খুলনা | বৃহস্পতিবার | ১৪ নভেম্বর ২০২৪ | ৩০ কার্তিক ১৪৩১

‘শেখ বশিরের’ বিরুদ্ধে হত্যা মামলা : জানেন না বাদী, নিশ্চিত নন উপদেষ্টা সেখ বশির

খবর প্রতিবেদন |
০১:১২ এ.এম | ১২ নভেম্বর ২০২৪


বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সোহান শাহ নামের (৩০) এক যুবককে গুলি করে হত্যার ঘটনায় করা মামলায় আসামির তালিকায় নাম রয়েছে ‘শেখ বশির উদ্দিন ভূঁইয়া’ নামে এক ব্যক্তির।  
মামলার আসামি তালিকার নামের সাথে মিল যায় রোববার (১০ নভেম্বর) অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নতুন উপদেষ্টা ব্যবসায়ী সেখ বশির উদ্দিনের সঙ্গে। এমনকি সেখ বশির উদ্দিনের বাবার নামের সঙ্গে আসামি তালিকায় থাকা ‘শেখ বশির উদ্দিন ভূঁইয়া’র বাবার নামের আংশিক মিল রয়েছে।।
রোববার উপদেষ্টা হিসেবে সেখ বশির উদ্দিনের শপথ নেওয়ার পর প্রশ্ন উঠেছে, ‘শেখ বশির উদ্দিন ভূঁইয়া’ নাম দিয়ে সেখ বশির উদ্দিনকে আসামি করা হয়েছে কি না। বিষয়টি নিয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন বলেন, নামের আংশিক সঙ্গতি ও অসঙ্গতি থাকলেও তিনি নিশ্চিত নন, মামলাটি তার নামে হয়েছে কি না।
অন্যদিকে পুলিশ জানিয়েছে, শেখ বশির উদ্দিন ভূঁইয়া ও সেখ বশির উদ্দিন একই ব্যক্তি কি না তা খতিয়ে দেখছে।  
মামলার বাদী নিহত সোহান শাহর মা সুফিয়া বেগম বলেছেন, আ’লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও পুলিশ তার ছেলে হত্যার জন্য দায়ী। 
সুফিয়া বেগমের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, মামলার আসামির তালিকা কে ঠিক করেছেন? জবাবে তিনি বলেন, আসামি কারা হয়েছে, কে করেছে, তা তিনি বলতে পারবেন না।
মামলা করার সময় তার সঙ্গে কে কে ছিলেন, তা জানতে চাইলে সুফিয়া বেগম বলেন, তা তিনি জানেন না। 
সোহান হত্যা মামলাটি গত ১৮ অক্টোবর রাজধানীর রামপুরা থানায় রেকর্ড হয়। মামলার নথিপত্রতে মোট ৫৭ জন আসামির নাম উলে­খ করা হয়েছে। অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে আরও ২০০ থেকে ৩০০ জনকে।
মামলার ৫৭ জন আসামির মধ্যে ৪৯ নম্বর তালিকায় নাম রয়েছে শেখ বশির উদ্দিন ভূঁইয়ার। পরিচয় হিসেবে উলে­¬খ করা হয়েছে, তিনি আ’লীগ নেতা। বাবার নাম শেখ আকিজ উদ্দিন ভূঁইয়া।
মামলার ৪৮ নম্বরে আসামির নাম উলে­খ করা হয়েছে শেখ আফিল উদ্দিন ভূঁইয়া। পরিচয় হিসেবে উলে­খ করা হয়েছে, তিনি সাবেক সংসদ সদস্য, যশোর-১। বাবার নাম শেখ আকিজ উদ্দিন ভূঁইয়া।  
প্রয়াত সেখ আকিজ উদ্দিন আকিজ গ্র“পের প্রতিষ্ঠাতা। সেখ আকিজের ছেলেদের মধ্যে সেখ আফিল উদ্দিন আ’লীগের সংসদ সদস্য ছিলেন।
সেখ আকিজের সন্তানেরা আলাদাভাবে ব্যবসা করেন। সেখ বশির উদ্দিন আকিজ-বশির গ্র“পের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারে উপদেষ্টা হিসেবে রোববার শপথ নেন সেখ বশির উদ্দিন। তারপর থেকে মামলার বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা হচ্ছে।
মামলার বিষয়টি নিয়ে সোমবার (১১ নভেম্বর) সচিবালয়ে সাংবাদিকেরা জানতে চাইলে সেখ বশিরের বলেন, আমি খুব ভালো জানি না। আমাদের লিগ্যাল টিম বিষয়টি দেখছে। ওখানে (মামলার এজাহার) আমার নামের, আবার বাবার নামের কিছু সঙ্গতি আছে, কিছু অসঙ্গতি আছে। এটা আসলেই আমি কি না, আমি নিশ্চিত নই। নিশ্চিত হলে লিগ্যালি ফেস (আইনি ভাবে মোকাবিলা) করা হবে।  
উপদেষ্টা নিয়োগ নিয়ে বিভিন্ন জনের মন্তব্যের বিষয়ে সেখ বশির বলেন, যারা আন্দোলন করেছেন, তাদের আবেগের সঙ্গে আমার দ্বিমত নেই। তবে আমার ধারণা, ওনারা মিস ইনফরমড (ভুল তথ্য পাওয়া)। ওনাদের তথ্যের ভিত্তি সঠিক নয়।    
যা বলছে থানা-পুলিশ : মামলার এজাহারের তথ্য অনুযায়ী, সক্রিয় ভাবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন সোহান শাহ। তার গ্রামের বাড়ি মাগুরা জেলায়। তিনি ভারগো গার্মেন্টস কারখানায় মেকানিক্যাল বিভাগের প্রকৌশলী হিসেবে চাকুরি করতেন। গত ১৯ জুলাই রাজধানীর রামপুরা সিএনজি স্টেশনের সামনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন সোহান শাহ।
মামলায় তথ্য অনুযায়ী, সেদিন (১৯ জুলাই) সন্ধ্যা ছয়টার দিকে স্থানীয় আ’লীগ ছাত্রলীগসহ অন্যরা ছাত্র- নেতার আন্দোলনে নির্বিচার গুলি চালায়। তখন সোহান শাহ বেশ কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হন। পরে সোহান শাহকে স্থানীয় ফারাজী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তখন ওই হাসপাতালের মালিক ইমন ফারাজীর নির্দেশে (মামলার ১৯ নম্বর আসামি) তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়নি। পরে সোহান শাহকে জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। এরপর তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে গত ২৩ আগস্ট ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ভর্তি করা হয়। সেখানেই গত ২৪ আগস্ট তিনি মারা যান।  
মামলার তথ্য অনুযায়ী, গত ১৯ সেপ্টেম্বর সোহান শাহর মা সুফিয়া বেগম ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে একটি নালিশী মামলা করেন। আদালতের নির্দেশে সেই মামলা থানায় রেকর্ড করা হয়।
মাগুরা-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শিখরকে মামলায় হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ও বাস্তবায়নকারী হিসেবে উলে­¬খ করা হয়েছে। সাইফুজ্জামান শিখর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহকারী একান্ত সচিব ছিলেন। তার বাবা মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান সংসদ সদস্য ছিলেন।

্রিন্ট

আরও সংবদ