ জাল থাকার কারণে বেতন বন্ধের নির্দেশনা দেওয়া হয়। এছাড়া প্রভাষক জাহাঙ্গীর আলম সবুজ ৫ আগস্টের পর কলেজে প্রবেশ করার সময় ছাত্র-জনতার রসানলে পড়েন। এরপর থেকে সে কলেজে অনুপস্থিত রয়েছেন। 
এসব বিষয়ে কলেজটির অধ্যক্ষ এ এস এম আনিসুর রহমান জানান, তার নিয়োগের কোন দুর্নীতি হয়নি। সকল সার্টিফিকেট আছে। তার স্ত্রী সহকারী শিক্ষক শার্মিনা ইয়াসমিনেরও সকল সার্টিফিকেট রয়েছে। তিনি আরও বলেন, বিভাগীয় কমিশনার নির্দেশনা দিয়েছেন আল সানিয়ার বেতন বন্ধ করে দেওয়ার জন্য। এছাড়া বিভিন্ন শিক্ষকের অনিয়মের বিষয়ে তিনি আরও বলেন, বেশিরভাগের নিয়োগ আমার সময় হয়নি। তাছাড়া এখানকার সাবেক সংসদ সদস্য বেগম মন্নুজান সুফিয়ানই তৎকালীন সময়ে কলেজের সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন। এর থেকে বেশি কিছু বলন বা। 
এদিকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রভাষক জাহাঙ্গীর আলম সবুজ এবং হিসাববিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক মোছাঃ আল সানিয়াকে কলেজে পাওয়া যায়নি। তারা ছুটিতে রয়েছেন বলে জানা যায়। ফোনেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। হিসাববিজ্ঞানের প্রভাষক মোঃ আবুল কালাম আজাদ বুলু বলেন, কোন ভুল হলে সেটা নিয়োগ কমিটির হয়েছে। অর্থনীতি বিভাগের প্রভাষক আরিফুজ্জামান মাহামুদ জানান, মহিলা কোটা পূরণ না করে নিয়োগের বিষয়টি সঠিক নয়। তবে মামলার কারণে সে কলেজে আসতে পারেননি বলে স্বীকার করেছেন।

্রিন্ট

আরও সংবদ