খুলনা | মঙ্গলবার | ২৮ জানুয়ারী ২০২৫ | ১৫ মাঘ ১৪৩১

রাষ্ট্র সংস্কারে ভিন্ন জাতিসত্তার অন্তর্ভূক্তিকরণ

|
১২:০৭ এ.এম | ১৬ নভেম্বর ২০২৪


রাষ্ট্র সংস্কারে বিশেষ করে সংবিধান সংস্করণে ভিন্ন জাতি সত্তার অন্তর্ভূক্তি ছাড়া সংস্কার সুদূর প্রসারি ফল বয়ে আনবে না। বাঙ্গালী জাতিয়তাবাদ ১৯৭২ সালে রচিত সংবিধানে সংযোজিত করা হয়েছিল। কিন্তু পার্বত্য জাতিগোষ্ঠি তাকে মনে প্রাণে মেনে নেয়নি। বাঙালী ছাড়া অন্য যে জাতিগুলো রয়েছে সংবিধান প্রণয়নে তাদের অংশগ্রহণ ও মতামত থাকলে পাহাড়ি বাঙালী এ বিভাজন এতটা মাথা চাড়া দেয়ার সুযোগ পেতো না। সত্যিকথা বলতে কি ৫৩ বছর বয়সী আমাদের বাংলাদেশে নানা ধর্মের নানা ভাষার, নানা জাতি ও সংস্কৃতির মানুষের বিকাশ আজ পর্যন্ত সুষম ভাবে সম্পন্ন হয় নি। পার্বত্য তিন জেলায় বা দেশের এক দশমাংশ ভূমিতে যারা শত শত বছর বসবাস করে আসছে তারা আদিবাসী না ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠি না উপজাতি না স¤প্রদায় তা রাষ্ট্র এখনো মীমাংশা করতে পারেনি। এখনো পাহাড়ি জনগোষ্ঠি তাদের পরিচয় নির্মাণের লড়াইয়ে ব্যস্ত রয়েছে। তাদের অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রাম তাদের তাড়া করে ফিরছে। এ পরিস্থিতির জন্য আমাদের সংবিধান দায় এড়াতে পারে না।
স¤প্রতি জুলাই অভ্যুত্থানে দেশের মানুষের সাথে আদিবাসী মানুষের মনেও পরিবর্তনের আশা জাগিয়েছে। কারণ বিগত ১৫ বছরের আওয়ামী শাসনে আদি জনগোষ্ঠী মানুষের জীবনের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। পঞ্চদশ সংশোধনীর মধ্যে ২০১১ সালে পাহাড়িদের বানানো হয় ক্ষুদ্রজাতি গোষ্ঠী। যদিও সরকারি নথিতে ব্যবহৃত হচ্ছে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠি শব্দটি। শব্দটি অসম্মানজনক মনে করে আদিবাসীরা একে প্রত্যাখ্যান করেছে।
১৯৯৭ সালে পার্বত্য সমস্যাকে রাজনৈতিক সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে সম্পাদিত চুক্তির ২৭ বছর পেরিয়ে গেছে। কিন্তু আদিবাসী মানুষের জীবন বদলের প্রতিশ্র“তি ব্যর্থ হয়ে গেছে। তার বাস্তব চিত্র কিছু দিন আগে পাহাড়ি-বাঙালী সংঘর্ষ ও মৃত্যুর ঘটনায় দেখা গেছে। অথচ বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও স¤প্রতি জুলাই অভ্যুত্থানে তাদের অংশগ্রহণ ও ত্যাগ সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল সরকার পতনের ঠিক দুই দিন আগে শহীদ মিনার থেকে শুরু হওয়া মিছিলে আদিবাসী শিক্ষার্থীর ব্যানারে লেখা স্বৈরাচার নিপাত যাক, সেনাশাসন থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম মুক্তি পাক। স্বৈরশাসন বিদায় নিলেও পাহাড় জনপদ এখনো নিরাপদ হয়নি। সা¤প্রদায়িক হামলার দীর্ঘ ইতিহাস পাহাড়িদের মনে যে বিভাজন সৃষ্টি করেছে তার তিরোধান সহজ হবে না।
২০১৬ সালে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর হাতেও সাঁওতাল হত্যা, সাতক্ষীরায় মুন্ডারা নিজভূমে পরবাসী, পটুয়াখালির রাখাইন ১৯৬০ সালে তাদের সংখ্যা ছিল ৬০ হাজার এখন সংখ্যা আড়াই হাজার। পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে ২০০ বছরের তাদের পুরানো বসতি উেেচ্ছদ করা হয়েছে। মৌলভীবাজার ও শ্রীমঙ্গলের খাসিয়ারা ক্রমাগত দেশ ছাড়া হচ্ছে।
দেশের সব সংকটে আদিবাসীদের অংশগ্রহণ থাকলেও রাষ্ট্র তাদের নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে অন্তর্ভূক্ত করতে ব্যর্থ হয়েছে। দেশের সংবিধান রচনার সময় পাহাড়ি গণ পরিষদ সদস্য আদিবাসিদের কথা তুলে ধরেছিলেন। কিন্তু লারমার এ আকুতি বাঙালী করে রাখার জোয়ারে হাহাকার থেকে যায়। আমরা মনে করি রাষ্ট্র সংস্কারে অন্তর্ভূক্তিমূলক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় আদিবাসী প্রতিনিধি রাখতে হবে। দেশের বহুত্ববাদ স্বীকার ও আদিবাসীদের প্রথাগত ভূমি অধিকার স্বীকৃতি দিয়ে টেকসই সংস্কার করতে হবে।

্রিন্ট

আরও সংবদ